[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

বিয়েতে উপহার সুন্দরবনের দেড় হাজার গাছের চারা, স্থান পেল রাজশাহীর পদ্মার চরে

প্রকাশঃ
অ+ অ-
‘মৌমাছি ও মধু পাঠশালা’র প্রতিষ্ঠাতা আকমাল মাহমুদ কনের হাতে তুলে দেন বিয়ের উপহার গাছ। গতকাল শুক্রবার বিকেলে রাজশাহীর পাঠানপাড়া এলাকার লালন শাহ মুক্তমঞ্চের পাশে পদ্মার চরে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

রাজশাহীর তথাপি আজাদের বিয়েতে অনন্য উপহার—দেড় হাজার ম্যানগ্রোভ গাছের চারা। শাড়ি, গয়না বা আসবাবের বদলে সুন্দরী, কাঁকড়া, পশুর, খলিশা ও বাইনের মতো সুন্দরবনের গাছগুলো এখন পদ্মা নদীর চরে তাঁর বিয়ের স্মৃতিচিহ্ন হয়ে থাকবে।

রাজশাহী নগরের সাগরপাড়া এলাকার বাসিন্দা তথাপি আজাদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন। ৩ অক্টোবর তার বিয়ে হয় গোদাগাড়ী উপজেলার হাসিবুল আলমের সঙ্গে।

বিয়ের এই বিশেষ উপহার দেন তিনজন অতিথি—রাজশাহীর দাতব্য প্রতিষ্ঠান মৌমাছি ও মধু পাঠশালার প্রতিষ্ঠাতা আকমাল মাহমুদ, চট্টগ্রামের আলওয়ান মধু জাদুঘর ও গবেষণাকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দ মঈনুল আনোয়ার এবং ‘চাঁপাই আমবাগান’-এর উদ্যোক্তা সাহাবুদ্দিন।

উপহারের মূল উদ্যোক্তা চট্টগ্রামের সৈয়দ মঈনুল আনোয়ার। সুন্দরবনের প্রতি তার ভালোবাসা থেকে তিনি নিজের বাড়িতে ‘এক টুকরো সুন্দরবন’ নামে একটি বাগান গড়ে তুলেছেন। সুন্দরবনের বীজ সংগ্রহ করে এসব চারা তৈরি করেছেন। বিয়েতে গতানুগতিক উপহার না দিয়ে এমন কিছু দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন যা সময়ের সাক্ষী হয়ে থাকবে। অনুষ্ঠানে না আসলেও তিনি কুরিয়ারে পাঠিয়েছেন ২০০ সুন্দরী, ২০০ কাঁকড়া, ১০০ পশুর, এক হাজার খলিশা ও ২০টি বাইনগাছের চারা।

গতকাল শুক্রবার সকালে গাছগুলো রাজশাহীতে পৌঁছায়। বিকেলে পাঠানপাড়া এলাকার লালন শাহ মুক্তমঞ্চের পাশে পদ্মার চরে বিশেষ অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। সেখানে আকমাল মাহমুদ কনে তথাপির হাতে উপহারটি তুলে দেন। তথাপি নিজ হাতে একটি চারা রোপণ করে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। রাজশাহী সদর (বোয়ালিয়া) অঞ্চলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফ হোসেনও একটি সুন্দরী গাছের চারা রোপণ করেন।

বিয়েতে উপহার হিসেবে পাওয়া ম্যানগ্রোভ প্রজাতির গাছের চারা রোপণ করা হচ্ছে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

বিয়েতে এমন অনন্য উপহার পেয়ে উচ্ছ্বসিত তথাপি আজাদ বলেন, ‘বিয়েতে নানা ধরনের উপহার পেয়েছি। কিন্তু দেড় হাজার গাছ, সেটাও সুন্দরবনের—এটা অসাধারণ এক অনুভূতি। গাছগুলো বড় হলে বলতে পারব, এটি আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর স্মৃতিচিহ্ন।’

তথাপির স্বামী হাসিবুল আলম বলেন, ‘আজকের ঘটনা সবার জন্য একটি দারুণ বার্তা। এই গাছগুলো একদিন বড় হয়ে পাখিদের আশ্রয়স্থল হবে এবং প্রকৃতিতে প্রাণ ভরে দেবে।’

তথাপির বাবা আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ বলেন, ‘আমি অভিভূত হয়েছি। একই সঙ্গে চিন্তিত হয়েছিলাম, এত গাছ কোথায় লাগাব? পরে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাঁরা পদ্মার চরের জায়গা নির্ধারণ করে দেন। যাঁরা এই উপহার দিয়েছেন এবং রোপণের জন্য জায়গা দিয়েছেন, তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা।’

সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফ হোসেন বলেন, ‘রাজশাহীর পরিবেশ রক্ষায় বৃক্ষরোপণের বিকল্প নেই। এই উদ্যোগকে আমি সাধুবাদ জানাই।’

মুঠোফোনে সৈয়দ মঈনুল আনোয়ার বলেন, ‘রাজশাহী আমার খুব প্রিয় শহর। এখানে পথঘাট কখনো জারুল ফুলে বেগুনি, কখনো পলাশ ফুলে লাল হয়ে থাকে। চেয়েছিলাম তথাপির নতুন জীবনও সবুজ ও সুন্দর হোক। অন্য উপহার একসময় হারিয়ে যায়, কিন্তু এই গাছগুলো যুগ যুগ ধরে বেঁচে থাকবে, অক্সিজেন দেবে, ছায়া দেবে। আমার স্বপ্ন, একদিন সারা দেশের মানুষের সঙ্গে সুন্দরবনের নিবিড় সম্পর্ক তৈরি হবে।’

একটি মন্তব্য করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন