'দুর্বল ধারার' সুযোগে জামিন ৩ আসামির
মামলার আসামি আহসান উদ্দিন সরকার ওরফে জিকো, তার বোন আঁখি ও হাবিবা | ছবি: সংগৃহীত |
রাজশাহীর পবার বায়া এলাকায় হিমাগারে ডেকে নিয়ে পিন ফুটিয়ে নির্যাতনের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় থানার ওসি দুর্বল ধারা বসিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। দুর্বল ধারার কারণে আদালতে গিয়েই জামিন পেয়েছেন জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ আলী সরকারের তিন ছেলেমেয়ে। বিষয়টি নিয়ে বাদীপক্ষ হতাশা প্রকাশ করেছে। পুলিশ বলেছে, পিন তীক্ষ্ণ নাকি ভোঁতা অস্ত্র, এ বিষয়ে আলাদা কোনো ধারা নেই।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে মোহাম্মদ আলী সরকারের মালিকানাধীন সরকার কোল্ডস্টোরেজে ডেকে নিয়ে এক তরুণ (২৭), এক নারী (৩০) ও এক কিশোরী (১৩)কে নির্যাতন করা হয়। ওই তরুণ একটি মেডিকেল কলেজের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী। নারী ও কিশোরী তাঁর খালাতো বোন। অভিযোগ, লাঠি, বাঁশ ও হাতুড়ি দিয়ে তাঁদের পেটানো হয়। পরে শরীরের বিভিন্ন স্থানে সেফটিপিন ফুটিয়ে নির্যাতন করা হয়।
ঘটনার পর স্থানীয়রা হিমাগার ঘিরে বিক্ষোভ করেন এবং ভাঙচুর চালান। পুলিশ তিনজনকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠায়। পরে সেনাবাহিনীর সহায়তায় পুলিশ হিমাগারে অবরুদ্ধ মোহাম্মদ আলী সরকারের ছেলে আহসান উদ্দিন সরকার ওরফে জিকো (৪৫), মেয়ে আঁখি (৩৫) ও হাবিবাকে (৪০) গ্রেপ্তার করে। নির্যাতিতদের এক আত্মীয় তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। আজ বুধবার তাঁদের আদালতে তোলা হলে আইনজীবী জামিনের আবেদন করেন, যা মঞ্জুর হয়।
রাজশাহী নগর পুলিশের আদালত পরিদর্শক আবদুর রফিক জানান, আসামিদের রাজশাহীর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট-৪ মো. মনিরুজ্জামানের আদালতে তোলা হয়েছিল। আদালত তাঁদের জামিন দিয়েছেন এবং তারা আদালত থেকেই চলে গেছেন।
মামলার এফআইআরে ধারা ও অপরাধের বিবরণে লেখা আছে—‘ধারা-৩৪২/৩২৩/৩২৫ পেনাল কোড ১৮৬০, অবৈধ আটক করে ভোঁতা অস্ত্র দিয়ে মারপিট করে সাধারণ ও গুরুতর জখম করার অপরাধ।’ তবে এজাহারে বলা হয়েছে, সেফটিপিন দিয়ে ফুটিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। আইনজীবীদের মতে, এটি অন্য ধারায় পড়ে।
বাদী অভিযোগ করেছেন, এয়ারপোর্ট থানার ওসি ফারুক হোসেন ইচ্ছা করে এফআইআরে দুর্বল ধারা বসিয়েছেন। তিনি দাবি করেছেন, পুলিশ মামলা না করে সমঝোতা করার প্রস্তাব দিয়েছিল, যা তিনি নেননি। এখনো আপসের চাপ দেওয়া হচ্ছে।
বাদী বলেন, ‘তিন আসামি যখন হিমাগারে ছিলেন, ওসি সেখানে গেলেও তাঁদের থানায় নেওয়ার চেষ্টা করেননি। আমি থানায় অভিযোগ দিতে গেলে একজন কনস্টেবল প্রথমে ওসির সঙ্গে কথা বলেন, তারপর অভিযোগ লেখা হয় এবং থানায় নেওয়া হয়।’
বাদী আরও বলেন, ‘প্রাথমিক অভিযোগের খসড়া এজাহার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। ওসি ঠিকমতো মামলা রেকর্ড না করে দুর্বল ধারা বসিয়েছেন, ফলে আসামিরা জামিন পেয়েছেন।’
মোহাম্মদ আলী সরকার রাজশাহীর ধনাঢ্য ব্যবসায়ী। তিনি রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি ছিলেন এবং জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন। তাঁর ছেলে আহসান উদ্দিন সরকার ব্যবসায়ী, দুই মেয়ে দেশের বাইরে থাকেন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন