[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

বাড়িভাড়া ভাতা বাড়ল ধাপে ধাপে, শিক্ষকদের বেতনে কত বাড়ছে জানেন?

প্রকাশঃ
অ+ অ-
মঙ্গলবার সচিবালয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের সদস্যসচিব অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজিজীর হাতে অর্থ বিভাগের সম্মতিপত্র হস্তান্তর করেন | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন 

তিন সপ্তাহ আগে, ৩০ সেপ্টেম্বর সিদ্ধান্ত হয়েছিল—বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের মাসিক বাড়িভাড়া ৫০০ টাকা বাড়ানো হবে। মানে, এখনকার বাড়িভাড়া মিলিয়ে দেড় হাজার টাকা হবে। কিন্তু এতে ক্ষুব্ধ হয়ে আন্দোলনে নামেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। আন্দোলন চলার মধ্যেই গত রোববার নতুন সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। তখন অর্থ মন্ত্রণালয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে জানায়, এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়িভাড়া মূল বেতনের ৫ শতাংশ (ন্যূনতম দুই হাজার টাকা) করার বিষয়ে তারা সম্মতি দিয়েছে। তবে সরকারের এ সিদ্ধান্তও আন্দোলনকারীরা প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।

সর্বশেষ আজ মঙ্গলবার সরকার নতুন সিদ্ধান্ত নিয়েছে—বাড়িভাড়া মূল বেতনের ১৫ শতাংশ (ন্যূনতম দুই হাজার টাকা) করা হবে। এই বৃদ্ধি হবে দুই ধাপে। এর মধ্যে সাড়ে ৭ শতাংশ কার্যকর হবে আগামী ১ নভেম্বর থেকে, আর বাকি সাড়ে ৭ শতাংশ কার্যকর হবে আগামী বছরের ১ জুলাই থেকে।

এখন অনেকের প্রশ্ন, নতুন সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে একজন শিক্ষকের হিসাবে কত টাকা বাড়িভাড়া পাবেন? এর সরাসরি উত্তর দেওয়া যায় না, কারণ সব শিক্ষকের বেতন সমান নয়। পুরোনো শিক্ষকদের মূল বেতন তুলনামূলক বেশি, আবার নতুন শিক্ষকদের মধ্যেও বিষয়ভেদে বেতনের পার্থক্য আছে। যেমন চাকরির শুরুতে মাধ্যমিক পর্যায়ের একজন সহকারী শিক্ষকের (বাংলা, ইংরেজি, গণিত বা বিজ্ঞানের শিক্ষক) মূল বেতন সাড়ে ১২ হাজার টাকা। কিন্তু কৃষিশিক্ষা, শারীরিক শিক্ষা ও তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিষয়ের শিক্ষকদের বেতন শুরুতে ১৬ হাজার টাকা। আবার কলেজের শিক্ষকদের মূল বেতন চাকরির শুরুতে (নবম গ্রেডে) ২২ হাজার টাকা।

বর্তমানে সারা দেশে ছয় লাখের বেশি শিক্ষক-কর্মচারী এমপিওভুক্ত। এর মধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে আছেন ৩ লাখ ৯৮ হাজার, মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে প্রায় পৌনে ২ লাখ এবং কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে আছেন ২৩ হাজারের বেশি শিক্ষক ও কর্মচারী। এত দিন তাঁরা সরকারের কাছ থেকে মাসে মূল বেতন, ১ হাজার টাকা বাড়িভাড়া এবং ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পেয়ে আসছিলেন।

নতুন সিদ্ধান্তের ফলে শিক্ষকেরা কত টাকার বাড়িভাড়া পাবেন, তার একটি ধারণা দেওয়া যায়। যেমন, যার মূল বেতন সাড়ে ১২ হাজার টাকা, শতাংশের হিসাবে (সাড়ে ৭ শতাংশ) আগামী মাস থেকে তাঁর বাড়িভাড়া হওয়ার কথা ৯৩৭ টাকা। কিন্তু তিনি পাবেন দুই হাজার টাকা, কারণ সরকার বলেছে, শতাংশের হিসাবে যা–ই হোক, ন্যূনতম দুই হাজার টাকা দিতে হবে। আগামী বছরের জুলাই থেকে তাঁরা মূল বেতনের ১৫ শতাংশ বাড়িভাড়া পাবেন। সেই হিসাবে যার মূল বেতন সাড়ে ১২ হাজার টাকা, তাঁর বাড়িভাড়া হওয়ার কথা ১ হাজার ৮৭৫ টাকা। কিন্তু তখনো তিনি পাবেন দুই হাজার টাকা, কারণ ন্যূনতম বাড়িভাড়া তখনো দুই হাজার টাকা থাকবে।

আবার যার মূল বেতন ১৬ হাজার টাকা, নভেম্বর থেকে শতাংশের হিসাবে তাঁর বাড়িভাড়া হওয়ার কথা ১ হাজার ২০০ টাকা। কিন্তু একই কারণে তিনিও পাবেন দুই হাজার টাকা করে। তবে আগামী জুলাই থেকে তাঁর বাড়িভাড়া হবে ২ হাজার ৪০০ টাকা করে।

অর্থ মন্ত্রণালয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে পাঠানো চিঠিতে জানিয়েছে, এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়িভাড়া ১৫ শতাংশ করার এ সিদ্ধান্ত পরবর্তী বেতন স্কেলে সমন্বয় করা হবে।

সরকার ইতিমধ্যে সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নতুন বেতনকাঠামোর সুপারিশ প্রণয়নে বেতন কমিশন গঠন করেছে। কমিশন আশা করছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই তারা সরকারের কাছে সুপারিশ জমা দিতে পারবে।

অতীতে দেখা গেছে, নতুন পে স্কেলের সঙ্গে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনও বাড়ে। ফলে আসন্ন নতুন বেতন স্কেল কার্যকর হলে তাঁদের বেতন যেমন বাড়বে, তেমনি শতাংশের হিসাবে বাড়িভাড়াও আরও বাড়তে পারে।

এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়িভাড়া বৃদ্ধির দাবির পর শিক্ষা মন্ত্রণালয় ৫ অক্টোবর অর্থ বিভাগে একটি অনুরোধপত্র পাঠায়। তাতে উল্লেখ করা হয়, ২০ শতাংশ হারে বাড়িভাড়া দিলে বছরে ৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা, ১৫ শতাংশ হারে দিলে ২ হাজার ৪৩৯ কোটি, ১০ শতাংশ হারে দিলে ১ হাজার ৭৬৯ কোটি এবং ৫ শতাংশ হারে দিলে ১ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা প্রয়োজন হবে। এখন ১৫ শতাংশ হারে বাড়িভাড়া দেওয়ার সিদ্ধান্তের ফলে বছরে ২ হাজার ৪৩৯ কোটি টাকা লাগবে।

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতার জন্য সরকার যে আর্থিক অনুদান দেয়, সেটিই এমপিও (মান্থলি পে অর্ডার) নামে পরিচিত। বর্তমান বাস্তবতায় এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন দিয়ে সংসার চালানো বেশ কষ্টকর হয়ে পড়েছে।

মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের দাবিতে শিক্ষক-কর্মচারীরা দীর্ঘদিন ধরে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের আন্দোলন চালিয়ে আসছেন। পাশাপাশি তাঁরা মূল বেতনের ২০ শতাংশ (ন্যূনতম ৩ হাজার টাকা) হারে বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ভাতা দেড় হাজার টাকা এবং কর্মচারীদের উৎসব ভাতা ৭৫ শতাংশ বাড়ানোর দাবিও জানিয়েছিলেন।

টানা ১০ দিনের আন্দোলনের পর সরকার বাড়িভাড়া ১৫ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় আন্দোলনকারী শিক্ষক-কর্মচারীরা আজ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন।

এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ-প্রত্যাশী জোটের সদস্যসচিব দেলাওয়ার হোসেন আজিজী সচিবালয় থেকে শহীদ মিনারে এসে ঘোষণা দেন, ‘আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এখন থেকে আমাদের সব আন্দোলন ও কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হলো। আগামীকাল (বুধবার) থেকে আমরা শ্রেণিকক্ষে ফিরছি।’ 

একটি মন্তব্য করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন