[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

খালি হাতে ফিরছেন অনেকে, ভোর থেকেই লাইনে নিম্ন আয়ের মানুষ

প্রকাশঃ
অ+ অ-

ওএমএসের ট্রাক থেকে একজন প্রতি কেজি ৩০ টাকায় সর্বোচ্চ ৫ কেজি চাল এবং প্রতি কেজি ২৪ টাকায় একই পরিমাণ আটা কিনতে পারেন। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রাজশাহী নগরের চৌদ্দপাই এলাকায় তোলা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন 

বাজারে চাল–আটার দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। তাই সরকারি খোলাবাজার (ওএমএস) ট্রাকের সামনে ভিড় করছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। সকাল ৯টায় ট্রাক এলেও অনেকেই রাত ১২টা বা ভোররাত থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকেন। রাজশাহী নগরের চৌদ্দপাই এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, দীর্ঘ অপেক্ষার পরও অনেক মানুষ খালি হাতে ফিরছেন।

নগরের ৩০টি ওয়ার্ডের প্রতিটিতে সাপ্তাহিক ছুটি বাদে পাঁচ দিন করে ওএমএস ট্রাক বসানো হয়। প্রতিটি ট্রাকে এক টন চাল ও এক টন আটা বিক্রি করা হয়। একজন সর্বোচ্চ ৫ কেজি চাল (প্রতি কেজি ৩০ টাকা) এবং ৫ কেজি আটা (প্রতি কেজি ২৪ টাকা) কিনতে পারেন।

রাত তিনটার দিকে লাইনে এসে দাঁড়িয়েছিলেন নগরের বুধপাড়া এলাকার রোজেনা বেগম। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তিনি চাল–আটা কিনতে পারেন। তিনি বলেন, ‘একজনের আয়ে সংসার চলে না। চার–পাঁচজনের খাওয়ার চিন্তা থাকে। তাই রাতে এসেই লাইনে দাঁড়াই। না আসলে তো পাওয়া যায় না।’

মির্জাপুর এলাকার সোনাবান বেগম লাঠিতে ভর দিয়ে হেঁটে আসেন। তাঁর দুই ছেলে মারা গেছেন। তিনি বলেন, ‘গতকাল সকালের দিকে এসে পাইনি। আজ রাত দুইটা থেকে এসে বসে আছি।’

ফজরের আজানের পর হনুফার মোড়ের চায়না বেগম লাইনে দাঁড়ান। কথা বলতে গিয়ে চোখ ভিজে ওঠে তাঁর। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই, সবাই খাক। কেউ খাবে, কেউ খাবে না—এটা চাই না। আল্লাহর ভয়ে মানুষ যদি থাকে, তবে কারও হক মারে না। কিন্তু আমাদের হক মেরে দেওয়া হচ্ছে।’

ওএমএস ট্রাকের লাইনে বেশির ভাগ ছিলেন পরিবারের প্রবীণ বা বয়স্ক সদস্য। অনেকের হাতে টুল, পিঁড়ি বা ইট-পাথরসহ ব্যাগ দেখা গেছে—এসবের ওপর বসে রাত কাটিয়ে ভোরের অপেক্ষা করেন তাঁরা। তবে প্রবীণ পুরুষের তুলনায় প্রবীণ নারীর সংখ্যা ছিল বেশি।

ভোর পাঁচটার দিকে লাইনে দাঁড়ান রাজশাহীর মো. ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ভোরে না আসলে চাল–আটা পাওয়া যায় না। না পাইলে চইলে যাব।’ সকালবেলা লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন ইমদাদুল হক নামের আরেকজন। তাঁর ভাষায়, ‘অনেকে রাতে এসেই এখানে ঘুমায়। কেউ আশা করে বসে থাকে, পাবে কি না জানে না। আমরা আছি লাইনে, যদি পাই তো ভালো, না পাইলে পরের দিন আগে আসব।’

চৌদ্দপাই এলাকার ডিলার শামীম হোসেন জানান, ‘আমরা শুনি অনেকেই রাত ১২টা–১টার দিকেই এসে বসে থাকেন। অনেকবার নিষেধ করেছি, তবু তাঁরা আসেন। এই ওয়ার্ড অনেক বড়, তাই প্রয়োজনের দ্বিগুণ মানুষ আসে। বাইরে বাজারদর বেশি। তাই বরাদ্দ বাড়ানো যায় কি না, আমরা বলেছি।’

এ সময় তদারকি করছিলেন উপখাদ্য পরিদর্শক মো. রিপন আলী। তিনি বলেন, ‘যাঁরা রাত থেকে লাইনে বসে থাকেন, তাঁদের সত্যিই চাহিদা আছে। বাজারদর তাঁদের নাগালের বাইরে, অনেকের কাজও নেই। তাই তাঁরা অর্ধেক দামে চাল–আটা নিতে চান। আমাদের নিয়ম হচ্ছে, আগে আসলে আগে দেওয়া। কিন্তু অনেকেই ১২-১৪ ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করেন। সবার জন্য দেওয়া সম্ভব হয় না। সর্বোচ্চ ২০০ জনকে দেওয়া যায়। আমরা চেষ্টা করছি, এই এলাকায় বরাদ্দ বাড়ানো যায় কি না।’

তবে দুপুরের আগেই ট্রাকের চাল–আটা শেষ হয়ে যায়। সকালে এসেও অনেককে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে। চৌদ্দপাই এলাকায় এক নারী মুখে কাপড় বেঁধে দাঁড়িয়ে অনুনয় করছিলেন, চাল–আটা পাওয়া যায় কি না। কিন্তু তখন আর কোনো পণ্য অবশিষ্ট ছিল না। 

Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন