[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

রংপুরে অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত আরও তিনজনের, স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে গ্রামে গ্রামে

প্রকাশঃ
অ+ অ-
 রংপুরের পীরগাছায় অ্যানথ্রাক্স উপসর্গ সন্দেহে একজনের শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করছেন আইইডিসিআরের প্রতিনিধিদল | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন 
 
রংপুরের কাউনিয়া ও মিঠাপুকুর উপজেলায় আরও তিনজনের অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে দুজন কাউনিয়ার এবং একজন মিঠাপুকুরের বাসিন্দা। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। এতে জেলায় অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ জনে। তবে আক্রান্ত এলাকাগুলোতে এখনও সচেতনতা বাড়াতে কার্যক্রম চোখে পড়ছে না।
 
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুলাই ও সেপ্টেম্বর মাসে পীরগাছায় অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে অর্ধশতাধিক মানুষের শরীরে অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ দেখা যায়। প্রাণিসম্পদ বিভাগের পরীক্ষায় অসুস্থ গরুর মাংস থেকে অ্যানথ্রাক্স পাওয়া যায়। এরপর ১৩ ও ১৪ সেপ্টেম্বর আইইডিসিআরের একটি দল পীরগাছা সদর ও পারুল ইউনিয়নে অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ থাকা ১২ জনের নমুনা সংগ্রহ করে। পরীক্ষা শেষে দেখা যায়, এদের মধ্যে আটজনের শরীরে অ্যানথ্রাক্স রয়েছে।

কাউনিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সুজন সাহা বলেন, '২৩ সেপ্টেম্বর কাউনিয়ায় অ্যানথ্রাক্স উপসর্গ থাকা ছয়জনের নমুনা আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছিল। এর মধ্যে দুজনের শরীরে অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হয়েছে। সুজন সাহা জানান, আক্রান্তদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। হাসপাতালের কর্মীরা রোগীর বাসায় গিয়ে চিকিৎসা দেবেন।'

মিঠাপুকুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, ১৫–২০ দিন আগে ইমাদপুর ইউনিয়নের আমাইপুর গ্রামে একটি গরু অসুস্থ হলে জবাই করা হয়। পরে ওই মাংস কাটাকাটিতে গ্রামের রফিকুল ইসলাম, সোহরাব আলী ও আরও কয়েকজনের শরীরে ঘা দেখা দেয় এবং অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ দেখা দেয়। এরপর তারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসেন। নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরে পাঠানো হলে পাঁচজনের মধ্যে একজন পুরুষের শরীরে অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হয়।

মিঠাপুকুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তা (রোগনিয়ন্ত্রণ) এম এ হালিম লাবলু বলেন, 'আক্রান্তরা অসুস্থ গবাদিপশুর শ্লেষ্মা, লালা, রক্ত, মাংস, হাড় বা নাড়িভুঁড়ির সংস্পর্শে এসে সংক্রমিত হয়েছেন। মানুষ থেকে মানুষে অ্যানথ্রাক্স ছড়ায় না। তাই মানুষকে সতর্ক থাকতে হবে। অসুস্থ গরু জবাই করা বা মাংস খাওয়া যাবে না।'

রফিকুল ইসলাম ও সোহরাব আলী বলেন, গরুর মালিক বলেছিলেন দড়ি দিয়ে গরুর ফাঁস লেগেছিল। এ কারণে প্রতিবেশীরা মাংস কাটাকাটিতে যুক্ত হন। পার্শ্ববর্তী রহমতপুর বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ীও জানিয়েছেন, অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধে স্থানীয় প্রশাসনের কোনো সচেতনতামূলক কার্যক্রম তারা দেখেননি।

এছাড়া মিঠাপুকুরের দুর্গাপুর ইউনিয়নের জীবনপুর গ্রামের এক নারীর অ্যানথ্রাক্স উপসর্গ পাওয়া গেছে। তিনি অসুস্থ গরুর সংস্পর্শে আসেননি, তবে বাড়িতে গরু-ছাগল আছে। তাঁর নমুনা আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছে।

চিকিৎসকেরা বলছেন, মাটি বা ঘাসে অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু বছরের পর বছর ধরে থাকতে পারে। গবাদিপশু সেই ঘাস খেলে মানুষ আক্রান্ত হতে পারে। তাই অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধী টিকা কার্যক্রম জোরদার করা প্রয়োজন। 

ইমাদপুর এলাকায় ১০–১২ দিন আগে গবাদিপশুদের ভ্যাকসিন দেওয়া হলেও, পার্শ্ববর্তী পচার হাটের মমিনুল ইসলাম ও মহেন্দ্র দাস জানান, তাদের এলাকায় টিকা দেওয়া হয়নি। তাই তারা আতঙ্কে আছেন। 

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আবু ছাইদ বলেন, গবাদিপশুতে অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হওয়ার পর থেকেই তারা আগস্ট থেকে টিকা কার্যক্রম শুরু করেছেন। তিনি অভিযোগ করেন, স্বাস্থ্য বিভাগ মানুষের নমুনা পরীক্ষা করতে দেরি করায় এখন আক্রান্ত রোগী পাওয়া যাচ্ছে। 

আবু ছাইদ আরও বলেন, পীরগাছা ছাড়াও কাউনিয়া, মিঠাপুকুর, রংপুর সদর ও পার্শ্ববর্তী গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ, কুড়িগ্রামের চিলমারী, উলিপুর ও রাজারহাটে টিকা কার্যক্রম চলছে এবং বিভিন্ন জবাইখানায় গরুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে।

এদিকে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে এটি অস্বীকার করে ডেপুটি সিভিল সার্জন রুহুল আমিন বলেন, 'আমরা খবর পেতেই সঙ্গে সঙ্গে আইইডিসিআরকে জানানো হয়েছিল। প্রতিটি উপজেলাকে সতর্ক করা হয়েছে এবং অ্যানথ্রাক্স চিকিৎসার গাইডলাইন দেয়া হয়েছে। প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক ও চিকিৎসাব্যবস্থা রয়েছে।' 

তিনি জনগণকে সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়ে বলেন, 'অসুস্থ প্রাণী জবাই করা যাবেনা, নিজেরাই খাওয়া বা লুকিয়ে বিক্রি করা যাবে না। অসুস্থ প্রাণী মারা গেলে তাকে মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে।' 

Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন