[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

শোক, শ্রদ্ধা ও প্রীতির ছোঁয়ায় ভরা বিকেল

প্রকাশঃ
অ+ অ-
অধ্যাপক ফখরুল আলম দীর্ঘদিনের সহকর্মী সৈয়দ মনজুরুল ইসলামকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন 

স্বজন ও সুহৃদেরা তাঁকে ভুলতে পারছেন না। সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম তাঁদের মনে অম্লান হয়ে রয়েছেন। স্মরণে তাঁকে ধরে রেখেছেন প্রিয়জনরা। শনিবার বিকেলে বেঙ্গল ফাউন্ডেশনে তাঁর স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়।

নির্ধারিত সময় অনুযায়ী বিকেল চারটায় শুরু হয় এই বিষাদময় আয়োজন। কয়েক প্রজন্মের প্রিয় শিক্ষক, কথাশিল্পী, প্রাবন্ধিক, নন্দনতত্ত্ববিদ, অনুবাদক এবং সর্বশেষে আপাদমস্তক সজ্জন ইমেরিটাস অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম আকস্মিকভাবে চলে যান ১০ অক্টোবর। তিনি ৩ অক্টোবর হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হন। সেদিন তিনি সুস্থই ছিলেন এবং ইউল্যাবে ক্লাস নিতে যাচ্ছিলেন। পরের ঘটনা সবাই জানেন।

স্মরণসভায় সেই শোকের ছায়া স্পষ্টভাবেই দেখা যায়। ঢাকার কষ্টকর যানজট উপেক্ষা করে তাঁর অনুরাগীরা অনুষ্ঠান শুরুর অনেক আগে এসে পুরো কক্ষ ভরিয়ে দেন। আসন না পেয়ে অনেকেই দাঁড়িয়ে থাকেন। বাইরে অতিরিক্ত চেয়ার বসানো হয়। সেখানেও অল্প সময়ের মধ্যেই সব আসন পূর্ণ হয়। বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা অনেকে ডিজিটাল পর্দার মাধ্যমে ভেতরের কার্যক্রম দেখছিলেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের প্রতি শোক ও শ্রদ্ধা নিবেদন করে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন 

শুরুতেই বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের বহুমুখী প্রতিভা ও কাজের পরিচয় তুলে ধরেন। তিনি ছিলেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের সহসভাপতি এবং বেঙ্গল গ্যালারির প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই যুক্ত ছিলেন। শিল্পকলাবিষয়ক পত্রিকা যামিনী, জীবনধারা পত্রিকা চারবেলা চারদিক ও আইস টুডের সঙ্গে তাঁর সক্রিয় সম্পৃক্ততা ছিল। দেশের চারুকলার পরিচিতি বিদেশে পৌঁছে দেওয়ায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। এখন তিনি শুধু কাছের মানুষ নয়, স্মৃতির মানুষ হিসেবেও বেঁচে আছেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের প্রতি শোক ও শ্রদ্ধা নিবেদন করে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর তাঁর জীবন ও কর্ম নিয়ে একটি প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়।

আলোচনা পর্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘদিনের সহকর্মী অধ্যাপক ফখরুল আলম বলেন, তিনি মনজুরুল ইসলামের সঙ্গে ৫১ বছরের সম্পর্কের মধ্যে ছিলেন। তিনি ছিলেন বড় মাপের লেখক এবং বহুমুখী প্রতিভাবান। আড্ডা দিতে ভালোবাসতেন। এক সময় প্রায় প্রতিদিনই আড্ডা দিতেন। সংবেদনশীল ছিলেন, বহু মানুষকে সহায়তা করেছেন। তাঁর কাছে কেউই কিছু চেয়ে হতাশ হননি। অধ্যাপক ফখরুল আলম জানান, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার চাকরিটাও তাঁর সহায়তায় হয়েছে।’ মৃত্যুর দিন পনেরো আগে আড্ডায় মনে হয়েছিল তিনি একটু অসুস্থ, কিন্তু সেটা আড়ালে রেখেছিলেন।

আরেক সহকর্মী ও বন্ধু অধ্যাপক কায়সার হক বলেন, সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, ফখরুল ইসলাম ও তিনি একসঙ্গে বহু কাজ করেছেন। ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব ছিল তাঁদের। সেই বন্ধন ছিন্ন হয়ে গেছে। এখন তাঁর প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা স্মরণসভায় প্রকাশ পাচ্ছে। সাহিত্যে অবদানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মনজুরুল ইসলাম কবিতা দিয়ে লেখালেখি শুরু করেছিলেন, পরে গদ্যের দিকে চলে যান। বিশেষ করে ছোট গল্পগুলো অভিনব ছিল। তাঁর কাজ থেকে আমরা যা শিখতে পারি, তা অনুসরণ করব।’

শিল্পী অধ্যাপক ফরিদা জামান বলেন, দীর্ঘদিন একই আবাসিক ভবনে থাকার স্মৃতি এখনও মনে আছে। মনজুরুল ইসলাম শিল্পকলার উচ্চ স্তরের সমালোচক ছিলেন। বিদেশে দেশের চারুকলার পরিচিতি ছড়ানোর ক্ষেত্রে তাঁর বিশেষ অবদান রয়েছে। শিল্পকলাকে সহজভাবে ব্যাখ্যা করতে পারতেন। তিনি যেভাবে শিল্পীর আনন্দ ও বেদনা, বাস্তবতার সঙ্গে মিলিয়ে প্রকাশ করতেন, সাধারণ পাঠক ও দর্শকরাও তা সহজে বুঝতে পারতেন। বাংলাদেশে শিল্পকলার প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গেলে তাঁর অবদান উল্লেখ করা জরুরি। 

ইউল্যাবের উপাচার্য অধ্যাপক ইমরান রহমান বলেন, শিক্ষকতার বাইরে মনজুরুল ইসলামের বিশাল ভুবন ছিল। তিনি শুধু ইউল্যাবে শিক্ষকতা করেননি, বহু কার্যক্রমেও যুক্ত ছিলেন। অসাম্প্রদায়িক, উদার মানসিকতা ও মুক্তচিন্তার মানুষ ছিলেন তিনি। যে মূল্যবোধ তিনি ধারণ করেছিলেন, তা পরের প্রজন্মের জন্য অনুসরণীয় হয়ে থাকবে।

পরিবারের পক্ষে তাঁর ভাগনে ড. শামিম সবাইকে ধন্যবাদ জানান।

প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ বলেন, মনজুরুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলা ছিল আনন্দের অভিজ্ঞতা। ছাত্রদের কাছে তিনি বন্ধু হয়ে উঠেছিলেন। কাছের মানুষরা তাঁর থেকে উপকৃত হয়েছেন। এত আন্তরিক ছিলেন যে প্রত্যেকেই মনে করতেন, তাঁর সঙ্গে সম্পর্কই সবচেয়ে নিবিড়। সফল মানুষেরা কখনও কখনও নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েন, কিন্তু তিনি এমন মানুষ ছিলেন যে সবাইকে নিয়ে থাকতেন। তিনি সত্যিই সার্থকভাবে জীবন যাপন করেছেন।

লেখক ও সিটি ব্যাংক পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মাসরুর আরেফিন তাঁর প্রিয় শিক্ষক সৈয়দ মনজুরুল ইসলানের দীর্ঘ স্মৃতিচারণ করে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকে শেষ পর্যন্ত তিনি মনজুরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন। অসংখ্য মানুষের জন্য তিনি আলোকবর্তিকা ছিলেন। 

সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম স্মরণ

একটি মন্তব্য করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন