[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

সুদের ফাঁদে আটকা রপ্তানি তহবিল

প্রকাশঃ
অ+ অ-
প্রতীকী ছবি
 
রপ্তানি খাতকে স্বল্প সুদে ঋণ দিয়ে সহায়তা করার জন্য গঠিত ১০ হাজার কোটি টাকার রপ্তানি প্রাক-অর্থায়ন তহবিল (ইএফপিএ) এখন কার্যত অচল অবস্থায়।
 
২০২৩ সালের শুরুতে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক এই তহবিল তৈরি করেছিল, যাতে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা এবং বৈদেশিক মুদ্রার সংকটে রপ্তানিকারকরা উৎপাদন চালিয়ে যেতে পারে। কিন্তু দুই বছর পেরোতেই তহবিলের সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকা ব্যাংকের খাতায় জমে আছে, ব্যবহার হচ্ছে না।
 
রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) সংকুচিত হওয়ার পর ইএফপিএকে বিকল্প হিসেবে আশা করা হয়েছিল। কিন্তু ব্যাংকগুলোর আচরণ ভিন্ন চিত্র দেখাচ্ছে। তারা প্রণোদনা প্রকল্পে অংশ নিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। বরং নিজেদের তহবিল থেকে ১৪–১৫ শতাংশ সুদে ঋণ দেওয়াতেই বেশি আগ্রহী। যেখানে ইএফপিএ থেকে মাত্র ৪ শতাংশ সুদে ঋণ পাওয়া সম্ভব। ফলে উদ্যোক্তারা পড়েছেন এক অদ্ভুত সংকটে—রাষ্ট্রের ঘোষিত প্রণোদনা কাগজে আছে, বাস্তবে সুবিধা নেই।

একজন রপ্তানিকারক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, 'ব্যাংকগুলো আমাদের বলে, ইএফপিএ ঋণ বন্ধ। কিন্তু একই ব্যাংক পরদিন ১৫ শতাংশ সুদে নিজেদের তহবিলের ঋণ দেয়। এটা শুধু ব্যবসায়িক স্বার্থ নয়, পলিসির অপব্যবহার।' 

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, তহবিলের মোট অর্থের প্রায় ৬৫ শতাংশ এখন ব্যাংক ব্যবহার করছে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংক চাইলেও ব্যাংকগুলো রপ্তানিকারকদের তহবিল দিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না।

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ)  সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, 'এই তহবিল রপ্তানিকারকদের জন্য লাইফলাইন হওয়ার কথা ছিল। ব্যাংকগুলো এটাকে নিজেদের সুবিধার খাতায় রেখেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠোর মনিটরিং না থাকলে সরকারি প্রণোদনা মাঠে আসত না।' 

বিশ্লেষকরা মনে করেন, এর পেছনে মূল দুই কারণ কাজ করছে—এক, ব্যাংকগুলো উচ্চ সুদের ঋণে বেশি লাভ পায়; দুই, তহবিল বিতরণের কোনো বাধ্যবাধকতা বা জরিমানা নেই।

অর্থনীতিবিদ ড. মইনুল ইসলাম বলেন, 'এটা একধরনের ‘নীরব ব্লকেজ’। ব্যাংক জানে, তারা চাইলে বা না চাইলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যবস্থা নেবে না। ফলে এই অর্থ কার্যত সুদ-অপচয় চক্রে আটকে থাকে।' 

তবে ব্যাংক খাতে কোনো তাত্ক্ষণিক তারল্য সংকট নেই। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী উদ্বৃত্ত তারল্য প্রায় ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ সমস্যা টাকা নেই, বরং সুদ-স্বার্থের মনোভাবেই এই তহবিল ব্যবহার হচ্ছে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, 'রপ্তানি সহায়তার সস্তা ঋণ অলস থাকলে তহবিলের লক্ষ্যই ব্যর্থ হবে। কোনো ব্যাংক যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ঋণ বিতরণে গড়িমসি করে, ব্যবসায়ীরা সরাসরি বাংলাদেশ ব্যাংকে অভিযোগ জানাবে। আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।' 

কিছু ব্যাংকারের যুক্তি, তহবিলের শর্ত জটিল এবং ফেরত দেওয়ার সময়সীমা কম। কিন্তু অর্থনীতিবিদরা বলেন, এটি সুবিধাবাদী ব্যাখ্যা। ঝুঁকি অনেকটাই কেন্দ্রীয় ব্যাংক বহন করছে; তবু ব্যাংক দিতে চায় না।

ফলে তহবিলের উদ্দেশ্য ব্যর্থ হওয়ার মুখে। রপ্তানিকারকরা কাঁচামাল আমদানি করতে পারছে না, উৎপাদন কমাচ্ছে, আর ব্যাংকগুলো অলস অর্থ ধরে উচ্চ সুদের ঋণে মনোযোগী।

ইস্টার্ন ব্যাংকের এমডি আলী রেজা ইফতেখার বলেন, 'ব্যাংকের নিজস্ব তহবিল থেকে ঋণ দেওয়া স্বাভাবিক। তবে রপ্তানির বিশেষ তহবিল থেকে ঋণ দেওয়া হচ্ছে না, এমন তথ্য আমার কাছে নেই।' 

একটি মন্তব্য করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন