খাগড়াছড়িতে জুম্ম ছাত্র-জনতা অবরোধ প্রত্যাহার
![]() |
| ২৮ সেপ্টেম্বর আগুনে পুড়ছে খাগড়াছড়ির গুইমারা বাজার এলাকার বেশ কিছু দোকান | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
খাগড়াছড়িতে পূর্বনির্ধারিত অবরোধ কর্মসূচি স্থগিতের পর এবার তা সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহার করেছে জুম্ম ছাত্র-জনতা। শনিবার সকালে সংগঠনটির ফেসবুক পেজ থেকে এই ঘোষণা দেওয়া হয়। একই সঙ্গে আট দফা দাবি বাস্তবায়নের আহ্বানও জানিয়েছে তারা।
জুম্ম ছাত্র-জনতা জানায়, খাগড়াছড়ি ও গুইমারায় সংঘটিত ঘটনার পর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে তাদের প্রতিনিধিদের দ্বিতীয় দফার আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সময় জুম্ম ছাত্র-জনতার আট দফা মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়। এই আশ্বাস বিবেচনায় রেখে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত স্থগিত রাখা অবরোধ কর্মসূচি এবার প্রত্যাহার করা হয়েছে।
অবরোধ প্রত্যাহারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জুম্ম ছাত্র-জনতার সদস্য কৃপায়ন ত্রিপুরা। তিনি বলেন, ‘দ্রুত আট দফা দাবি বাস্তবায়ন না হলে আমরা আরও কঠোর ও অনির্দিষ্টকালের কর্মসূচি ঘোষণা করতে দ্বিধা করব না।’
জুম্ম ছাত্র-জনতার আট দফার মধ্যে রয়েছে যেকোনো ধরনের হামলা ও গ্রেপ্তার বন্ধ রাখা, ধর্ষণ মামলার দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা ও তাঁদের বিচার নিশ্চিত করা, ভুক্তভোগীকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন দেওয়া, ২৭ ও ২৮ অক্টোবর খাগড়াছড়ি ও গুইমারায় সংঘটিত ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত করে ১০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন প্রদানের পর দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি নিশ্চিত করা, সহিংসতায় আগুনে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ ও আহতদের চিকিৎসার খরচ বহন করা এবং আটক ব্যক্তিদের নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়া।
গত ২৪ সেপ্টেম্বর রাত ৯টায় প্রাইভেট পড়ার পর খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি এক কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। রাত ১১টায় তাকে অচেতন অবস্থায় একটি খেত থেকে উদ্ধার করেন স্বজনেরা এবং রাতেই খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরদিন সে হাসপাতাল ছেড়ে চলে যায়। ঘটনার পর শয়ন শীল নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
ধর্ষণের অভিযোগের প্রতিবাদে জুম্ম ছাত্র-জনতা ২৭ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়িতে অবরোধ ডেকেছিল। পরদিন থেকে তিন পার্বত্য জেলায় অবরোধ চলতে থাকে। অবরোধ চলাকালীন ২৮ সেপ্টেম্বর গুইমারার রামেসু বাজারে বিক্ষোভ ও সহিংসতা হয়। সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে অবরোধকারীদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে এবং স্থানীয় একটি পক্ষও সংঘর্ষে যুক্ত হয়। এই সময় গুলিতে তিনজন নিহত হন, তারা সবাই পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর। অন্তত ২০ জন আহত হন, যার মধ্যে একজন সেনাবাহিনীর মেজরও আছেন। রামেসু বাজারে আগুন দিয়ে প্রায় অর্ধশত বসতবাড়ি ও ৪০টির মতো দোকান ধ্বংস করা হয়।
ঘটনার চার দিন পর, পুলিশ তিনটি মামলা দায়ের করে। মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় ১ হাজার ১০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এদিকে, গত মঙ্গলবার খাগড়াছড়ির ওই কিশোরীর শারীরিক পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি বলে মেডিকেল বোর্ড প্রতিবেদন দিয়েছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন