বাজেট শূন্য, পরিকল্পনা তবু চলছে
![]() |
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ভোট দেওয়ার পর শিক্ষার্থীদের উল্লাস। রাজু ভাস্কর্যের সামনে, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন হয়েছে গত ৯ সেপ্টেম্বর। এক বছরের জন্য গঠিত এই সংসদ এখন এক মাস পেরোতে চলেছে, কিন্তু এখনও ডাকসুর জন্য আলাদা কোনো তহবিল তৈরি হয়নি। ফলে কলম-কাগজ কেনা থেকে শুরু করে অনুষ্ঠান আয়োজন সবই চলছে নেতাদের ব্যক্তিগত টাকা ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সহায়তায়। এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠছে, তহবিল শূন্য থাকা সত্ত্বেও ডাকসু এই এক মাসে কতটা কাজ করতে পেরেছে।
টাকা নেই ডাকসুর তহবিলে
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছেন, ডাকসু ও হল সংসদের জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রতি বছর নির্দিষ্ট ফি নেওয়া হয়। তবে ডাকসুর নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো আলাদা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই। তাই ডাকসুর জন্য নেওয়া টাকা মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটের অংশ হিসেবে ধরা হয়। নির্বাচন শেষ হওয়ার এক মাস পরও ডাকসুর জন্য আলাদা কোনো তহবিল তৈরি হয়নি।
ডাকসুর কার্যনির্বাহী সদস্য রায়হান উদ্দীন বলেন, 'ডাকসুর ফান্ডে কোনো টাকা নেই। এখন পর্যন্ত আমরা যে কাজগুলো করেছি, তা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি বা ব্যক্তিগত অর্থায়নের মাধ্যমে করা সম্ভব হয়েছে। এখন প্রত্যেক সম্পাদক তাদের কাজের পরিকল্পনা ও আনুমানিক বাজেট সহ-সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে জমা দিয়েছেন।'
ডাকসুর কোষাধ্যক্ষ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এইচ এম মোশারফ হোসেন এই পরিস্থিতিকে ‘খুবই বিব্রতকর’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, 'দায়িত্ব নেওয়ার পরও স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করা যাচ্ছে না। কলম-কাগজ কিনতেও আমাকে নিজের পকেট থেকে টাকা দিতে হচ্ছে।'
তিনি আরও জানান, 'গতকাল আবরার ফাহাদের স্মরণসভার জন্য কনফারেন্স হলের ভাড়া আমার বিভাগ থেকে ধার করে পরিশোধ করেছি। এখন নিয়মিত খরচের জন্য দ্রুত এক লাখ টাকা বরাদ্দের আবেদন করেছি। এখন পর্যন্ত ডাকসু যা কাজ করেছে, তা তাদের নিজস্ব চেষ্টায় এবং ব্যক্তিগতভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অর্থায়নের মাধ্যমে হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল থেকে কোনো টাকা নেওয়া হয়নি।'
দায়িত্ব নেওয়ার পর কার্যক্রম
১৪ সেপ্টেম্বর ডাকসুর নির্বাচিত প্রতিনিধিদের প্রথম কার্যনির্বাহী সভা অনুষ্ঠিত হয়। দায়িত্ব নেওয়ার পর ডাকসুর কাজগুলো নিয়ে সহ-সভাপতি ও একাধিক সম্পাদকের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের।
ডাকসু নেতারা জানিয়েছেন, পরিবহন ব্যবস্থায় কয়েকটি পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। পরীক্ষামূলকভাবে চালু হচ্ছে ‘আমাদের লাল বাস’ নামে একটি অ্যাপ, যা বাসের অবস্থান জানাবে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের আনা-নেওয়ার বাসের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। ক্যাম্পাসের ভেতরে নির্দিষ্ট রিকশা চলাচলেরও পরিকল্পনা আছে। এই রিকশাগুলোতে নির্দিষ্ট পোশাক থাকবে এবং বাইরের রিকশা ভেতরে প্রবেশ করবে না।
পরিবহন সম্পাদক আসিফ আব্দুল্লাহ জানান, 'বর্তমানে ১২টি শিক্ষার্থী আনা-নেওয়ার বাস চলছে। আরও ২০টি শাটল গাড়ি চালুর জন্য বিভিন্ন অর্থায়নকারীর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে, তারা রাজি হয়েছেন। শীঘ্রই এই ব্যবস্থা চালু হবে।'
স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক এম এম আল মিনহাজ জানান, 'তুরস্কের এনজিও ‘টিকা’ বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্র আধুনিক করার কাজ করছে। এখানে একটি নমুনা ঔষধের দোকান এবং রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষা করার ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়া ইবনে সিনা ট্রাস্টের সহায়তায় প্রতি মাসে একটি করে চিকিৎসা শিবির হবে।'
তিনি আরও বলেন, 'বাংলাদেশ গ্লোবাল হেলথ অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সহায়তায় পূজার ছুটির পর প্রত্যেক হলে ১০০ শিক্ষার্থীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ছাড়পোকা নিয়ন্ত্রণেও কাজ করা হবে। এছাড়া ইবনে সিনা হাসপাতালে ঢাবির শিক্ষার্থীদের জন্য ৫০ শতাংশ ছাড়ও এক সপ্তাহের মধ্যে কার্যকর হবে।'
দীর্ঘদিনের স্থবিরতার প্রভাব কার্যক্রমে
ডাকসু নেতারা জানিয়েছেন, প্রশাসনের সমন্বয়হীনতা এবং দীর্ঘদিন কার্যকর কাঠামো না থাকার কারণে শুরুতে কাজ জটিল হয়েছে।
ভিপি সাদিক কায়েম বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মধ্যে কোনো সমন্বয় নেই। আমরা শুরুতেই কাঠামো ঠিক করেছি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অংশের সঙ্গে আলোচনা করছি। প্রশাসনের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে এবং প্রতিটি জায়গায় নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় আনার চেষ্টা চলছে। ইশতেহারে প্রতিশ্রুতি ধাপে ধাপে বাস্তবায়িত হবে। ইতিমধ্যে আমরা বাজেটও জমা দিয়েছি।'
মৌলিক সমস্যার অগ্রগতি হয়নি এখনো
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে খাবারের মান নিয়ে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। বেশির ভাগ হলে রান্না হয় অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে। শিক্ষার্থীদের পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কোনো স্পষ্ট নির্দেশনা নেই। খাবারের মান বাড়াতে প্রশাসনের কোনো ভর্তুকিও নেই। হল সংসদ নির্বাচনের পরও খাবারের মান তেমন উন্নতি হয়নি। তবে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, কিছুদিনের মধ্যেই ফলাফল দেখা যাবে।
হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলের শিক্ষার্থী তামিম আল রাজী বলেন, 'হলের ক্যান্টিনের খাবারের মান আগের মতোই আছে, কোনো পরিবর্তন হয়নি।'
ডাকসুর সদস্য রায়হান উদ্দীন বলেন, 'সব হলে পুষ্টিবিদের সাহায্যে খাবারের মেন্যু তৈরি করা হবে। এতে খাবারের পুষ্টি বজায় থাকবে এবং দামও নাগালের মধ্যে থাকবে। ক্যান্টিন তদারকির জন্য একজন শিক্ষক দায়িত্ব পাবেন। বুয়েটের ক্যান্টিনের কর্মচারীদের মতো এটি ভর্তুকির মতো কাজ করবে। এতে খাবারের মান বাড়ার আশা রয়েছে।'
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন