নাজুক যোগাযোগব্যবস্থার প্রতিবাদে সিলেটে এক ঘণ্টার কর্মসূচি পালন
সিলেটে নাজুক যোগাযোগব্যবস্থার প্রতিকার দাবিতে সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরীর আহ্বানে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ রোববার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত নগরের কোর্ট পয়েন্ট এলাকায় এ কর্মসূচি হয়।
ঢাকা–সিলেট মহাসড়ক সংস্কারসহ যোগাযোগব্যবস্থার দ্রুত উন্নয়নের দাবিতে আয়োজিত এ কর্মসূচিতে বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার হাজারো মানুষ অংশ নেন। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী নগরের বেশির ভাগ বিপণিবিতান ও দোকান বন্ধ রাখেন ব্যবসায়ীরা। অনেক পরিবহনচালক যানবাহন বন্ধ রেখে কর্মসূচিতে সংহতি জানান। এতে এক ঘণ্টার জন্য কার্যত সিলেট নগর অচল হয়ে পড়ে।
কর্মসূচিতে সড়ক ও রেলপথের দুরবস্থা দূর করা, বিমান ভাড়া যৌক্তিক পর্যায়ে আনা এবং বিদ্যুৎ–পানি সংকট নিরসনের আহ্বান জানান সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তিনি বলেন, মৌলিক নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সিলেটবাসী। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ খাতে সিলেটের ন্যায্য প্রাপ্যতা এখনো নিশ্চিত হয়নি।
আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও সিলেটবাসী বারবার বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। মৌলিক চাহিদা পূরণে আমরা বঞ্চিত হচ্ছি বারবার।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখন আর চুপ করে থাকার সময় নয়। ঢাকা–সিলেট মহাসড়ক, রেল ও আকাশপথের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ সিলেটবাসীকে জিম্মি করে রেখেছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে আমাদের দাবির বাস্তবায়ন দেখতে চাই।’
আরিফুল হক চৌধুরী হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘যদি এই সময়ের মধ্যে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া হয় এবং সিলেটবাসীর প্রতি বৈষম্য অব্যাহত থাকে, তাহলে আমি জনগণকে সংগঠিত করে আরও কঠোর কর্মসূচি নিতে বাধ্য হব। এর দায় বর্তমান সরকারকেই নিতে হবে।’
সিলেটের সড়কব্যবস্থা ভয়াবহভাবে নাজুক উল্লেখ করে সাবেক মেয়র বলেন, সিলেট–ঢাকা ও সিলেট–চট্টগ্রাম মহাসড়কের উন্নয়নকাজ থেমে আছে। শুধু মহাসড়ক নয়, শহরের অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোর অবস্থাও বেহাল। এ কারণে পর্যটক কমে যাচ্ছে, পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে যাতায়াত করাও কষ্টকর হয়ে পড়েছে।
রেল যোগাযোগের অবস্থাও একই রকম বলে মন্তব্য করেন বিএনপির এই নেতা। তিনি বলেন, রেলওয়ের পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। টিকিট না পাওয়া, সময়মতো ট্রেন না ছাড়াসহ নানা সমস্যায় সিলেটবাসী ভুগছেন। সিলেট–ঢাকা রুটে নতুন ট্রেন সংযোজনের কথা থাকলেও সেটিও বাতিল করা হয়েছে।
![]() |
| সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলমের মাধ্যমে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বরাবর আরিফুল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে স্মারকলিপি দেওয়া হয় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
আরিফুল হক চৌধুরী তাঁর বক্তব্যে বিমানবন্দরে প্রবাসীদের হেনস্তা বন্ধ করা, বন্যা প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়া, তীব্র লোডশেডিং দূর করা, আবাসিক ও অনাবাসিক গ্যাস সংযোগ চালু করা, প্রবাসীদের সমস্যা সমাধান এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শূন্য পদ পূরণের দাবি জানান।
কর্মসূচিতে সিলেটের শিক্ষাবিদ, ধর্মীয় নেতা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও বিশিষ্টজনেরা বক্তব্য দেন। পরে আরিফুল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলমের মাধ্যমে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হয়। এতে সিলেটের নানা সমস্যা তুলে ধরে আট দফা দাবি বাস্তবায়নের অনুরোধ জানানো হয়।
এ সময় জেলা প্রশাসক স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সমস্যাগুলো সমাধানে আন্তরিকভাবে কাজ করার আশ্বাস দেন।
আট দফা দাবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—ঢাকা–সিলেট মহাসড়কের সংস্কার দ্রুত শেষ করা, সিলেট–ঢাকা ও সিলেট–চট্টগ্রাম রুটে নতুন ট্রেন ও বগি চালু করা, রেল টিকিটের কালোবাজারি বন্ধ করা, সিলেট–ঢাকা রুটে বিমানের ভাড়া যৌক্তিক পর্যায়ে আনা এবং সিলেটের অভ্যন্তরীণ সড়ক যোগাযোগব্যবস্থার দ্রুত উন্নয়ন ও টেকসই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা।


Comments
Comments