১৫ বছরেও বন্ধ হয়নি টোল আদায়, অবসান চান বাসিন্দারা
![]() |
| চট্টগ্রামের শাহ আমানত সেতুর টোল প্লাজার পাশে দীর্ঘ যানজট | ফাইল ছবি |
যানবাহনের দীর্ঘ সারি, সঙ্গে হর্নের বিকট শব্দ। একের পর এক গাড়ি এসে থামছে টোল প্লাজার সামনে। চালক ও যাত্রী—সবার চোখেমুখেই বিরক্তির ছাপ। গত মঙ্গলবার বিকেলে চট্টগ্রামের শাহ আমানত সেতু এলাকায় দেখা যায় এমন চিত্র।
টোল আদায়কে কেন্দ্র করে সেতু এলাকায় এমন দৃশ্য প্রতিদিনের। ২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে সেতুটি গাড়ি চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। যাত্রী ও চালকদের অভিযোগ, ১৫ বছরে এই সেতু দিয়ে যান চলাচল কয়েক গুণ বেড়েছে। শুরু থেকেই টোল নেওয়া হচ্ছে। এত দিনে সেতুর নির্মাণব্যয় উঠে যাওয়ার কথা থাকলেও এখনো টোল আদায় চলছে।
গাড়ির চাপ বাড়ায় টোল প্লাজায় যানজট লেগেই থাকে। এতে যাত্রী ও চালকদের ভোগান্তি বাড়ছে। তাই তাঁরা শাহ আমানত সেতুতে টোল প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। এই দাবিতে কয়েকবার আন্দোলনও হয়েছে।
শাহ আমানত সেতুটি কর্ণফুলী নদীর ওপর তৃতীয় সেতু। ৫৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০০৬ সালের ৮ আগস্ট সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। ৯৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের এই সেতু দিয়ে চট্টগ্রাম নগর থেকে জেলার দক্ষিণের বিভিন্ন উপজেলা, কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলায় যাওয়া যায়।
সেতু কর্তৃপক্ষের সূত্র জানায়, চালু হওয়ার পর থেকেই সেতুতে টোল নেওয়া হচ্ছে। কয়েক দফায় টোলের পরিমাণও বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে তিন চাকার গাড়ি ৩০ টাকা, মিনিবাস ৫০ টাকা, প্রাইভেট কার ৭৫ টাকা, মাইক্রোবাস ১০০ টাকা, বড় বাস ১৫৫ টাকা, মিনিট্রাক ১৩০ টাকা, মাঝারি ট্রাক ২০০ টাকা, বড় ট্রাক ৩০০ টাকা ও লম্বা লরি ৭৫০ টাকা করে টোল দেয়।
টোল আদায়কারীদের সূত্রে জানা গেছে, সপ্তাহের বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার সেতুটি দিয়ে বেশি গাড়ি চলাচল করে। এই তিন দিনে গড়ে ৩০ হাজার গাড়ি সেতু পার হয়। অন্য দিনগুলোতে পারাপার হয় ২৪ থেকে ২৬ হাজার গাড়ি। গাড়ির চাপ বেশি থাকায় বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত সেতু এলাকায় দীর্ঘ যানজট দেখা দেয়।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, শাহ আমানত সেতুর টোলের কারণে কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ের সাধারণ মানুষ অনেক দিন ধরে ভোগান্তিতে আছেন। প্রতিদিন চট্টগ্রাম নগরে যাতায়াত করতে তাঁদের বাড়তি টাকা খরচ হচ্ছে। তাই সেতুটি দুই পাড়ের মানুষের জন্য পুরোপুরি টোলমুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। এ দাবিতে আন্দোলনও চলছে।
কর্ণফুলী নাগরিক পরিষদের আহ্বায়ক এস এম ফোরকান বলেন, তাঁরা টোল প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলন আরও জোরদার করবেন। এ লক্ষ্যেই আগামী ১ থেকে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত গণস্বাক্ষর কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘যদি আমাদের দাবি পূরণ না হয়, তাহলে আমরা চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়ক অবরোধসহ বড় ধরনের কর্মসূচি দেব।’
সেতুটি থেকে বর্তমানে টোল আদায় করছে সেল-ভ্যান জেভি নামের একটি প্রতিষ্ঠান। জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির প্রকল্প ব্যবস্থাপক পল্লব বিশ্বাস বলেন, ‘সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ ও নানা খরচের পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব আদায়ের জন্য টোল নেওয়া হয়। তাই টোল নেওয়ার বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত, এতে আমাদের কিছু করার নেই।’
সড়ক ও জনপথ বিভাগের চট্টগ্রাম উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. নিজাম বলেন, ‘টোল প্রত্যাহার নিয়ে স্থানীয়দের কর্মসূচির কথা শুনেছি। তবে এখনো তাঁদের সঙ্গে আমাদের কোনো কথা হয়নি। আমরা এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলব।’

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন