[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

রাজশাহীতে বিষাদের সুরে দেবী দুর্গাকে বিদায় দিলেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা

প্রকাশঃ
অ+ অ-

রাজশাহীতে প্রতিমা বিসর্জন। বৃহস্পতিবার নগরের পদ্মা নদীর মুন্নুজান ঘাট এলাকায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

দেবী দুর্গার বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হচ্ছে শারদীয় দুর্গোৎসব। রাজশাহীতেও বিভিন্ন পূজামণ্ডপে চলছে প্রতিমা বিসর্জন। বৃহস্পতিবার দুপুরে নগরের ফুদকিপাড়া এলাকায় মুন্নুজান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে পদ্মা নদীতে শুরু হয় প্রতিমা বিসর্জন। বিকেল গড়িয়ে গেলে প্রতিমার সংখ্যা বাড়তে থাকে।

বিজয়া দশমীর সকালে রাজশাহীর পূজামণ্ডপগুলোতে অঞ্জলি দেওয়া শুরু হয়। ভক্তরা দলে দলে এসে দেবীকে ফুল, অর্ঘ্য ও প্রার্থনা অর্পণ করেন। সকাল থেকেই দুর্গার বিদায়ের সুর শোনা যায়। বাজে ঢাক, শঙ্খ ও উলুধ্বনি। এরপর শুরু হয় সিঁদুর উৎসব। বিবাহিত নারীরা একে-অপরকে কপালে সিঁদুর পরান।

ভক্তরা বলেন, দেবী দুর্গা অশুভ শক্তি ধ্বংস করতে এ পৃথিবীতে এসেছিলেন। পাঁচ দিনের পূজা শেষে আজ তিনি ফিরে যাচ্ছেন। এটি তাদের জন্য দুঃখের দিন হলেও মা থেকে আশীর্বাদ নিয়েছেন।

নগরের ঘোড়ামারা এলাকায় ঘোড়ামারা জোড়া শিবমন্দিরে দুপুরে নারীরা সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠেন। একে-অপরের কপালে ও গালে সিঁদুর মেখে আনন্দ প্রকাশ করেন।

সিঁদুর উৎসবে অংশ নেওয়া ভারতীয় রায় বলেন, '৪০ বছর ধরে এই মন্দিরে সিঁদুর খেলি। আজ মূলত স্বামী ও পরিবারের মঙ্গল কামনা করেছি। দেবী মা চলে যাচ্ছেন, এক বছর পর আবার পাব। তাই আনন্দের সঙ্গে কিছুটা বিষাদও আছে।' 

ঘোড়ামারা এলাকার প্রতিশ্রুতি মন্দিরে অঞ্জলি দিতে আসা লক্ষ্মী রাণী বলেন, 'দুর্গাপূজা সবাইকে একত্রিত করে। আমরা পরিবার-পরিজন নিয়ে একত্রিত হয়েছি। এটাই পূজার অন্যতম আনন্দ।' 

আরেক ভক্ত তৃপ্তি রায় বলেন, 'মা দুর্গা অশুভ শক্তি বিনাশ করতে এসেছিলেন। আজ তিনি ফিরে যাচ্ছেন। আমরা তার কাছে আশীর্বাদ চেয়েছি।' 

স্বামীর মঙ্গল কামনা করে সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠেন কয়েকজন নারী। বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজশাহীর সাগরপাড়া বরেন্দ্র গোষ্ঠী পূজামণ্ডপে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

ঘোড়ামারা জোড়া শিবমন্দিরের পুরোহিত মিলন কুমার চক্রবর্তী বলেন, মা দুর্গা ষষ্ঠীর দিনে বোধনের মাধ্যমে মর্ত্যে আগমন করেন। তিনি এসেছিলেন হাতি চড়ে। সেই দিন থেকে মা পাঁচ দিন, অর্থাৎ বিজয়া দশমী পর্যন্ত পূজামণ্ডপে থাকেন। আজ তিনি দোলনায় বসে বিদায় নেবেন। এই সময় তিনি অশুভ শক্তি ধ্বংস করেন। পুরোহিত বলেন, এবারও মায়ের কাছে শান্তি চাওয়া হয়েছে এবং সবাই যেন মিলেমিশে থাকে, সেই প্রার্থনা করা হয়েছে।

এদিকে সিঁদুর খেলার পর দুপুর থেকে রাজশাহীতে প্রতিমা বিসর্জন শুরু হয়েছে। বেলা তিনটার দিকে নগরের ফুদকিপাড়া এলাকায় প্রতিমা ভ্যানে ও ট্রাকে আনা হচ্ছে এবং পদ্মার পাড়ে রাখা হচ্ছে। কয়েকটি মন্দিরের প্রতিমা একত্রিত হয়ে নৌকায় করে নদীতে বিসর্জন দেওয়া হচ্ছে। শেষবারের মতো বিদায় দিতে অনেকেই নৌকায় উঠছেন।

স্থানীয় অখিল সরকার বলেন, 'দুপুরের পর থেকে প্রতিমা আসা শুরু হয়েছে। এটি রাত ১২টা পর্যন্ত চলতে পারে।' 

ফুদকিপাড়া এলাকায় কয়েক স্তরে নিরাপত্তা দিচ্ছে পুলিশ। নিরাপত্তা এবং নির্বিঘ্ন বিসর্জনের জন্য বুধবার নগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে। অনুযায়ী, বিকেল পাঁচটা থেকে বিসর্জন শেষ না হওয়া পর্যন্ত নগরের কুমারপাড়া মোড় থেকে ২২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোড়, মধু ভ্যারাইটি স্টোর মোড়, আতিয়া স্টোর মোড়, মুন্নুজান স্কুল ও বড় মসজিদ থেকে বড়কুঠি কাস্টমসের গলি শুধু প্রতিমা বহনকারী যানবাহনের জন্য একমুখী হবে। অন্য সব যান চলাচল তখন সাময়িকভাবে বন্ধ থাকবে।

মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (মিডিয়া) মো. গাজিউর রহমান বলেন, 'দুর্গাপূজা চলাকালীন নিরাপত্তা ছিল। আজ বিশেষভাবে প্রতিমা বিসর্জনের জন্য নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা করা হয়েছে। অনেক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মাঠে রয়েছেন।' 

রাজশাহী জেলায় এবার সর্বমোট ৪৬২টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে নগরে ৮০টি মণ্ডপ রয়েছে।

একটি মন্তব্য করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন