[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

সোনামসজিদ বন্দরে আমদানি হচ্ছে খাদ্যের অনুপযোগী ভারতীয় গুড়

প্রকাশঃ
অ+ অ-
চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দর | ফাইল ছবি

নিম্নমানের গুড় আমদানি ঠেকাতে বিএসটিআই তিন মাস আগে গুড়ের মানদণ্ড নির্ধারণ করে। এ কারণে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দরে আমদানিকারকদের বিপুল পরিমাণ নিম্নমানের গুড় আটকে যায়। তবে ব্যবসায়ীদের আবেদন ও মানদণ্ড স্থগিত রাখার কারণে গত এক মাসে ১৫১ মেট্রিক টন ‘খাবারের অনুপযোগী’ গুড় দেশে ঢুকেছে।

ভারত থেকে ‘সুগার মলাসেস’ নামে এই গুড় আমদানি করা হয়েছে। এতে সালফার ডাই-অক্সাইডের মাত্রা অনেক বেশি। রং ও অন্যান্য রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করে এগুলো আখ ও খেজুরের গুড়ের মতো বানানো হয় এবং পরে রাজশাহী-নাটোরের বিভিন্ন এলাকায় মানুষের খাবারের গুড় হিসেবে বিক্রি করা হয়।

এর আগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান চালিয়ে এসব গুড়ের কারখানা ভেঙে দিয়েছে, মালিকদের জরিমানা করেছে এবং গুড় ধ্বংস করেছে। তারপরও এই ব্যবসা থেমে নেই। ভারত থেকে নিম্নমানের গুড় আমদানিও বন্ধ হয়নি। তবে ১৫ জুলাই বিএসটিআই গুড়ের মানদণ্ড ঘোষণার পর দুই মাস আমদানি বন্ধ ছিল।

বিএসটিআই সূত্রে জানা গেছে, ঘোষিত মানদণ্ডে সালফার ডাই-অক্সাইডের সর্বোচ্চ মাত্রা রাখা হয়েছে ৭০ পিপিএম, যা আন্তর্জাতিক মানের সমান। এছাড়া নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের মতামতের ভিত্তিতে তিনটি মাইক্রো-বায়োলজিক্যাল প্যারামিটারও সংযোজন করা হয়েছে। এই প্যারামিটার থাকলে গুড় অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত হবে। কিন্তু ভারত থেকে আমদানি করা গুড়ে সালফার ডাই-অক্সাইডের মাত্রা অনেক বেশি এবং উল্লেখিত প্যারামিটারগুলোরও উপস্থিতি রয়েছে।

ভারত থেকে আমদানি করা নিম্নমাণের গুড় পরিবহন করা হচ্ছে। শনিবার সকালে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার দিঘা বাজারের সামনে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন   

সোনামসজিদ স্থলবন্দর সূত্রে জানা গেছে, বিএসটিআইয়ের নির্ধারিত গুড়ের মানদণ্ড ঘোষণার পর থেকে ভারত থেকে গুড় আমদানি করতে হলে ব্যবসায়ীদের পরীক্ষা ও ছাড়পত্র নিতে হয়। তবে মানদণ্ড ঘোষণার পর ব্যবসায়ীরা ছাড়পত্র পাননি। এরপর ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ আমদানি ও রপ্তানিকারক গ্রুপ’ বিএসটিআইকে আবেদন করে মাইক্রো বায়োলজিক্যাল প্যারামিটারগুলো মওকুফ করার অনুরোধ করেছে এবং সালফার ডাই–অক্সাইডের মাত্রা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে।

ব্যবসায়ীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৭ সেপ্টেম্বর বিএসটিআই দুই মাসের জন্য গুড়ের মানদণ্ড স্থগিত রাখে। এ সুযোগে ২১ সেপ্টেম্বর একটি ট্রাকে ৩১ মেট্রিক টন এবং ২২ সেপ্টেম্বর তিনটি ট্রাকে ১২০ মেট্রিক টন মানুষের খাবারের অনুপযোগী গুড় সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে দেশে আসে।

গত শনিবার রাজশাহীর বাঘা উপজেলার বিভিন্ন কারখানায় আমদানি করা ওই গুড় দিয়ে নতুন গুড় তৈরি করতে দেখা গেছে। আগে এই গুড় ভ্যানে বা ট্রাকে বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা হতো। শনিবার সকালে দিঘা বাজারের সামনে কয়েকটি ভ্যানের মধ্যে গুড় রাখা ছিল, যা কাপড় দিয়ে ঢাকা ছিল। কাপড় সরিয়ে দেখা গেছে সব টিনজাত ভারতীয় গুড়। উপজেলার খর্দ্দ বাউসা গ্রামের একটি বড় কারখানায় গুড় গলিয়ে নতুন গুড় বানানো হচ্ছিল। আড়ানি বাজারের একটি ভাঙারির দোকানে খালি টিন পাত্র ভাঙতে দেখা যায়, যা স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ভাঙারির দোকানে বিক্রি করেন।

গুড়ের মানদণ্ড স্থগিত রাখার বিষয়ে ১১ সেপ্টেম্বর ‘সুগার অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ প্রোডাক্টস টেকনিক্যাল কমিটি’ একটি সভা করে। সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. আনিছুর রহমান মজুমদার। তিনি বলেন, কোনো খাদ্যে সালফার ডাই–অক্সাইডের মাত্রা ৭০ পিপিএমের বেশি হলে এবং মাইক্রো বায়োলজিক্যাল প্যারামিটার থাকলে তা স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। প্যারামিটারগুলো নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের প্রবিধানমালায় থাকলেও বিএসটিআইয়ের জন্য বাধ্যতামূলক নয়। তাই ব্যবসায়ীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দুই মাসের জন্য মানদণ্ড স্থগিত রাখা হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে ব্যবসায়ীরা নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধান করতে পারবেন। পরবর্তী ব্যবস্থা কমিটি নেবে।

সভায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মো. আবদুল ওয়াহেদ বলেন, 'মানুষের ক্ষতি করে ব্যবসা চলুক, তা তিনি চান না। তবে প্রান্তিক কৃষক ও আমদানিকারকদের সুবিধা বিবেচনা করে মাইক্রো বায়োলজিক্যাল প্যারামিটার পরীক্ষা দুই মাসের জন্য স্থগিত করার সুপারিশ করেছেন।' 

বিএসটিআইয়ের ঢাকার উপপরিচালক (কৃষি ও খাদ্য) এনামুল হক বলেন, 'গুড়ের গুণগত মানোন্নয়নের জন্য বিডিএস হালনাগাদ করা হয়েছে। বিদেশ থেকে আমদানিকৃত গুড় ১০০ শতাংশ মান নিশ্চিত করতে হবে। এতে কেউ নিম্নমানের গুড় বাজারে বিক্রি করতে পারবে না। তবে বন্দরে ব্যবসায়ীরা ছাড় পাচ্ছেন না। আবেদন করলে দুই মাস সময় দেওয়া হয়েছে এবং নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সুপারিশ নিয়ে কমিটি কাজ করবে। গুণগত মানে আপস করা হবে না।' 

একটি মন্তব্য করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন