[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

ময়মনসিংহে বাবা-মেয়ের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার, মায়ের অবস্থাও গুরুতর

প্রকাশঃ
অ+ অ-
ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে শ্বশুরবাড়িতে নিহত রতন মিয়ার মা জুবেদা খাতুনের আহাজারি। আজ বুধবার সকালে উপজেলার দক্ষিণ আমিরখাঁকুড়া গ্রামে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলায় গভীর রাতে শ্বশুরবাড়ি থেকে এক ব্যক্তি ও তাঁর সাত বছর বয়সী মেয়ের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ সময় নিহত ব্যক্তির স্ত্রীকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

গতকাল মঙ্গলবার রাত দুইটা থেকে সাড়ে তিনটার মধ্যে উপজেলার ভুবনকুড়া ইউনিয়নের দক্ষিণ আমিরখাঁকুড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থল থেকে একটি চিরকুটও উদ্ধার করেছে পুলিশ।

নিহতরা হলেন শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার বাঘবেড় খিশাকুড়ি এলাকার আমির হোসেনের ছেলে রতন মিয়া (৩০) ও তাঁর মেয়ে নূরিয়া খাতুন (৭)। রতন গাজীপুরে একটি পোশাক কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন।

এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গাজীপুরে কাজ করার সময় রতন মিয়ার সঙ্গে হালুয়াঘাট উপজেলার আমিরখাঁকুড়া এলাকার দুলাল মিয়ার মেয়ে জুলেখা খাতুনের (২৫) পরিচয় হয়। তাঁদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং ২০১৬ সালের ১১ জুলাই তাঁরা বিয়ে করেন। তাঁদের একটি কন্যাসন্তান জন্ম নেয়। দুই বছর আগে জুলেখা গৃহকর্মীর কাজে দুবাই যান। স্ত্রী বিদেশে যাওয়ার পর রতন মেয়েকে নানার বাড়িতে রেখে গাজীপুরে কাজ করতেন। দেড় মাস আগে জুলেখা দুই মাসের ছুটি নিয়ে দেশে আসেন। তিনি আবার দুবাই যেতে চাইলে রতন আপত্তি জানান। এ নিয়ে স্বামী–স্ত্রীর মধ্যে বিরোধ চলছিল।

গতকাল সন্ধ্যায় রতন গাজীপুর থেকে শ্বশুরবাড়িতে যান। পরে রাত তিনটার দিকে চিৎকার শুনে প্রতিবেশীরা ছুটে গিয়ে দেখেন, ঘরের মেঝেতে রতনের গলাকাটা দেহ, বিছানায় মেয়ের মরদেহ এবং জুলেখা গলায় কাটা ও হাতে জখম অবস্থায় পড়ে আছেন। রতন ও তাঁর মেয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান। স্থানীয় লোকজন জুলেখাকে গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান।

খবর পেয়ে হালুয়াঘাট থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ দুটি উদ্ধার করে। আজ বুধবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সিআইডির ক্রাইমসিন দল।

খবর পেয়ে রতনের বৃদ্ধ মা জুবেদা খাতুন ছুটে আসেন। আহাজারি করে তিনি বলেন, ‘আমার পুতে পরশু দিন আলাপ করছে, বউ আবার বিদেশ যাইবাগার চায়। আমি কইছি, বউয়েরে আর বিদেশ দিয়ো না, বাড়িত ঘর কইরা বউ লইয়া বাড়িত তুমি খাও। বউ যাওনের কাম নাই। বউ খালি বিদেশ যাইবাগার চায়, আমার পুতে দিবার চায় না, হের লাগি আমার পুতেরে মাইরালছে।’

ঘটনার পর নিহত রতনের শ্বশুর দুলাল মিয়া ও শাশুড়িকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। হালুয়াঘাট থানার ওসি হাফিজুল ইসলাম বলেন, হত্যার ঘটনাটি কীভাবে ঘটেছে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। নারীকে গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি রাখা হয়েছে। নিহত রতনের শ্বশুর–শাশুড়িকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। পুলিশ পুরো বিষয়টি জানার চেষ্টা করছে এবং প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

এদিকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে হত্যায় ব্যবহৃত রক্তমাখা দা ও একটি চিরকুট। এ ছাড়া একটি বিষের বোতলও পাওয়া গেছে। প্রাথমিকভাবে চিরকুটটি নিহত রতন মিয়ার লেখা বলে ধারণা করছে পুলিশ। চিঠিতে ‘আমাদের মৃত্যুর জন্য দায়ী’ লিখে পাঁচজনের নাম উল্লেখ আছে।

ময়মনসিংহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, স্বামী–স্ত্রীর মধ্যে কলহের জেরে স্ত্রী–সন্তানকে হত্যা করে নিজে বিষপানে আত্মহত্যার পরিকল্পনা করে থাকতে পারেন রতন মিয়া। কিন্তু রতনের গলার আঘাত দেখে মনে হচ্ছে, এখানে ভিন্ন কিছু ঘটেছে। নিজে গলা কাটলে এত গভীর হওয়ার কথা নয়। পুরো বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। 

একটি মন্তব্য করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন