[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

সার কারখানায় অতিরিক্ত গ্যাসের জন্য বাড়ছে দাম

প্রকাশঃ
অ+ অ-

নরসিংদীর ঘোড়াশালে পলাশ ইউরিয়া সার কারখানা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন 

সার কারখানায় অতিরিক্ত গ্যাস পেতে এখন বেশি খরচ করতে হবে। পেট্রোবাংলা জানিয়েছে, সরকার ইতোমধ্যে সার কারখানায় সরবরাহ হওয়া গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। এখন শুধু বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) এই বাড়তি দাম অনুমোদন করলে তা কার্যকর হবে।

বিইআরসি সূত্র বলছে, সাধারণত গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবে সব ধরনের গ্যাসের দাম একসাথে বাড়ানো হতো। কিন্তু এবার পেট্রোবাংলা এবং অন্যান্য গ্যাস কোম্পানি বিশেষভাবে শুধুমাত্র সার কারখানার জন্য আলাদা প্রস্তাব দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বাড়তি দাম ছাড়া সার কারখানায় অতিরিক্ত গ্যাস দেওয়া সম্ভব নয়। নতুন গ্যাসের দাম প্রতি ঘনমিটার ৪০ টাকা হবে, যা বর্তমান দামের ১৬ টাকার তুলনায় অনেক বেশি।

পেট্রোবাংলা এবং অন্যান্য গ্যাস কোম্পানি বলছে, নতুন গ্যাসের জন্য এলএনজি (লিকুইফাইড ন্যাচারাল গ্যাস) আনা প্রয়োজন, তাই খরচ বেড়ে যাবে। সেই খরচ সার কারখানার মালিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি)-কে দিতে হবে।

জ্বালানি বিভাগ জানায়, ২০১৯ সালে সার কারখানার গ্যাসের দাম প্রতি ঘনমিটার ৪ টাকা ৪৫ পয়সা ছিল। এরপর কয়েক ধাপে দাম বাড়িয়ে বর্তমানে তা ১৬ টাকা হয়েছে। কিন্তু বিসিআইসি অতিরিক্ত দাম দিতে অনিচ্ছুক। আগে তারা সার কারখানার লোকসান দেখিয়ে গ্যাসের বাড়তি খরচ পরিশোধ করেনি। তখন গ্যাস কোম্পানি ও সরকার এই টাকা আদায় করতে পারেননি। তবে তখন সরকার জানিয়েছিল, দাম বাড়ার কারণে সার কারখানার ওপর চাপ কমানোর জন্য ভর্তুকি দেওয়া হবে।

পেট্রোবাংলা ও অন্যান্য গ্যাস কোম্পানি জানিয়েছে, বিসিআইসি বন্ধ থাকা সার কারখানা চালু রাখতে বেশি গ্যাস প্রয়োজন। তারা চাইছে বাড়তি গ্যাস। বিদ্যুৎ, শিল্প ও অন্যান্য খাতে গ্যাস সরবরাহের সময় পেট্রোবাংলা বছরের বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন হারে গ্যাস সরবরাহ করে।

প্রস্তাবে বলা হয়েছে, নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্যে গড়ে দৈনিক ২৩০ মিলিয়ন ঘনফুট, মার্চ ও অক্টোবরে ১৬৫ মিলিয়ন ঘনফুট, আর এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে ১৩০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়। এর ফলে দেখা গেছে, গত এক বছরে সার কারখানায় গড়ে প্রতিদিন ১১৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ হয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস না থাকায় সার কারখানাগুলো বছরের বড় অংশে বন্ধ থাকে। তাই দেশে সার উৎপাদন না হলে বড় অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করে বিদেশ থেকে সার আনা হয়। বিসিআইসি বলছে, দেশে সার উৎপাদন করা হলে আমদানি তুলনায় খরচ কম পড়বে।

পেট্রোবাংলা আরও জানিয়েছে, ২০২৫ সালের মধ্যে ৫০টি নতুন অনুসন্ধান কূপ খনন, মূল্যায়ন ও উন্নয়নের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এর জন্য ১৮টি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৫টি অনুমোদিত, বাকি ৩টির অনুমোদনের জন্য প্রক্রিয়াধীন। ৫০টি কূপের মধ্যে এ পর্যন্ত ১৮টির কাজ শেষ হয়েছে, চলমান কূপের সংখ্যা ৬টি। এই কূপগুলো থেকে ১৯৪ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া সম্ভব হলেও পাইপলাইনের সীমাবদ্ধতার কারণে জাতীয় গ্রিডে শুধু ৭৪ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সংযুক্ত করা গেছে। পেট্রোবাংলা মনে করছে, এ পর্যন্ত সরবরাহ বৃদ্ধি গ্যাসের ঘাটতি মেটাতে যথেষ্ট নয়। 

পেট্রোবাংলার তথ্য অনুযায়ী, নানা প্রচেষ্টা করেও জাতীয় গ্রিডে যে পরিমাণ গ্যাস সংযুক্ত করা সম্ভব হচ্ছে, তা কমছে। বিদ্যমান গ্যাস ফিল্ড থেকে উৎপাদন ক্রমান্বয়ে কমার কারণে চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহ বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না, বরং কমতে শুরু করেছে। তাই পেট্রোবাংলা এলএনজি আমদানি বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে। ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে ৮টি গ্রাহক শ্রেণির স্বাভাবিক চাহিদা ৩ হাজার ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট হলেও গড়ে ২ হাজার ৪৫৩ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা গেছে।

এর আগে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ৮৩ কার্গো, আর ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ৯৪ কার্গো এলএনজি আমদানি করা হয়েছে। বিসিআইসির প্রস্তাব অনুযায়ী, সার কারখানায় দৈনিক ৩৩০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করতে হলে আরও এলএনজি আমদানি করতে হবে। পেট্রোবাংলা বছরে ১১৫ কার্গো এলএনজি আমদানি করতে সক্ষম। এই পরিমাণ এলএনজি এলে সার কারখানায় চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহ সম্ভব হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পেট্রোবাংলার কর্মকর্তা বলেছেন, আগে বিসিআইসি সার শ্রেণিতে গ্যাসের বাড়তি দাম পরিশোধ করেনি। এমনকি সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেও সেই দাম অনুযায়ী অর্থ আদায় করা সম্ভব হয়নি। 

তিনি বলেন, এবার এজন্যই আমরা গ্যাস সরবরাহ না বাড়িয়ে বিইআরসির মাধ্যমে গণশুনানি আয়োজন করেছি।’’ প্রসঙ্গত, আগামী ৬ অক্টোবর এই গণশুনানি অনুষ্ঠিত হবে।

অন্তর্বর্তী সরকারের কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, 'সার শ্রেণিতে গ্যাসের দাম বাড়লেও দেশে সারের দাম বাড়বে না। ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কারণে নতুন সরকার দায়িত্ব নেবে। গ্যাসের দাম বাড়লেও সারের দাম না বাড়লে নতুন সরকারকে ভর্তুকি দিতে হবে। বাড়তি ভর্তুকির চাপ কীভাবে সামলাবে, তা দেখা বাকি।’ 

পেট্রোবাংলা বলছে, সারের চাহিদা অনুযায়ী এলএনজি আমদানি করতে বছরে অন্তত ছয় হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি প্রয়োজন হবে। 

একটি মন্তব্য করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন