[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

৯৫ বছর ধরে টাঙ্গাইলে পদ্মমনি পুকুরে প্রতিমা বিসর্জন

প্রকাশঃ
অ+ অ-

জমিদার গোপেশ্বর রায়চৌধুরী ‘পদ্মমনি’ পুকুরটি টাঙ্গাইল পৌরসভাকে দান করেছিলেন | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন 

টাঙ্গাইল পৌরসভার 'পদ্মমনি' পুকুরে প্রতি বছর বিজয়া দশমীতে দুর্গা প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। পুকুরটি ৯৫ বছর আগে জমিদার গোপেশ্বর রায়চৌধুরী পৌরসভাকে দান করেছিলেন। তার শর্ত ছিল, এখানে বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জন করতে হবে এবং মেলা বসতে দিতে হবে। এখনো সেই শর্ত মেনে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ প্রতিমা বিসর্জন দিয়ে আসছেন।

পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, উনিশ শতকে শহরের আকুরটাকুরপাড়া এলাকায় পৌরসভা জলাধার হিসেবে এই পুকুর খনন করেছিল। তহবিল সংকটের কারণে ঠিকাদারের বিল দিতে না পারায় পরে এটি বিক্রি হয়ে যায় নাগরপুরের জমিদারের কাছে। পরে কৈজুরীর জমিদার গোপেশ্বর রায়চৌধুরী পুকুরটি কিনে মায়ের নামে ‘পদ্মমনি’ নাম দেন।

স্থানীয় প্রবীণদের কথায়, খননের পর থেকেই পুকুরে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ প্রতিমা বিসর্জন শুরু করেন। ধীরে ধীরে বিজয়া দশমীর মেলা বসতে থাকে। ১৯৩০ সালে জমিদার গোপেশ্বর রায়চৌধুরী শর্তসাপেক্ষে পুকুরটি পৌরসভাকে দান করেন। আজও যদিও বড় মেলা হয় না, তবুও প্রতিমা বিসর্জনের ঐতিহ্য বজায় আছে। বিজয়া দশমীতে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ আনন্দের সঙ্গে পুকুরপাড়ে আসেন।

পুকুরসংলগ্ন ক্লাব রোডের ৮০ বছর বয়সী প্রবীণ চিত্তরঞ্জন ঘোষ বলেন, 'ছোটবেলায় বিজয়া দশমীর সকালে দোকানপাট বসা শুরু হতো। দুপুরের পর থেকে মেলা জমে উঠত। বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরা কারুপণ্য, মিষ্টি, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে আসতেন। শহরের দুর্গাপূজার আনন্দের অন্যতম কেন্দ্র ছিল এই মেলা। সন্ধ্যায় প্রতিমা নিয়ে আসা হতো পুকুরপাড়ে। ঢাক-ঢোল, ঘণ্টা-কাশরের বাজনায় এলাকা মুখর হয়ে উঠত। আরতি ও নৃত্যের দৃশ্য দেখতে শহরবাসী ভিড় করত।'

কবি মাহমুদ কামাল জানান, 'সত্তরের দশকের শুরুর দিকে কিশোর বয়সে পদ্মমনি পুকুরপাড়ের মেলায় গিয়ে তিনি অত্যন্ত আনন্দিত হতেন। জিলাপি, মুড়ি-মুড়কি, মাটির খেলনা—কত দোকান বসত। এখন মেলাটি শুধু নামে টিকে আছে। বিন্দুবাসিনী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় সড়কে দুই-চারটি দোকান বসে। তবে সন্ধ্যায় বিসর্জনের সময় পুকুরপাড় এখনো মুখর হয়ে ওঠে। পুকুরের পশ্চিম প্রান্তে প্রতিমা এনে বিসর্জন দেওয়া হয়। ঢাক-ঢোলের সঙ্গে এখন আধুনিক শব্দযন্ত্রও বাজে। ট্রাক বা ভ্যানে শহরের বিভিন্ন মণ্ডপের প্রতিমা এনে শোভাযাত্রাসহ পুকুরে আনা হয়।'

আদালতপাড়া পূজা সংসদের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ কুমার সাহা বলেন, 'শহরের বেশির ভাগ দুর্গা প্রতিমা পদ্মমনি পুকুরেই বিসর্জন দেওয়া হয়। দুর্গাপূজার উৎসবের সঙ্গে পদ্মমনি পুকুরের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে।'

টাঙ্গাইল পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আনিছুর রহমান জানান, 'এ বছরও প্রতিমা বিসর্জনের জন্য পুকুরপাড়ে আলোর ব্যবস্থা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের মতো নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।' 

একটি মন্তব্য করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন