[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

খাগড়াছড়িতে সহিংসতার প্রতিবাদ

প্রকাশঃ
অ+ অ-

খাগড়াছড়ি গুইমারায় অগ্নিসংযোগ, হামলা ও তিন ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যার প্রতিবাদে সংহতি সমাবেশ করে সচেতন ছাত্র-যুব-নাগরিক সমাজ, চট্টগ্রাম। শুক্রবার বিকেলে চেরাগী পাহাড় মোড়ে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

শুধু পাহাড়ে নয়, সমতলেও ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। অন্তর্বর্তী সরকার নারীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। খাগড়াছড়িতে এক অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। একজনকে গ্রেপ্তার করা হলেও বিচার কতটা এগিয়েছে, তা কেউ জানে না। বিচার চাইতে যারা রাজপথে নেমেছিল, তাদের ওপর উল্টো হামলা হয়েছে। আগুন জ্বালানো হয়েছে, প্রাণহানি হয়েছে। পাহাড়ের মানুষ এখন ভয়ভীতিতে বসবাস করছে।

শুক্রবার বিকেলে চট্টগ্রামের চেরাগী মোড়ে আয়োজিত এক সংহতি সমাবেশে এসব কথা বলেন বক্তারা। খাগড়াছড়ি গুইমারার পাহাড়িদের ঘর-বাড়ি ও দোকানে আগুন দেওয়া, হামলা চালানো এবং তিনজনকে গুলি করে হত্যার প্রতিবাদে এবং জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবিতে এই সমাবেশ করে ‘সচেতন ছাত্র-যুব-নাগরিক সমাজ চট্টগ্রাম’। এতে শতাধিক শিক্ষার্থী, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ এবং বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন।

সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন সহিংসতায় নিহত আথুই মারমার স্ত্রী নুনু মারমা। তিনি বলেন, 'আমি স্বামীর হত্যার বিচার চাই।' কথা বলতে বলতে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। পরে সমাবেশের অন্যরা তাকে সামলে নেন।

পাহাড়ি এক কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ উঠার পর জুম্ম ছাত্র-জনতার ব্যানারে ২৭ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়িতে অবরোধের ডাক দেওয়া হয়। পরদিন থেকে তিন পার্বত্য জেলায় অবরোধ চলে। ওই সময় গুইমারার রামেসু বাজারে গুলিতে তিনজন নিহত হন। তাদের একজন গুইমারা উপজেলার সিন্দুকছড়ি ইউনিয়নের আথুই মারমা। বাকি দু’জন হলেন হাফছড়ি ইউনিয়নের আথ্রাউ মারমা (২২) এবং রামেসু বাজার এলাকার থৈইচিং মারমা (২২)।

সমাবেশে অংশ নেন গুলিতে নিহত আথুই মারমার স্ত্রী নুনু মারমা (বাঁয়ে)। শুক্রবার বিকেলে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

সমাবেশে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী ও নেতা-কর্মীরা বিচার দাবিতে প্ল্যাকার্ড হাতে ধরেন। এ সময় তারা বিভিন্ন স্লোগান দেন—‘রামসু বাজারে আগুন কেন, জবাব চাই’; ‘আমরা ভাই মরল কেন, জবাব চাই’; ‘পাহাড় নিয়ে টালবাহানা চলবে না, জবাব চাই’।

পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সহসাধারণ সম্পাদক সোহেল চাকমা বলেন, 'পাহাড়ে মানুষ দীর্ঘ পাঁচ দশক ধরে নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। তারা হাট-বাজারে গেলে তল্লাশি করা হয়। আতঙ্কের মধ্যে তাদের জীবন কাটাতে হচ্ছে। ধর্ষণের বিচার চাইতে যারা রাস্তায় নেমেছিল, তাদের ওপর গুলি চালানো হয়েছে। তাদের ঘরবাড়ি ও দোকান পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। যারা এই ঘটনা তদন্ত করতে গেছেন, তাদের ওপর চাপ তৈরি করা হচ্ছে। বিচ্ছিন্নতাবাদী বা সন্ত্রাসী হিসেবে ট্যাগ দেওয়া হচ্ছে।' 

বাম গণতান্ত্রিক জোট ও বাসদ (মার্ক্সবাদী) চট্টগ্রাম জেলা সমন্বয়ক শফি উদ্দিন কবির বলেন, 'এর আগে কুমিল্লার তনুর ঘটনার সময়ও মেডিকেল রিপোর্টে ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি। খাগড়াছড়িতে অষ্টম শ্রেণির কিশোরীর ধর্ষণের ঘটনায়ও একই ঘটনা দেখা গেছে। ধর্ষকরা যদি প্রভাবশালী হয় বা কোনো বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত থাকে, তাদের বিচার হয় না।' 

সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রিতা চাকমা, ত্রিপুরা শ্রমিক সংসদের কেন্দ্রীয় সভাপতি উপামোহন ত্রিপুরা, সাবেক সহসভাপতি জয় রঞ্জন ত্রিপুরা, মারমা যুব সমাজের প্রতিনিধি থুইসাজাই মারমা, পার্বত্য জনতা মুক্তি মোর্চার সংগঠক তিতাস চাকমা, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি এ্যানি চৌধুরী এবং সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি রিপা মজুমদার।

হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে মিছিল বের করা হয়। শুক্রবার বিকেলে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

গত ২৪ সেপ্টেম্বর রাত ৯টার দিকে খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি এক কিশোরী প্রাইভেট পড়া শেষে ফেরার পথে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ওই রাত ১১টার দিকে স্বজনেরা তাকে অচেতন অবস্থায় একটি খেত থেকে উদ্ধার করেন। পরদিন সে হাসপাতালে ভর্তি না হয়ে বাড়ি চলে যায়।

পরবর্তীতে তার শারীরিক পরীক্ষা করে মেডিকেল বোর্ড প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, ধর্ষণের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। বিষয়টি নিয়ে কিশোরীর বাবা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

অবরোধ চলাকালে ২৮ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ির গুইমারার রামেসু বাজারে বিক্ষোভ ও সহিংসতা হয়। সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে অবরোধকারীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে স্থানীয় একটি পক্ষও ছিল।

ঘটনার পর গত বুধবার রাতে গুইমারা থানায় পুলিশ তিনটি মামলা করে। মামলা করা হয়েছে হত্যা, সরকারি কাজে বাধা দেওয়া, সরকারি কর্মচারীদের আহত করা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে। নিহতদের পরিবার কেউ মামলা করতে রাজি হননি।

একটি মন্তব্য করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন