[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

বৈরী আবহাওয়ায় সাগরে পর্যটকের ভিড়, বর্ণাঢ্য আয়োজনে প্রতিমা বিসর্জন

প্রকাশঃ
অ+ অ-

কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে উৎসবমুখর পরিবেশে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার বিকেলে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন    

বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের কারণে সকাল থেকে বৃষ্টি, উত্তাল সাগর ও ঢেউ উঠলেও কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে বৃহস্পতিবার প্রতিমা বিসর্জন উৎসবমুখরভাবে সম্পন্ন হয়েছে। বিকেল চারটায় লাবণী পয়েন্টের বিজয়া মঞ্চসংলগ্ন এলাকায় ভক্তরা প্রতিমার চারপাশে জড়ো হয়ে আনন্দ-উল্লাস, সিঁদুর খেলা ও শেষ মুহূর্তের প্রার্থনা করছিলেন। লাখো পর্যটকও এতে অংশ নেন।

বিকেল পাঁচটায় মন্ত্রপাঠের পর শুরু হয় প্রতিমা বিসর্জন। এক ঘণ্টার মধ্যে ১২৭টি প্রতিমা নদীতে বিসর্জন দেওয়া হয়। ভক্তদের মধ্যে কেউ আনন্দে উল্লসিত, কেউ চোখে জল ফেলছিলেন। দুপুরে শহরের বিভিন্ন মণ্ডপ থেকে প্রতিমা নিয়ে বের হয় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। লাবণী সৈকতে পৌঁছালে সৈকত মানুষের ঢলে ভরে যায়।

কক্সবাজার জেলা পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি উদয় শঙ্কর পাল জানান, এ বছর জেলায় ৩২১টি মণ্ডপে দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে ১২৭টি প্রতিমা লাবণী সৈকতে বিসর্জন দেওয়া হয়েছে। বাকি প্রতিমা চকরিয়ার মাতামুহুরী নদী, কুতুবদিয়া ও টেকনাফ সৈকতে বিসর্জন দেওয়া হয়েছে।

বৈরী আবহাওয়া ও বিপুল মানুষের ভিড় সামলাতে সকাল থেকে সেনাবাহিনী, র‍্যাব, বিজিবি, পুলিশ, পর্যটন পুলিশ, কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনী মাঠে ছিলেন। জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালতও সক্রিয় ছিল। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারিতে পুরো অনুষ্ঠান শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়।

প্রতিমা বিসর্জন উৎসব নির্বিঘ্ন করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর ছিল। বৃহস্পতিবার দুপুরে সৈকতের লাবনী পয়েন্টে তল্লাশি চালান সেনা সদস্যরা  | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন    

বেলা সাড়ে তিনটায় লাবণী পয়েন্টের বিজয়া মঞ্চে আলোচনা সভা শুরু হয়। জেলা পূজা উদ্‌যাপন পরিষদ ভারপ্রাপ্ত সভাপতি উদয় শঙ্কর পালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক মো. আবদুল মান্নান, পুলিশ সুপার মো. সাইফউদ্দিন শাহীন, কক্সবাজার পৌরসভার প্রশাসক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নিজাম উদ্দিন আহমেদ, র‍্যাব-১৫ কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল কামরুল হাসান, কক্সবাজার-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য লুৎফর রহমান কাজল, কক্সবাজার-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলমগীর মো. মাহফুজউল্লাহ ফরিদ, কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক মেয়র সরওয়ার কামাল, কক্সবাজার শহর জামায়াতের আমির আবদুল্লাহ আল ফারুক প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য দেন উখিয়া ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অজিত দাশ।

জেলা প্রশাসক মো. আবদুল মান্নান বলেন, প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যেও শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিমা বিসর্জন সম্পন্ন হওয়া কক্সবাজারের সম্প্রীতির উদাহরণ। বিএনপি নেতা লুৎফর রহমান কাজল বলেন, লাখো মানুষের উপস্থিতি প্রমাণ করেছে, কক্সবাজার সত্যিই সম্প্রীতির শহর।

সৈকতজুড়ে ছিল লাখো মানুষের উপস্থিতি। বৃহস্পতিবার বিকেলে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন    

প্রতিমা বিসর্জন দেখতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পর্যটকরা মুগ্ধ হয়েছেন। রাজশাহীর সাজ্জাদ হোসেন বলেন, 'খোলা সৈকতে একে একে শতাধিক প্রতিমা বিসর্জনের দৃশ্য আগে কখনো দেখিনি। চারপাশে লাখো মানুষ—তবু কোথাও বিশৃঙ্খলা নেই। সত্যিই মুগ্ধ হয়েছি।' 

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে আসা নতুন তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, 'সাগরে প্রথমবার প্রতিমা বিসর্জন দেখলাম। বৃষ্টি আর ঢেউ উপেক্ষা করে লাখো মানুষের সমাগম অবাক করেছে।' 

ঢাকার মিজানুর রহমান বলেন, 'নিরাপত্তা নিয়ে শুরুতে কিছুটা উদ্বিগ্ন ছিলাম। কিন্তু শান্তিপূর্ণভাবে বিসর্জন শেষ হতে দেখে খুব ভালো লাগছে। সম্প্রীতির এমন উদাহরণ পুরো দেশের জন্য অনন্য।'  

একটি মন্তব্য করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন