[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

আবুল সরকারের মুক্তি ও হামলাকারীদের গ্রেপ্তার দাবি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের

প্রকাশঃ
অ+ অ-
বিবৃতি | প্রতীকী ছবি

ধর্ম অবমাননার অভিযোগে মানিকগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার পালাকার ও বয়াতি আবুল সরকারকে বিনা শর্তে মুক্তির দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। একই সঙ্গে তাঁর ভক্ত ও সমর্থকদের ওপর হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের দাবিও জানিয়েছে তারা।

মানিকগঞ্জে আবুল সরকারকে গ্রেপ্তার ও তাঁর অনুসারীদের ওপর হামলার পর সারা দেশে ক্ষোভ–বিক্ষোভের মধ্যে আজ মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে এ দাবিগুলো জানায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক।

বাউল আবুল সরকারের ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর ব্যাখ্যায় শিক্ষক নেটওয়ার্ক বলেছে, শত শত বছর ধরে গ্রামবাংলায় প্রচলিত কবিগান ও পালাগানের যে ঐতিহ্য, তারই এক অংশ হলো বিচারগান। এই ধারায় দুজন স্বভাবকবি বা শিল্পী দুটো দলে ভাগ হয়ে যুক্তিতর্ক করেন। কথা ও গান—দুইভাবে এক পক্ষ অন্য পক্ষকে তর্কে হারানোর চেষ্টা করে। সেদিন জীব ও পরম—এই দুই পক্ষে লড়াই করছিলেন আবুল সরকার, প্রতিপক্ষের নামও ছিল আবুল সরকার (যিনি ফরিদপুর থেকে এসেছিলেন)। আলোচ্য আবুল সরকার মহারাজ ছিলেন জীবের পক্ষে, আর পরমকে তাঁর ছদ্ম আক্রমণের লক্ষ্য করা হয়েছিল। সেদিন দুই কবির দার্শনিক তর্ক চলে চার ঘণ্টা। সেই চার ঘণ্টা থেকে কয়েক সেকেন্ডের ভিডিও কেটে অনলাইনে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে এবং আল্লাহর বিরুদ্ধে কটূক্তি হিসেবে প্রচার করা হয়েছে। এরপর মামলা করা হয় এবং দ্রুত গ্রেপ্তারও করা হয়।

মানিকগঞ্জের ঘিওরের এক ইমামের করা ধর্ম অবমাননার মামলায় আবুল সরকারকে গত বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তারের পর আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। এরপর গত রোববার তাঁর অনুসারীরা প্রতিবাদ কর্মসূচি করার সময় ‘মানিকগঞ্জ জেলার সর্বস্তরের আলেম–ওলামা ও তৌহিদী জনতা’ ব্যানারে একদল ব্যক্তি তাঁদের ওপর হামলা চালান।

বিবৃতিতে শিক্ষক নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে চারটি দাবি তুলে ধরা হয়। দাবিগুলো হলো আবুল সরকারকে বিনা শর্তে দ্রুত মুক্তি দেওয়া; যেখান থেকে ভিডিও ভাইরাল করা হয়েছে, তাদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা; আবুল সরকারের মুক্তির দাবিতে করা সমাবেশে হামলাকারীদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করা এবং অন্তর্বর্তী সরকারের দিক থেকে কট্টরবাদী ও দঙ্গলবাজদের অন্যায় ও অগণতান্ত্রিক দাবি মানার প্রবণতা বাদ দিয়ে সব নাগরিকের প্রতি সমান আচরণ করা।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার আমলের শেষ দিকে টাঙ্গাইলের বাউল রীতা দেওয়ানের বিরুদ্ধে একই রকমভাবে একাধিক মামলা করা হয় এবং তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। বাউল–ফকিরদের ওপর কট্টরপন্থীদের এই বিদ্বেষ ও হামলা নতুন নয়। কিন্তু বর্তমান অন্তর্বর্তী সময়ে অতি ডানপন্থীদের উত্থান যেমন বেড়েছে, তেমনি সরকারের দিক থেকে আশকারাও তারা পেয়েছে। আগে বাউলের মুক্তির দাবিতে সমাবেশ হলে অন্তত হামলা হতো না। এবারে হয়েছে।

সরকারের প্রশ্রয়ের কারণেই এমন ঘটনা ঘটছে দাবি করে বিবৃতিতে বলা হয়, ৫ আগস্টের পর শত শত মাজার ভাঙা হয়েছে, গানের আসর ভেঙে দেওয়া হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধের বহু ম্যুরাল ও ভাস্কর্য নষ্ট করা হয়েছে, রাস্তাঘাটে নারীদের অপমান–অপদস্ত করা হয়েছে, এমনকি ‘ইসলামবিরোধী’ বলে চিহ্নিত করে কবর থেকে লাশ তুলে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এই দঙ্গলপ্রবণতা সমাজের বিভিন্ন স্তরে দেখা যাচ্ছে। এর কিছুটা অভ্যুত্থান–পরবর্তী পরিস্থিতির কারণে হলেও বেশির ভাগই সরকারের নীরবতা বা প্রশ্রয়ের ফল।

বাউলদের ওপর হামলার ঘটনায় দেশের বড় রাজনৈতিক দলগুলোর নীরবতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে শিক্ষক নেটওয়ার্ক।

বিবৃতিদাতাদের মধ্যে রয়েছেন আনু মুহাম্মদ, গীতি আরা নাসরিন, কামরুল হাসান মামুন, ফাহমিদুল হক, আসিফ মোহাম্মদ শাহান, সামিনা লুৎফা, কাজী মারুফুল ইসলাম, কাজলী সেহরীন ইসলাম, মোশাহিদ সুলতানা, মার্জিয়া রহমান, রুশাদ ফরিদী, মাহবুবুল হক ভূঁইয়া প্রমুখ।

একটি মন্তব্য করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন