পক্ষে–বিপক্ষে কর্মসূচি, ঢাকা কলেজে শিক্ষককে হেনস্তা, কাল কর্মবিরতি
ঢাকার সাতটি বড় সরকারি কলেজ একীভূত করে প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি গঠন নিয়ে জটিলতা আরও বেড়েছে। এ নিয়ে চলমান আন্দোলন এখন সহিংসতার দিকে যাচ্ছে। আজ সোমবার ঢাকা কলেজ ক্যাম্পাসে উচ্চমাধ্যমিক স্তরের এক ছাত্রকে মারধর ও একজন শিক্ষককে হেনস্তা করার অভিযোগ উঠেছে। এর প্রতিবাদে আগামীকাল মঙ্গলবার সারাদেশে সরকারি কলেজ, সরকারি মাদ্রাসা ও অন্যান্য শিক্ষা অফিসে দিনব্যাপী কর্মবিরতি ও কালো ব্যাজ ধারণ করে অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের সংগঠন বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশন।
অন্যদিকে প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির চূড়ান্ত অধ্যাদেশ জারির দাবিতে আজ রাজধানীর শিক্ষা ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছেন ওই সাত কলেজের কয়েক শ শিক্ষার্থী। এ সময় পুলিশ সতর্ক অবস্থান নেয় এবং সচিবালয় অভিমুখে ব্যারিকেড দিয়ে রাস্তা বন্ধ করে দেয়। এতে ওই পথে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, খসড়া অধ্যাদেশ নিয়ে ছয় হাজারের বেশি মতামত পাওয়া গেছে। সেগুলো সংকলন ও বিশ্লেষণের কাজ চলছে। এরপর শিক্ষক, শিক্ষার্থী, শিক্ষাবিদ ও শিক্ষা-সংশ্লিষ্ট সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে ধারাবাহিক পরামর্শ সভা করা হবে।
২০১৭ সালে যথেষ্ট প্রস্তুতি ছাড়াই ঢাকার সাতটি বড় সরকারি কলেজকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়েছিল। তখন থেকেই সংকটের শুরু। কলেজগুলো হলো—ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, বাঙলা কলেজ ও তিতুমীর কলেজ। চলতি বছরের জানুয়ারিতে কর্তৃপক্ষ এসব কলেজকে আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আলাদা করার ঘোষণা দেয়। তবে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের আগেই অধিভুক্তি বাতিল করায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে।
এখন এসব কলেজ একীভূত করে সরকার নতুন একটি বিশ্ববিদ্যালয় গঠন করতে যাচ্ছে—‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’। সাতটি কলেজ হবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠকেন্দ্র (একাডেমিক ক্যাম্পাস)। প্রতিটি ক্যাম্পাসে আলাদা বিষয়ে পড়ানো হবে এবং বিষয়সংখ্যা কিছুটা কমবে। এই কাঠামো নিয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভিন্নমত তৈরি হয়েছে। কেউ সমর্থন দিচ্ছেন, কেউ বিরোধিতা করছেন।
কলেজগুলোর উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ কলেজের স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখার দাবিতে আন্দোলন করছেন। ইডেন কলেজ ও বেগম বদরুন্নেসা কলেজের অনেক ছাত্রী প্রস্তাবিত কাঠামোয় বিশ্ববিদ্যালয় চান না। তাঁরা খসড়া অধ্যাদেশ প্রত্যাখ্যান করেছেন।
অন্যদিকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের অনেকেই দ্রুত অধ্যাদেশ জারির দাবিতে আন্দোলন করছেন। পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী তাঁরা আজ বেলা ১১টার দিকে শিক্ষা ভবনের সামনে ‘মার্চ ফর অর্ডিন্যান্স’ কর্মসূচি পালন করেন। কয়েক শ শিক্ষার্থী সেখানে জড়ো হয়ে প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে স্লোগান দেন।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের এক ছাত্র বলেন, প্রায় এক বছর ধরে তাঁরা নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে আন্দোলন করছেন। খসড়া অধ্যাদেশ প্রকাশের পর মতামত নেওয়া হয়েছে। এখন দ্রুত অধ্যাদেশ জারি না হলে তাঁরা অনিশ্চয়তায় পড়বেন, কারণ তাঁরা না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে, না নতুন কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে—এতে পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে।
অন্যদিকে প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘিরে ঢাকা কলেজের উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার্থীরা নিজেদের অস্তিত্ব সংকটের আশঙ্কায় আজ মিছিল করেন। কলেজ ক্যাম্পাস থেকে মিছিল শুরু হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়।
এ সময় এক পর্যায়ে ইতিহাস বিভাগের এক সহযোগী অধ্যাপককে হেনস্তা, এক ছাত্রকে মারধর এবং কলেজের শিক্ষক লাউঞ্জ ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে।
এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ শিক্ষকরা ঢাকা কলেজ মিলনায়তনে প্রতিবাদ সভা করেন। সভায় বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশনের নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। সেখানে শিক্ষকরা সর্বাত্মক কর্মবিরতির ঘোষণা দেন।
পরে সংগঠনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মঙ্গলবার সারাদেশে কর্মবিরতি ও কালো ব্যাজ ধারণ করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের সব কর্মকর্তাকে এতে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সংগঠনের আহ্বায়ক খান মইনুদ্দিন আল মাহমুদ ও সদস্যসচিব মো. মাসুদ রানা খান।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন