[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

প্রাণ জেগেছে ছেঁউড়িয়ায়, ৩ দিনের লালন উৎসব শুরু

প্রকাশঃ
অ+ অ-
কুষ্টিয়ার কুমারখালীর ছেউড়িয়ায় লালন তিরোধান দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আগত ভক্ত–দর্শনার্থীরা। শুক্রবার বিকেলে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন 

'মজা পুকুরে বদ্ধ জল হিসেবে পড়ে আছি, যদি সেই সজল বরষা আসে, তবে সেই বরষার জলে সংস্কার হতে পারব।' কথাগুলো বলছিলেন প্রবীণ ফকির নহির শাহ। লালনের মরমি বাণী, 'রাখিলেন সাঁই কূপজল করে আন্ধেলা পুকুরে, কবে হবে সজল বরষা চেয়ে আছি সেই ভরসা,' বোঝাতে তিনি এই কথাগুলো বলেন। বহু বছর ধরে তিনি ভক্ত–অনুসারীদের সঙ্গে ছেঁউড়িয়ায় লালন আখড়াবাড়িতে আসেন।

নহির শাহ বলেন, সাঁইজি গুরু জ্ঞানের অপেক্ষায় ছিলেন এবং আত্মা–সংস্কারের সৎ উপায় খুঁজছিলেন। তিনি মনে করেন, 'সাঁইজি সর্বস্তরে সংস্কারের বাসনা করতেন। সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত শুদ্ধ মানুষ, শুদ্ধ সমাজ বা শুদ্ধ রাষ্ট্র গড়ে ওঠে না। আত্ম–সংস্কার আমাদের প্রত্যেকের দরকার।'

শুক্রবার বিকেল থেকে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার ছেঁউড়িয়ায় শুরু হয়েছে ফকির লালন শাহর তিরোধান দিবসের তিন দিনের অনুষ্ঠান। সাধু-ফকিরেরা সেখানে অষ্টপ্রহর কাটাবেন, আত্মজিজ্ঞাসা করবেন এবং লালন শাহর অমর গান পরিবেশন করবেন।

সাধু-ফকিরেরা জানান, এই অষ্টপ্রহরে তারা গুরুকার্য করবেন। রাখালসেবা, অধিবাস, বাল্যসেবা এবং শনিবার দুপুরে পুনঃসেবার মধ্য দিয়ে তাঁদের সাধুসঙ্গ শেষ হবে। তারা গানে গানে লালন শাহকে স্মরণ করবেন। রাতে একতারা বাজিয়ে গান পরিবেশন হবে।

লালন সাঁইয়ের তিরোধান দিবস উপলক্ষে সন্ধ্যায় দলগত সংগীত পরিবেশন করছেন শিল্পীরা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন 

দুই দিন ধরে আখড়াবাড়িতে আসতে থাকেন সাধু-ফকির ভক্তরা। শুক্রবার আখড়াবাড়ি চত্বর কানায় কানায় ভরে যায়। দর্শনার্থীদের ভিড়ে সেখানে তিলধারণের জায়গা থাকছে না।

লালন উৎসবের মূল মঞ্চে গান পরিবেশন করছেন লালন একাডেমির শিল্পীরা। ছেঁউড়িয়া, কুমারখালী, কুষ্টিয়া, ১৭ অক্টোবর | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন 

কালী নদীর পাড়ে মাঠের মূলমঞ্চে আলোচনায় প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যস্ত থাকায় তিনি উপস্থিত থাকতে না পেরে ঢাকা থেকে ভিডিও বার্তায় দুঃখ প্রকাশ করেন। স্বাগত বক্তব্য দেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক রেজাউদ্দিন স্টালিন। বক্তব্য দেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব মফিদুর রহমান।

‘রাখিলেন সাঁই কূপজল করে আন্ধেলা পুকুরে, কবে হবে সজল বরষা চেয়ে আছি সেই ভরসা’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির ব্যবস্থাপনায় এবং কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে মুখ্য আলোচক ছিলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান লেখক ও গবেষক গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক। তিনি বলেন, 'আমি কথা বলি, গানও করি। কিন্তু করোনা আমার কণ্ঠকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। আঞ্চলিক টান নিয়ে এখানে এসেছি। লালন নিয়ে অবশ্যই গবেষণা হবে, আর ছোটরা গান শিখবে।' 

গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক লালনের বাণীতে সারা বিশ্বের তথ্যের সংযোগের কথা তুলে ধরেন। তিনি লালনের কয়েকটি গান বাজিয়ে তা ব্যাখ্যা করেন। বক্তব্যের শেষে তিনি মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে রোহিঙ্গা ও ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করেন।

বিশিষ্ট কবি, লেখক ও রাষ্ট্রচিন্তক ফরহাদ মজহার বলেন, 'এই জায়গায় সংগীত, জ্ঞান এবং ভাবের চর্চা হবে। লালনের চর্চা অস্পষ্ট, এটাকে স্পষ্ট করতে হবে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়কে।' তিনি বলেন, 'গায়ত্রী এখানে আসায় আজ থেকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেল।' 

জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীনের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন মৎস্য উপদেষ্টা ফরিদা আখতার এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক আ–আল মামুন। আলোচনা শেষে মূল মঞ্চে সাধু-ফকিররা লালনের উদ্বোধনী গান পরিবেশন করেন। অনুষ্ঠান চলল রাতভর।

লালন শাহের তিরোধান উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণ উৎসবে হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটেছে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

লালন শাহর এই আয়োজনে প্রতিবছর বড় পরিসরে মেলা বসানো হয়। জাতীয়ভাবে পালন করতে মেলার মাঠ সুন্দরভাবে সাজানো হয়। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় সেখানে আধুনিকভাবে ১০০টি স্টল তৈরি করে। এসব স্টলে ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন ধরনের দোকান সাজান।

ফকির লালন সাঁই ১৮৯০ সালের ১ কার্তিক কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের ছেঁউড়িয়া গ্রামে মৃত্যুবরণ করেন। তখন থেকে আখড়াবাড়ি চত্বরে তাঁর ভক্ত–অনুসারীরা সাঁইজিকে স্মরণ করে আসছেন। 

একটি মন্তব্য করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন