[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

হাওরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস নিয়ে টানাপোড়েন

প্রকাশঃ
অ+ অ-

দেখার হাওরের প্রস্তাবিত জায়গা, যেখানে সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠবে। বর্ষাকালে জমিটি প্রায় ছয় ফুট পানির নিচে ডুবে থাকে। ছবিতি সম্প্রতি তোলা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন 

হাওর ঘেরা সুনামগঞ্জে গড়ে উঠছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। তবে জায়গা ঠিক করা নিয়ে চলছে মতবিরোধ। স্থানীয়দের একদল বলছেন, দেখার হাওরের ভেতর বিশ্ববিদ্যালয় করলে প্রকৃতি নষ্ট হবে। আবার আরেক দল মনে করেন, এই হাওরেই বিশ্ববিদ্যালয় হলে এলাকার উন্নয়ন দ্রুত হবে।

তবে শিক্ষার্থীরা বলছেন, জায়গা নিয়ে দেরি না করে দ্রুত স্থায়ী ক্যাম্পাস করা দরকার।

সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সুবিপ্রবি) পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী তাকবিল এইচ এস চৌধুরী বলেন, 'আমরা দ্রুত স্থায়ী ক্যাম্পাস চাই। যেখানেই হোক, যদি কাজ তাড়াতাড়ি এগোয়।' 

গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুর রহমান নিসাত বলেন, 'দুই পক্ষের বিরোধের কারণে যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষতি না হয়। তবে পরিবেশের দিকটিও গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত।' 

সুনামগঞ্জ-সিলেট আঞ্চলিক সড়কের পাশে বিস্তৃত দেখার হাওর। সুনামগঞ্জ সদর, শান্তিগঞ্জ, ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলা মিলিয়ে ছড়িয়ে আছে এই হাওর। এর মধ্যে শান্তিগঞ্জ উপজেলার জয়কলস এলাকায় দেখার হাওরের প্রায় ১২৫ একর জলাভূমি ভরাট করে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের অনুমোদন দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২০২৩ সালের ১৩ জুন। প্রকল্পের প্রস্তাবিত ব্যয় ২৯৯ কোটি টাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইনে দেখার হাওর এলাকায় প্রতিষ্ঠানটি স্থাপনের কথা বলা হলেও হাওর ভরাট করে অবকাঠামো নির্মাণের বিষয়টি উল্লেখ নেই। 

জেলা শহর থেকে প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জায়গার দূরত্ব প্রায় ১৭ কিলোমিটার। অভিযোগ আছে, সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের বাড়ির কাছে হওয়ায় দেখার হাওরের ওই অংশ বেছে নেওয়া হয়েছে। তবে এ বিষয়ে এম এ মান্নান জানিয়েছেন, 'এর চেয়ে ভালো জায়গা থাকলে বিশ্ববিদ্যালয় সেখানে হোক।' 
 

হাওর এরিয়া আপলিফটমেন্ট সোসাইটির (হাউস) নির্বাহী পরিচালক সালেহীন চৌধুরী শুভ বলেন, 'এখানে বিশ্ববিদ্যালয় হলে দেখার হাওরের অপূরণীয় ক্ষতি হবে। জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হবে, ধান ও মাছের উৎপাদন কমবে। সম্প্রতি তালিকাভুক্ত নাইন্দা নদী একেবারে শুকিয়ে যাবে, মহাসিং নদীও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।' 

অন্যদিকে জয়কলস বাজারের স্থানীয় মুজিবুর রহমান ও পার্শ্ববর্তী গ্রামের রামচরণ দাস বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয় হলে শুধু শান্তিগঞ্জ নয়, পুরো সুনামগঞ্জের জন্যই আশীর্বাদ হবে। হাওর নয়, সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের ধারে হবে বিশ্ববিদ্যালয়। ক্ষতির কথা বলা হলেও তা অতটা হবে না।' 

সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস জেলা সদরে বাস্তবায়ন আন্দোলনের আহ্বায়ক আইনজীবী হুমায়ুন মঞ্জুর চৌধুরী বলেন, 'হাওরের ক্ষতি হোক, এটা আমরা চাই না। আমরা লক্ষ্মণশ্রী ইউনিয়নের জুগিরগাঁও, গৌরারং ইউনিয়নের রতনশ্রী এবং পৌর এলাকার হাসননগরকে বিকল্প স্থান হিসেবে প্রস্তাব করেছি।' 

অন্যদিকে শান্তিগঞ্জ ও আশপাশের মানুষ নির্ধারিত জায়গাতেই ক্যাম্পাস চায়। তাঁদের দাবি, পুরো জেলাই হাওরবেষ্টিত; তাই হাওরের বাইরে এত বড় জায়গা পাওয়া সম্ভব নয়।

শান্তিগঞ্জ উপজেলা হাওর বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক মো. আবু সঈদ বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ের জায়গা হাওরের দক্ষিণ প্রান্তে, মাঝখানে নয়। এর বেশির ভাগই খাসজমি, যেখানে ইরি ধানের চাষ হয়। এখানে গভীর জল থাকে না। তাই পরিবেশ নষ্ট হবে বলা অতিরঞ্জিত।' 

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান বলেন, 'হাওর ভরাট করে বিশ্ববিদ্যালয় করার পক্ষে আমরা নই। জলাভূমি বা বনভূমি অধিগ্রহণ করে প্রতিষ্ঠান গড়তে নেই-এ বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।' 

সিলেট পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মো. ফেরদৌস আনোয়ার বলেন, 'হাওর বা জলাশয় ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ আমরা সমর্থন করি না। তবে অপরিহার্য জাতীয় স্বার্থে অনুমতি নিয়ে তা করা যেতে পারে।' 

সুবিপ্রবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নিজাম উদ্দিন বলেন, 'ভূমি নির্ধারণের কাজ আগের সরকার ও প্রশাসন করেছে। সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজও শেষ হয়েছে। আইনে দেখার হাওর পারের কথা আছে। এখন নিয়ম মেনে যা করার, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাই করছে।' 

একটি মন্তব্য করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন