'সেফ এক্সিট' বিষয়ে নাহিদ ইসলামের স্পষ্টতা চাইছেন রিজওয়ানা হাসান
![]() |
| পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বুধবার সচিবালয়ে সমসাময়িক নানা বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
উপদেষ্টাদের মধ্যে কারা ‘সেফ এক্সিট’ (নিরাপদ প্রস্থান) নিতে চান, তা নাহিদ ইসলামকেই পরিষ্কার করতে হবে। তিনি যদি কখনো বিষয়টি পরিষ্কার করেন, তখনই সরকারের মন্তব্য আসে। এর আগে এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
আজ বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান এসব কথা বলেন।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম সম্প্রতি একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘উপদেষ্টাদের অনেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে ফেলেছে, তারা নিজেদের সেফ এক্সিটের কথা ভাবছে।’ এ বক্তব্যের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নানা আলোচনা ও সমালোচনা দেখা গেছে।
এই বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘সব রাজনৈতিক দলের মতো নতুন রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও সরকারের ভালো একটি ওয়ার্কিং রিলেশনশিপ আছে। এটি উনি অভিমান থেকে বলেছেন নাকি কোনো বিষয়ে তার গ্রিভেন্স আছে, তা উনাকেই পরিষ্কার করতে হবে। তিনি যদি কখনো পরিষ্কার করেন, তখনই সরকারের বক্তব্য আসে। এর আগে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্যের সুযোগ নেই।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘নাহিদ ইসলামের বক্তব্য তিনি নিজেই খণ্ডন করতে হবে, আমার খণ্ডনের বিষয় নয়। বক্তব্যটা যদি স্পেসিফিক (সুনির্দিষ্ট) হত, হয়তো সরকারের পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য করা হতো। তবে এটি সম্ভবত তাঁদের ধারণা, তারা মনে করছে এটি বক্তব্য হিসেবে বলা হয়েছে। এখানে সরকারের অবস্থান নেওয়ার সুযোগ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে কিছু বলার সুযোগও নেই।’
‘আসলেই কি উপদেষ্টারা এক্সিট খুঁজছেন’—এমন প্রশ্নের জবাবে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘আমি একদম কোনো এক্সিট খুঁজছি না। দেশে ছিলাম, এর আগেও বহু ঝড়ঝঞ্ঝা এসেছে। সেসব ঝড়ঝঞ্ঝা প্রতিহত করে দেশে থেকেছি। বাকিটা জীবনও বাংলাদেশেই কাটাব।’
নাহিদ ইসলামের বক্তব্য নিয়ে সরকারের মধ্যে কোনো আলোচনা আছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সরকারের বিভিন্ন বিষয়ে রাজনৈতিক দলের নেতারা প্রতিনিয়ত কথা বলছেন, এটি তাদের অধিকার। এটাই গণতন্ত্রের চর্চা। এখন প্রতিটি বিষয়ে আমরা যদি প্রতিক্রিয়া দেখাই, চিন্তা করি, তাহলে আমরা মন্ত্রণালয়গুলো কখন চালাব? যখন কোনো বিষয় সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে, তখন অবশ্যই সরকার সে বিষয়ে কথা বলবে। অনানুষ্ঠানিক বক্তব্যের ভিত্তিতে সরকারের পক্ষে কিছু বলা সম্ভব নয়।’
ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘দেশের পরিস্থিতি একদমই স্থিতিশীল। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের কথা শুধু অন্তর্বর্তী সরকারই বলেছে তা নয়, সব রাজনৈতিক দলও ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের পক্ষে তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে।
ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে, এখানে আর কোনো প্রশ্নবোধক চিহ্ন তোলার সুযোগ বা অবকাশ নেই,’ বলেন তিনি।
নির্বাচনের আগে ছোট আকারের আরেকটি নির্বাচনকালীন সরকার হবে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, এই অন্তর্বর্তী সরকারই নির্বাচন করবে। এখন পর্যন্ত এটাই অবস্থান।
সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সংস্কার এবং বিচার—এগুলো চলমান প্রক্রিয়া। বিচার বিচারের গতিতে চলছে। বিচার কীভাবে হচ্ছে, তা প্রত্যেকে দেখতে পাচ্ছেন।’
বিচারের ক্ষেত্রে যে প্রতিশ্রুতি ছিল, সরকার তা দেখিয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘একটি ট্রাইব্যুনালের ওপর চাপ বেশি হওয়ায় আরেকটি ট্রাইব্যুনাল তৈরি করা হয়েছে। আমরা বিচারকে প্রাধান্য দিচ্ছি। সেই মোতাবেক কাজ এগোচ্ছে। আমরা চাই সুবিচার নিশ্চিত হোক। সেই জন্য যে পদ্ধতি অনুসরণ করা দরকার, তা করা হচ্ছে।’
সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্যমত হয়েছে কি না—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ঐকমত্য হয়নি, এ কথাটি ঠিক নয়। অনেক বড় বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। এখন যে সমস্ত বিষয়ে সংস্কারকেন্দ্রিক ঐকমত্য হয়েছে, তা বাস্তবায়ন কিভাবে হবে, তাও নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিভিন্ন অপশন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দু’একটি অপশনে রাজনৈতিক দলগুলো বেশি সমর্থন দিচ্ছে। একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় সমাধান করতে গেলে উঠানপতন তো হবেই। তবে পদ্ধতিটা স্বাভাবিকভাবে এগোচ্ছে। সবাই আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন, মতামত দিচ্ছেন। এটি একটি ধীর ও প্রক্রিয়াগত পদ্ধতি।’
পরিবর্তন চাপিয়ে দিলে টেকসই হবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘পরিবর্তন নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক থাকবেই। এতে আতঙ্কিত হবার কিছু নেই। এটি কোনো চাপিয়ে দেওয়ার বিষয় নয়। চাপিয়ে দিলে কিছুই টেকসই হবে না। আগে দেখেছি, তিন দলের রূপরেখা ও ‘ওয়ান ইলেভেন’-এর সময়ও তাই হয়েছিল। তাই চাপিয়ে না দিয়ে, সবাই একমত হয়ে যেটুকু করতে চায়, সেই সংস্কার ও পদ্ধতির দিকে এগোবে। রাজনৈতিক আলোচনায় উত্তাপ থাকবে, একমতও হবে। এটি খুবই স্বাভাবিক।’
বিচার কবে হবে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘বিচার কখন হবে, তা পুরো শুনানি ও সাক্ষ্যগ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর বলা যাবে। আগে বলা সম্ভব নয়। বিচারাধীন মামলাগুলোর প্রক্রিয়া শেষ হলেই রায় হবে। দেড় বছরে রায় হওয়া অসম্ভব নয়। আগে দেখেছি, দেড় বছরে রায় হয়েছে।’
সরকার একটি ভালো, অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন করতে চায়। ইনক্লুসিভ নির্বাচনের সংজ্ঞা কী—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সরকার প্রথম থেকেই বলেছে, একটি স্বচ্ছ নির্বাচন চায়। জনগণ যে নির্বাচনে অংশ নেবে, সেই নির্বাচন হবে। জনগণের অংশগ্রহণের পথে যাতে কোনো বাধা না হয়, সেজন্য সরকার নির্বাচন কমিশনকে যতভাবে সম্ভব সহায়তা দেবে। কোনো রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ না করার বিষয় আইনি হতে পারে। অংশগ্রহণ না করা তাদের রাজনৈতিক গুরুত্ব অনুযায়ী নির্ধারিত হবে।’

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন