হবিগঞ্জে যৌথ বাহিনীর হাতে আটক দুই আসামিকে ছেড়ে দিলেন ওসি
![]() |
| জুলাই আন্দোলনের একটি হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি মামুন আহমেদ (বাঁয়ে) ও মাহবুবুর রহমান | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
জুলাই আন্দোলনের সময় ঢাকার মোহাম্মদপুরে সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনায় দায়ের করা একটি হত্যা মামলার দুই আসামিকে হবিগঞ্জে যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়ে আটক করে। তবে ১৮ ঘণ্টা পর তাঁদের ছেড়ে দেন হবিগঞ্জ সদর থানার ওসি। সোমবার রাতে হবিগঞ্জ সদর থানা থেকে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ওই দুই আসামি স্থানীয় যুবলীগ নেতা। তাঁরা হলেন মামুন আহমেদ (৩৮) ও মাহবুবুর রহমান ওরফে রানা (৪০)। তাঁদের ছেড়ে দিতে পুলিশকে চাপ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে হবিগঞ্জ সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি সামছুল ইসলামের বিরুদ্ধে। তবে হবিগঞ্জ সদর থানার ওসি এ কে এম শাহাবুদ্দিন শাহীন দাবি করেছেন, দুই আসামিকে ভুল তথ্যের ভিত্তিতে আটক করা হয়েছিল। হত্যা মামলার আসামি হলেও তাঁরা ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন, বরং বিএনপি পরিবারের সদস্য।
পুলিশ ও মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই বিকেলে ঢাকার মোহাম্মদপুর তিন রাস্তার মোড়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় চলতি বছরের ৩ জুলাই স্থানীয় বাসিন্দা আশিক মিয়া বাদী হয়ে মোহাম্মদপুর থানায় হত্যা মামলা করেন। এতে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ শতাধিক নেতা–কর্মীকে আসামি করা হয়।
ওই মামলায় হবিগঞ্জ সদর উপজেলার আব্দবকাই গ্রামের মামুন আহমেদ ১৮ নম্বর ও মাহবুবুর রহমান ২১ নম্বর আসামি। এজাহারে মাহবুবুর রহমানকে লস্করপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সহসভাপতি এবং মামুন আহমেদকে একই কমিটির সদস্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ মামলার আসামি হওয়ায় গত রোববার গভীর রাতে হবিগঞ্জে সেনাবাহিনী ও পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে মামুন আহমেদ ও মাহবুবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে। পরে রাতেই সেনাবাহিনী তাঁদের হবিগঞ্জ সদর মডেল থানায় সোপর্দ করে। তাঁদের আটকের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মামুন ও মাহবুবকে আটক করার পর তাঁদের বিএনপির নেতা হিসেবে দাবি করে ছাড়িয়ে নিতে পুলিশকে চাপ দেন হবিগঞ্জ সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি সামছুল ইসলাম। এ নিয়ে রাতভর পুলিশ ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে নানা বোঝাপড়া চলে। অবশেষে আটকের ১৮ ঘণ্টা পর সোমবার রাত আটটার দিকে হবিগঞ্জ সদর থানার পুলিশ তাঁদের ছেড়ে দেয়। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে নানা সমালোচনা। এ বিষয়ে উপজেলা বিএনপির সভাপতি সামছুল ইসলামের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। খুদে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি কোনো উত্তর দেননি।
সদর উপজেলার ভাদৈ গ্রামের বাসিন্দা ও হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি আমির হোসাইন বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া দুই ব্যক্তিকে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ছেড়ে নিয়েছেন হবিগঞ্জ সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি সামছুল ইসলাম। আটক দুজন সামছুল ইসলামের শ্বশুরবাড়ির দিকের আত্মীয় বলে জানান তিনি।
হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি এ কে এম শাহাবুদ্দিন শাহীন বলেন, ভুল তথ্যের ভিত্তিতে ওই দুজনকে যুবলীগ নেতা ভেবে আটক করা হয়। তাঁরা ঢাকার মোহাম্মদপুর থানার জুলাই আন্দোলনের হত্যা মামলার ১৮ ও ২১ নম্বর আসামি হলেও প্রকৃতপক্ষে ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন। তাঁরা বিএনপি পরিবারের সদস্য। যৌথ বাহিনী ভুল তথ্যে তাঁদের আটক করেছিল। মামলাটি যাচাই-বাছাই করে দেখা গেছে, মোহাম্মদপুর থানার ওসি জানিয়েছেন, ওই মামলায় তাঁদের অবস্থান ঠিক নয়। এরপর আসামিদের একজনের জিম্মায় জামিনে ছেড়ে দেওয়া হয়।
আইন অনুযায়ী এক থানার ওসি অন্য থানার মামলার আসামিকে ছেড়ে দিতে পারেন না—এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি শাহাবুদ্দিন বলেন, তিনি আসামিদের মোহাম্মদপুর থানায় পাঠাতে চেয়েছিলেন, কিন্তু মোহাম্মদপুর থানা তাঁদের নিতে রাজি হয়নি।
হবিগঞ্জ থানার ওসির এ বক্তব্যের সত্যতা যাচাই করতে যোগাযোগ করা হলে মোহাম্মদপুর থানার ওসি কাজী রফিক বলেন, হবিগঞ্জ থানা থেকে কেউ তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। তিনি নিশ্চিত করেছেন, ওই দুজন হত্যা মামলার আসামি।
হবিগঞ্জে দায়িত্বে থাকা সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা ওই দুজনকে আটক করে পুলিশে দিয়েছি, এটা ঠিক। পরে পুলিশ তদন্তে জানতে পারে, মামলায় তাঁদের নাম থাকলেও বিষয়টি ভুল বোঝাবুঝির। মামলাটি বড়, বিভিন্ন জন বাদীকে আসামিদের নাম দিয়েছেন। ওই দুজন ঘটনার সময় মোহাম্মদপুর এলাকায় ছিলেন না। সে কারণেই পুলিশ তাঁদের ছেড়ে দিয়েছে বলে জানিয়েছে।’

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন