কাঁচা মরিচের দামে আগুন, বিপাকে সাধারণ ক্রেতা
![]() |
ময়মনসিংহ নগরের মেছুয়া বাজার। শনিবার দুপুরে তোলা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
গত এক সপ্তাহে দেশের বিভিন্ন এলাকায় কাঁচা মরিচের দাম হঠাৎ বেড়ে গেছে। বিভিন্ন জেলার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রান্নার এই অপরিহার্য উপকরণটি এখন কেজিপ্রতি ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, দাম বাড়ার দুটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, এ বছর বর্ষা দীর্ঘ হওয়ায় অনেক মরিচখেতে পানি জমে গাছ নষ্ট হয়েছে। ফলে উৎপাদন কম হয়েছে। দ্বিতীয়ত, দুর্গাপূজার কারণে ভারত থেকে মরিচ আমদানি বন্ধ আছে। এই দুই কারণে বাজারে সরবরাহ কমে গেছে। দামের এই উর্ধ্বগতিতে ক্রেতারাও এখন কম পরিমাণে মরিচ কিনছেন।
ময়মনসিংহ
ময়মনসিংহ শহরের সবচেয়ে বড় পাইকারি সবজি বাজার মেছুয়া বাজারে শনিবার কাঁচা মরিচ খুচরা দরে কেজিপ্রতি ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আড়তদার মো. রুহুল আমিন বলেন, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গার মরিচ বাজারে এসেছে। কিন্তু দুর্গাপূজার কারণে সীমান্তে আমদানি–রপ্তানি বন্ধ থাকায় সরবরাহ কমেছে। তার আড়তে প্রতিদিন আড়াই থেকে তিন হাজার কেজি মরিচের চাহিদা থাকলেও তিনি পাচ্ছেন মাত্র এক হাজার কেজি। দাম বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতারা প্রয়োজনের তুলনায় কম কিনছেন।
মেছুয়া বাজারের আরাফাত হোসেন শিপু ট্রেডার্সে কাজ করছেন জাফর ইকবাল। তিনি বলেন, ‘দুর্গাপূজার কারণে ভারত থেকে মরিচ আমদানি বন্ধ থাকায় দাম কিছুটা বেড়েছে। এখন উত্তরবঙ্গের মরিচ দিয়ে বাজার চলছে। শীতকালে ময়মনসিংহে মরিচের অভাব থাকে না। তখন কেজি দরে ৩০–৪০ টাকা হয়। স্থানীয় মরিচ থাকলে দাম এত বাড়ত না।’
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জুবায়রা বেগম বলেন, ‘বর্তমান সময়ে যে পরিমাণ বৃষ্টি হচ্ছে, পাঁচ বছর আগে এমন বৃষ্টি হয়নি। বৃষ্টির কারণে কৃষকেরা নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। বৃষ্টি শেষ হলে নতুন মরিচ চাষ শুরু হবে।’
![]() |
রাজশাহীতে বাজারে সবজির সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকলেও দাম চড়া। শনিবার সকালে রাজশাহী নগরের মাস্টারপাড়া মণিচত্বর বাজারে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
রাজশাহী নগরের বড় কাঁচাবাজার মাস্টারপাড়া মণিচত্বরে ভোর থেকেই সবজি আসে। পাইকারি বিক্রির পর খুচরা বিক্রি শুরু হয়। শনিবার সকালে দেখা গেছে, মরিচের দাম প্রতি কেজি ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা। মাত্র চার দিন আগে এই মরিচের দাম ছিল কেজিপ্রতি ১৫০ টাকা। এক ক্রেতা ৩০ টাকার মরিচ কিনতে এসে হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘এখানে হয়তো ৩০ টাকায় ৩০টি মরিচও নেই। দাম হঠাৎ অনেক বেড়ে গেছে।’
মাস্টারপাড়া মণিচত্বর বাজারের ব্যবসায়ী আবদুস সোবহান বলেন, ‘মরিচখেতে মরিচ নেই। বেশির ভাগ মরিচখেতে পানি জমে গাছ পচে গেছে। এ কারণে দাম বাড়েছে।’
চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলায়ও সকালেই কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি ৪০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। উপজেলা সদরের কাঁচা তরকারির বাজারে মাত্র তিনজন বিক্রেতার কাছে সামান্য মরিচ ছিল। দাম চড়া হওয়ায় বেচাবিক্রি খুব কম। কয়েকজন ক্রেতা দরদাম করে মরিচ কিনে ফিরে যাচ্ছিলেন।
বাজারে আসা কলাদী এলাকার এক গৃহবধূ বলেন, 'জরুরি প্রয়োজনে ১০০ টাকায় ২৫০ গ্রাম মরিচ কিনেছেন। তিনি জানান, দাম না কমলে আর কিনবেন না। হঠাৎ দাম কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতারা হতাশ।'
![]() |
কাঁচা মরিচের দাম হাঁকানো হচ্ছে কেজিপ্রতি ৪০০ টাকা। এক সবজি বিক্রেতা অল্প কিছু কাঁচা মরিচ নিয়ে বসে আছেন ক্রেতার আশায়। শনিবার সকালে চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলা সদর বাজারে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
উপজেলা সদর বাজারের কাঁচা তরকারি বিক্রেতা আলমগীর হোসেন ও মো. আল-আমিন বলেন, 'দুদিন ধরে বাজারে কাঁচা মরিচ তেমন আসছে না। সরবরাহ কম থাকায় দাম অনেক বেড়ে গেছে। এ কারণে বেচাবিক্রিও কম। ক্রেতারা মরিচের দাম শুনে বাজারে কেনাকাটা ত্যাগ করছেন।'
কুষ্টিয়া
কুষ্টিয়া পৌরবাজারে তিন দিন আগে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচের দাম ছিল ২২০–২৩০ টাকা। শনিবার সকালে একই মরিচ কেজিপ্রতি ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খুচরা ব্যবসায়ী ইনসান আলী বলেন, মরিচের আমদানি কম। আজ মাত্র ৬ কেজি কিনেছেন, প্রতি কেজি ২৮০ টাকায়, বিক্রি করছেন ৩২০ টাকায়। তিনি জানান, কতদিন এই দাম থাকবে বলা মুশকিল।
মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, 'গ্রামের মরিচখেতে প্রচণ্ড রোদে গাছ পুড়ে যাচ্ছে। ভ্যাপসা গরমের পর বৃষ্টি বেশি হওয়ায় আরও গাছ নষ্ট হচ্ছে। ফলস্বরূপ কাঁচা মরিচের উৎপাদন কম হচ্ছে এবং দাম আরও কিছুদিন বাড়তে পারে।'
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন