[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

২২টি গুলিতে ঝাঁঝরা গাড়ি, নিহত বিএনপি কর্মী

প্রকাশঃ
অ+ অ-

বিএনপি কর্মী আব্দুল হাকিমের গাড়ি ঘিরে গুলি করছে সন্ত্রাসীরা । গতকাল বিকেলে চট্টগ্রামের হাটহাজারীর মদুনাঘাটে | ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত বিএনপি কর্মীর গাড়িতে ২২টি গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে। গাড়িটির সামনের দুটি চাকা গুলিতে ফুটো হয়ে গেছে। সামনের কাচ ও বডিতে চারটি, নিহত আবদুল হাকিমের বাম পাশের জানালার কাচে ১২টি এবং চালকের আসনের পাশের জানালায় ৬টি গুলির চিহ্ন রয়েছে।

আজ বুধবার দুপুরে মদুনাঘাট পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সামনে রাখা আবদুল হাকিমের গাড়িতে এসব গুলির চিহ্ন দেখা গেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে থানার এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, নিহত আবদুল হাকিমের গাড়ি থেকে প্রায় সাড়ে আট লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। তবে কেন তাঁকে হত্যা করা হয়েছে, তা এখনো নিশ্চিত নয়। রাজনীতির পাশাপাশি ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব থেকেও এ হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে বলে ধারণা পুলিশের।

ঘटनাস্থলের ২০০ মিটার দূরে মদুনাঘাট পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সামনে গিয়ে দেখা যায়, দল বেঁধে লোকজন গুলি করা গাড়িটি ঘিরে দেখছেন। গাড়িটির সামনে ও দুই পাশে ২২ গুলির চিহ্ন। সামনের দুটি চাকা গুলিতে ফুটো হয়ে গেছে।

এদিকে, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় চারজনকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। রাউজানের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে আজ দুপুরে তাঁদের আটক করা হয়। তবে এ ঘটনায় এখনো কোনো মামলা হয়নি।

সন্দেহভাজনদের আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হাটহাজারী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী মো. তারেক আজিজ। তবে আটক ব্যক্তিদের নাম–পরিচয় জানানো হয়নি। তিনি বলেন, সন্দেহভাজন হিসেবে তাঁদের আটক করা হয়েছে। যাচাই–বাছাই করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে।

গাড়ির সামনে ও পেছনের কাচে ২২টি গুলির চিহ্ন ছিল। বিকেলে চট্টগ্রামের হাটহাজারীর মদুনাঘাট পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের সামনে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন  

প্রকাশ্যে ব্যবসায়ী ও বিএনপি কর্মী আবদুল হাকিম হত্যার পর মদুনাঘাট এলাকায় লোকজনের চলাচল কমে গেছে। বাজারের দোকানপাট খুললেও ক্রেতা তুলনামূলকভাবে কম দেখা গেছে।

আজ দুপুরে মদুনাঘাট বাজারে গিয়ে দেখা যায়, ঘটনাস্থল মদুনাঘাট পানি শোধনাগার প্রকল্পের মূল ফটকের সামনের সড়কের পাশের প্রতিরক্ষা দেয়ালের কিছু অংশে গুলির চিহ্ন রয়েছে। বাজারে অন্যদিনের তুলনায় মানুষের উপস্থিতি অনেক কম। ব্যবসায়ীরা গতকালের ঘটনা নিয়ে বেশি কিছু বলতে চান না। তাঁদের মধ্যে আতঙ্ক কাজ করছে।

ঘटनাস্থলের ঠিক বিপরীতে স্টিলের আলমারির দোকানের মালিক দিদারুল আলম বলেন, সকাল থেকে কোনো ক্রেতা আসেনি। গতকাল বিকেলে যখন গুলির ঘটনা ঘটে, তখন তিনি পাশের রেস্টুরেন্টে নাশতা করছিলেন। গুলির শব্দ শুনে দৌড়ে দোকানের সামনে এসে দেখেন, তিনজন অস্ত্রধারী হেলমেট পরা যুবক একটি প্রাইভেট কার লক্ষ্য করে গুলি করছেন। কয়েক মিনিট ধরে ১৫ থেকে ২০ বার গুলি করা হয়। পরে হামলাকারীরা মোটরসাইকেলে করে চলে যান।

দিদারুল আলম বলেন, হামলাকারীরা এবং নিহত ব্যক্তি রাউজান থেকে মদুনাঘাট সেতু পার হয়ে এসেছিলেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

আল আমিন নামের পাশের রেস্টুরেন্টের কর্মচারী বলেন, রেস্টুরেন্টের দোতলা থেকে তিনি একের পর এক গুলির শব্দ শুনতে পান। সড়কে তাকিয়ে দেখেন, কয়েকজন যুবক একটি প্রাইভেট কার ঘিরে গুলি করছেন। তিনি বলেন, এই বাজারে আগে এমন ঘটনা কখনো দেখেননি।

এদিকে, গুলিতে নিহত আবদুল হাকিম বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন বলে জানিয়েছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। আজ সকালে গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে তিনি বলেন, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুষ্কৃতকারীদের অভ্যন্তরীণ বিরোধের ঘটনায় আবদুল হাকিম নামে একজন গুলিতে নিহত হয়েছেন। এই সহিংসতা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির একটি বড় উদাহরণ। এতে স্থানীয়দের মধ্যে ভয় ও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। বর্তমানে মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। চারদিকে অনিশ্চয়তা, অস্থিরতা ও হতাশা বিরাজ করছে, যা জনগণ এই সরকারের কাছ থেকে আশা করে না। তিনি বলেন, ঘটনাটি কিছু সমাজবিরোধী দুর্বৃত্তদের পরিকল্পিত সহিংসতা, এর সঙ্গে রাজনীতি বা বিএনপির কোনো সম্পর্ক নেই।

নিহত বিএনপির কর্মী আব্দুল হাকিম | ছবি: তাঁর ফেসবুক আইডি থেকে নেওয়া

তবে গতকাল মঙ্গলবার রাতে দলটির রাউজানের নেতা-কর্মীরা হাকিম হত্যার প্রতিবাদে চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সড়ক অবরোধ করেন। আজ দুপুরেও নোয়াপাড়া পথেরহাট ও রাউজান সদরের মুন্সির ঘাটায় বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠন প্রতিবাদ মিছিল বের করে। পৃথক দুই স্থানে মিছিল করে হত্যাকারীদের শাস্তি দাবি করা হয়। স্থানীয় নেতা–কর্মীরা নিশ্চিত করেছেন, হাকিম বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদ নবায়ন করেছিলেন। এছাড়া বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান (বহিষ্কৃত) গিয়াস উদ্দিন কাদেরও হাকিমকে নিজের সমর্থক হিসেবে স্বীকার করেছেন।

গতকাল সন্ধ্যায় হাটহাজারীর মদুনাঘাট পুলিশ তদন্তকেন্দ্র থেকে মাত্র ৬০০ ফুট দূরে একদল অস্ত্রধারী মোটরসাইকেলে এসে প্রকাশ্যে গুলি করে মুহাম্মদ আবদুল হাকিমকে হত্যা করে। এ সময় তাঁর সঙ্গে থাকা চালক মুহাম্মদ ইসমাইলও (৩৮) গুলিবিদ্ধ হন।

গুলিবিদ্ধ আবদুল হাকিম রাউজানের বাগোয়ান ইউনিয়নের পাঁচখাইন গ্রামের বাসিন্দা আলী মদনের ছেলে। তিনি ২০২৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাউজানের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর সঙ্গে রাজনীতিতে সক্রিয় হন। নানা অনুষ্ঠানে গিয়াস উদ্দিন কাদেরের সঙ্গে মঞ্চে থাকতেন। তিনি হারবাল ব্যবসার পাশাপাশি গরুর খামারি ছিলেন। এছাড়া গত এক বছর ধরে কর্ণফুলী নদী থেকে বালু উত্তোলন ব্যবসাও করতেন। রাজনীতিতে তাঁর কোনো দলীয় পদবি ছিল না।

আজ বিকেল পাঁচটায় তাঁর নিজ গ্রাম পাঁচখাইন দরগাহ প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে জানাজা সম্পন্ন হওয়ার কথা। এর আগে পুলিশ ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারকে হস্তান্তর করেছে। আবদুল হাকিম ১ ছেলে ও ২ কন্যা সন্তানের বাবা।

গুলিবিদ্ধ আবদুল হাকিমের ভাই মুহাম্মদ পারভেজ বলেন, তাঁর ভাইয়ের সঙ্গে ব্যক্তিগত কোনো শত্রুতা ছিল না। তিনি গিয়াস উদ্দিন কাদেরের সঙ্গে রাজনীতি করতেন। কী কারণে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে তা তদন্ত করে সন্ত্রাসীদের শাস্তির দাবি করেন।

মদুনাঘাট পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক কার্তিক চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, হাকিমকে কেন হত্যা করা হয়েছে, তা এখনো পুলিশ নিশ্চিত করতে পারেনি। তবে রাজনীতির পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্যের দ্বন্দ্ব থেকেও এ হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে। তিনি বলেন, ঘটনাটি মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে ঘটেছে। গুলির শব্দ শুনে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়, কিন্তু মানুষের ভিড়ে হামলাকারীরা মোটরসাইকেলে করে রাউজানের দিকে পালিয়ে যায়।

কয়েক মিনিটে এত গুলি কীভাবে করা সম্ভব ছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, খুনিরা পেশাদার এবং অস্ত্রচালনায় পারদর্শী। তাই তারা কম সময়ের মধ্যে এত গুলি করতে পেরেছে।

উল্লেখ্য, রাউজানে গত ৫ আগস্টের পর সহিংসতায় মোট ১৬টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ১২টি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ অন্তত শতাধিকবার হয়েছে। এসব ঘটনায় ৩৫০-এর বেশি মানুষ গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। মামলা হয়েছে অর্ধশতের বেশি। তবে আসামি গ্রেপ্তারের সংখ্যা খুবই কম বলে মামলার বাদীরা জানিয়েছেন।

একটি মন্তব্য করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন