রাজশাহী বোর্ডে জিপিএ-৫-এ মেয়েরা এগিয়ে, মানবিক ছেলেদের ফলাফল নেমেছে নিচে
![]() |
| রাজশাহী কলেজে এইচএসসি পাস করা শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাস। বৃহস্পতিবার কলেজের অধ্যক্ষের কার্যালয়ের সামনে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় গতবারের তুলনায় পাসের হার কমেছে ২১.৮৪ শতাংশ। সবচেয়ে ভরাডুবি হয়েছে মানবিক বিভাগের ছেলেদের মধ্যে। এবার বোর্ডে পাসের হার ৫৯.৪০ শতাংশ, যেখানে মানবিক বিভাগের ছেলেদের পাসের হার মাত্র ৪১.৫১ শতাংশ।
পাসের হার ও জিপিএ-৫ দুই ক্ষেত্রেই এগিয়ে আছেন মেয়েরা। বোর্ডে এবার ৬৩.৫৮ শতাংশ মেয়ে পাস করেছেন। এ বছর জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১০,১৩৭ জন শিক্ষার্থী, এর মধ্যে ছাত্রীর সংখ্যা ৫,৬৮২ জন।
শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক জানিয়েছেন, বিভিন্ন কারণে শিক্ষার্থীরা গত বছর বেশি বইবিমুখ ছিলেন। তাই শুধু রাজশাহীতে নয়, সারা দেশের ফলাফলেও এর প্রভাব পড়েছে। পাস এবং জিপিএ-৫ পাওয়ার হার কমে গেছে।
রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, এবার ১ লাখ ৩৪ হাজার ১৪৩ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়েছেন, যাদের মধ্যে ৭৭ হাজার ৭৪২ জন পাস করেছেন। গত বছর পরীক্ষার্থী ছিলেন ১ লাখ ৩৯ হাজার ১৯৩ জন, আর পাস করেছিলেন ১ লাখ ১১ হাজার ৪৪৮ জন।
এবার জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১০,১৩৭ জন শিক্ষার্থী, যেখানে গত বছর এই সংখ্যা ছিল ২৪,৯০২ জন। এক বিষয়ে অকৃতকার্য হওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাও বেড়েছে। এবার ৩২,৬৩৮ জন শিক্ষার্থী এক বিষয়ে ফেল করেছেন, যা গত বছরের তুলনায় ১,৩০৭ জন বেশি। এছাড়া এবার ১৭টি কলেজ থেকে কেউ পাস করতে পারেনি, যেখানে গত বছর এমন কলেজের সংখ্যা ছিল ১।
মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের ফলাফল কেন খারাপ হয়েছে জানতে চাইলে রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তানভীর হক বলেন, 'মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য আইসিটি বিষয়টা বোঝা কঠিন, কিন্তু বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের কাছে তত কঠিন নয়। ইংরেজিতে দুর্বলতাও আছে। এই দুই কারণে মানবিক বিভাগের ফলাফল খারাপ হতে পারে। একই কারণে ব্যবসায় শাখার পাসের হারও কম।'
ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের পাসের হার এবং জিপিএ-৫ বেশি হওয়ার কারণ হিসেবে রাজশাহী নিউ গভ. ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ কালাচাঁদ শীল মনে করেন, মেয়েরা ক্লাসে বেশি উপস্থিত থাকেন এবং পড়াশোনায় বেশি মনোযোগী। এই কারণে ছেলেরা পরীক্ষায় পিছিয়ে পড়েছেন।
রাজশাহী সরকারি মডেল কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ইফতেখার মাহমুদ জিপিএ-৫ পেয়েছেন। তাঁর কলেজের ৯৩ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী পাস করেছেন। তিনি মনে করেন, গ্রামের কলেজের শিক্ষার্থীদের কম পাসের হার বোর্ডের ছেলেদের পাসের হারের ওপর প্রভাব ফেলেছে। ফলে গড় পাসের হার কমে গেছে।
গ্রামের কলেজে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, পুঠিয়া উপজেলার পঁচামাড়িয়া ডিগ্রি কলেজের পাসের হার এবার ২৫.১৫ শতাংশ। কলেজের অধ্যক্ষ বিষ্ণুপদ সাহা বলেন, “আমার জীবদ্দশায় এমন ফলাফল দেখিনি।”
চারঘাটের ডাকরা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো. আবদুর রউফ বলেন, গ্রামের শিক্ষার্থীরা যারা এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে পাস করেন, তাঁদের প্রায় সবাই শহরের কলেজে চলে যান। দরিদ্র এবং জিপিএ-৫ না পাওয়া শিক্ষার্থীরাই বেশি করে গ্রামের কলেজে ভর্তি থাকেন। এই শিক্ষার্থীদের নিয়ে এইচএসসিতে ভালো ফল করা চ্যালেঞ্জিং। তারপরও তাঁদের কলেজ থেকে ৫৮.০৪ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছেন। এর মধ্যে একজন বিজ্ঞান বিভাগ এবং একজন মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছেন।
রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক আরিফুল ইসলাম বলেন, 'মেয়েরা ছেলেদের তুলনায় বেশি সময় পড়াশোনায় ব্যয় করেন, আর ছেলেরা বেশি সময় বাইরে কাটান। তাই মেয়েরা পরীক্ষায় ভালো করেছেন। আর যে ফলাফল বিপর্যয় দেখা দিয়েছে, সেটা সারা দেশেই হয়েছে। বিভিন্ন কারণে শিক্ষার্থীরা গত বছর বেশি বইবিমুখ ছিলেন। এজন্য শুধু রাজশাহীতে নয়, সারা দেশের ফলাফলেও এর প্রভাব পড়েছে। পাস এবং জিপিএ-৫ পাওয়ার হার কমেছে।'

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন