রাজশাহীর ড্রেনে বড়শি ফেললেই ধরা যাচ্ছে মাছ
![]() |
| রাজশাহী নগরের জামালপুর এলাকায় ড্রেনে বড়শিতে ধরা পড়ছে কই–মাগুর মাছ | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পশ্চিম পাশে, ওভারপাস পেরিয়ে ভদ্রার দিকে যাওয়ার পথে চোখে পড়ছে এক ব্যতিক্রমী দৃশ্য। এখানে রাস্তার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া একটি বড় ড্রেনে মাছ শিকার করছেন অনেকে। প্রতিদিন সকাল-বিকেল ড্রেনের পাড়ে ভিড় করেন শৌখিন মাছশিকারিরা।
ড্রেনটি দীর্ঘ হলেও অন্তত ২০০ মিটার এলাকায় দেখা গেছে বড়শি ফেলে মাছ ধরছেন বেশ কয়েকজন। তাদের বড়শিতে বেশির ভাগই ধরা পড়ছে কই মাছ। কেউ কেউ মাগুর মাছও পাচ্ছেন।
মাছশিকারিদের একজন দীপক সাহা। তিনি নগরের ছোটবনগ্রাম এলাকার বাসিন্দা। মাঝেমধ্যেই তিনি এখানে মাছ ধরতে আসেন। কথা বলতে বলতে আধা ঘণ্টায় তিনি ২০টির মতো কই মাছ ধরেন। তিনি বলেন, 'আমার মাছ ধরতে খুব ভালো লাগে। কাজের ফাঁকে সময় পেলেই এখানে আসি। অনেকেই এখানে মাছ পাওয়ার কথা বলেছে, তাই মাছ ধরতে এসেছি। সকাল ও বিকেলে অনেকে এসে মাছ ধরে। ড্রেনে দেশি কই, মাগুরসহ বেশ কয়েক ধরনের মাছ পাওয়া যায়।'
দীপকের পাশেই মাছ ধরছিলেন মো. রানা। তিনি পবা উপজেলার হরিয়ান এলাকা থেকে এসেছেন। পিঁপড়ার ডিম টোপ হিসেবে ব্যবহার করে মাছ ধরছিলেন। তিনি বলেন, 'মাছ ধরা একধরনের নেশা। এটা না বোঝালে বুঝবেন না। আমি সব সময়ই মাছ ধরি। এখানে যাঁরা মাছ ধরছেন, তাঁদের সবার নেশা একই। তিন দিন ধরে ভালো মাছ ধরেছি। আজ কিছুটা কম হয়েছে, তবে বড়শি ফেললেই মাছ উঠছে।'
![]() |
| রাজশাহী নগরের জামালপুর এলাকায় ড্রেনে মাছ ধরছেন লোকজন | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
ওই সময় অন্তত সাতজনকে ড্রেনে বড়শি ফেলে মাছ ধরতে দেখা গেছে। স্থানীয় জামালপুরের বাসিন্দা রাকিবুল ইসলাম বলেন, 'এখানে সারা বছরই মাছ থাকে। আশপাশে অনেকগুলো পুকুর আছে। বর্ষার সময় এই পুকুরগুলো ডুবে গেলে মাছ ড্রেনে আশ্রয় নেয়। ড্রেনে সারা বছর পানি থাকে। আমি গত বছর কয়েক দিন এখানে বড়শি ফেলে ১৭টি বড় মাগুর মাছ ধরেছিলাম। এবার আর ফেলা হয়নি। ড্রেনে মানুষ সারা বছর মাছ ধরে। মাছগুলো বাসাবাড়ির খাবার খেয়ে বড় হয়।'
সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে আরও কয়েকজন বড়শি হাতে মাছ ধরতে বসেন। মো. সজীব নামের একজন বললেন, 'চলে আসেন, মাছ ধরি।'
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মুখপাত্র ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ শংকর কে বিশ্বাস বলেন, 'গ্রামের পুকুর বা ডোবার পরিবেশ আর শহরের ড্রেনের পরিবেশ এক নয়। শহরের ড্রেনে শুধু সাধারণ ময়লা-আবর্জনা বা কাদা থাকে না, মানুষের মলমূত্র থেকে শুরু করে কারখানার বিষাক্ত রাসায়নিক বর্জ্যও মিশ্রিত থাকে। মাছ যখন এমন দূষিত পরিবেশে বড় হয়, তখন তার শরীরেও ক্ষতিকর উপাদান চলে আসে। এই মাছ খাওয়ার মাধ্যমে বিষাক্ত পদার্থ মানবদেহেও যেতে পারে, যা স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে।'
তিনি আরও বলেন, 'মাছ ধরে কিছুদিন অন্য পানিতে রাখলেই সমস্যা দূর হবে—এটি ভুল ধারণা। মাছের শরীরে যে বিষাক্ত পদার্থ ঢুকে গেছে, তা কয়েক দিন পরিষ্কার পানিতে রাখলেই চলে যায় না। অজ্ঞতার কারণে হয়তো অনেকে এই মাছ খাচ্ছেন, কিন্তু ফলাফল ভয়াবহ হতে পারে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ হিসেবে আমি পরামর্শ দিচ্ছি, এই ধরনের মাছ খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।'


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন