[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

জামালপুরে ব্রহ্মপুত্রের বালুচরে কাশফুলের ঝলক

প্রকাশঃ
অ+ অ-

প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত নদের ধারে ভিড় করছেন নানা বয়সী মানুষ। সবাই নিজেদের মতো করে ছবি তুলছেন। মঙ্গলবার বিকেলে জামালপুর শহরের ফৌজদারি এলাকায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন 

জামালপুর শহরের ফৌজদারি এলাকার ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে মনোমুগ্ধকর এক দৃশ্য চোখে পড়ছে। নদীর চারপাশে ছড়িয়ে আছে বালুচর, মাঝখানে স্বচ্ছ পানির একটি ছোট ডোবা। ওপরে নীল আকাশে সাদা মেঘ ভেসে যাচ্ছে। বালুচর জুড়ে ফুটেছে শুভ্র কাশফুল। বাতাসে দুলতে থাকা কাশফুলের এই দৃশ্য দর্শনার্থীদের মনে শান্তি দেয়।

প্রতিদিনই দূরদূরান্ত থেকে মানুষ এখানে আসছেন। বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত নদের তীরে ভিড় লক্ষ্য করা যায়। কেউ ছবি তুলছেন, কেউ কাশফুল ছিঁড়ে তোড়া বানাচ্ছেন।

গত মঙ্গলবার বিকেলে দেখা যায়, শহরের মোড় থেকে শুরু করে নদের তীর পর্যন্ত মানুষ ছুটছেন। ছোট একটি সেতু পার হয়ে সবাই নদীর ধারে পৌঁছাচ্ছেন। প্রায় এক কিলোমিটারজুড়ে কাশফুল ফুটেছে। সবুজ লম্বা পাতার বুক থেকে বেরিয়ে আসা শুভ্র কাশফুল কোথাও গুচ্ছাকারে, কোথাও থোকা থোকা। দূর থেকে মনে হয় যেন বালুচরে সাদা চাদর বিছানো। হাওয়ায় দুলে ওঠা কাশফুল দর্শনার্থীদের মন ভালো করে দিচ্ছে।

চরের সেই অংশে জনবসতি নেই। আছে স্বচ্ছ পানির ছোট ডোবা। ডোবায় ডিঙি নৌকা নিয়ে ঘুরছেন দর্শনার্থীরা। শহরের নানা এলাকা থেকে আসা মানুষ ছবি তুলছেন বা সন্তানদের সঙ্গে খেলায় মেতে উঠছেন।

ব্রহ্মপুত্র নদের চরের যে অংশে কাশবনের সৃষ্টি হয়েছে, সেখানে জনবসতি নেই। আছে স্বচ্ছ পানির লেকের মতো একটি ডোবা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন 

স্থানীয়রা জানান, ফৌজদারি এলাকার ব্রহ্মপুত্রের এই অংশে এখন আগের মতো প্রবল নদীপ্রবাহ নেই। ফলে নদীর তীরে বালুচর তৈরি হয়েছে। ভাদ্র মাসের শেষের দিকে কাশফুল ফুটতে শুরু করে এবং কার্তিক পর্যন্ত থাকে। এ সময়ে পুরো এলাকা শুভ্র কাশফুলে সাজে। তখনই এখানে বিকেলের সময়ে এক ধরনের গ্রামীণ মেলার ছাপ দেখা যায়। ফুচকা, চটপটি, খেলনা ও নানা খাবারের দোকান বসে, ভিড় জমে এসব দোকানেও।

মুকুন্দবাড়ি এলাকার ফিরোজ মিয়া তার মেয়েকে নিয়ে কাশবনে এসেছিলেন। তিনি বলেন, ‘সত্যিই জায়গাটি অনেক সুন্দর। চারদিকে সাদা কাশফুল, আবার ফুলের মাঝে স্বচ্ছ পানির লেক—অসাধারণ দৃশ্য। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে মেয়েকে নিয়ে এসেছি। সন্ধ্যা হলেও মেয়ে যেতে চাইছে না।’

জামালপুরের ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে কাশবন দেখতে যাওয়া লোকজন। মঙ্গলবার বিকেলে জামালপুর শহরের ফৌজদারি এলাকায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন 

সন্ধ্যার আলোয় নদীর ধারের পুরো চর সাদা কাশফুলে ঝলমল করছিল। দর্শনার্থীরা তখন ছবি তুলতে ব্যস্ত। কেউ মুঠোফোনে ভিডিও নিচ্ছিলেন, কেউ ফুল ছিঁড়ে নিচ্ছিলেন। ১১ বছর বয়সী মাহিন বাবার কাছে বায়না ধরেছিল কাশফুল ছিঁড়ে দেওয়ার জন্য। বাবা আশিকুর রহমান ফুল হাতে তুলে দিতেই মাহিন খুশিতে আত্মহারা। আশিকুর রহমান বলেন, ‘এই তীরের পরিবেশই মুগ্ধ করার মতো। তার ওপর একসঙ্গে এত কাশফুল সত্যিই মনকে শান্ত করে। ভালো লাগায় পরিবারের সঙ্গে প্রায়ই আসি।’

শহরের ইকবালপুর এলাকা থেকে ঘুরতে এসেছেন সুজন মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘শহরে মানুষের ঘুরতে যাওয়ার জায়গা খুব কম। তাই সবাই চিরচেনা কাশফুল দেখতে নদীর তীরে ভিড় করছে।’ তিনি স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে এসেছেন এবং কাশবনের ভেতরে ঢুকে একসঙ্গে ছবি তুলছিলেন।

ফৌজদারি এলাকার ব্রহ্মপুত্রের এ অংশে আগের মতো প্রবল পানিপ্রবাহ নেই। ফলে নদের তীরে সৃষ্টি হয়েছে বালুচর। ভাদ্র মাসের শেষদিকে কাশফুল ফুটতে শুরু করে, কার্তিক পর্যন্ত থাকে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন 

 জামালপুর সদর উপজেলার সহকারী শিক্ষক জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘যেমনটা ভেবেছিলাম, আসলে তার চেয়ে অনেক সুন্দর। অনেক দূর পর্যন্ত কাশফুল ছড়িয়ে আছে। ফুচকা, চটপটিসহ দোকানও বসেছে। সব মিলিয়ে যেন এক গ্রামীণ মেলা। সত্যিই এক অসাধারণ সময় কাটালাম।’

ফৌজদারি এলাকার বাসিন্দা আসিফ মাহমুদ জানান, এক-দুই বছর ধরে এখানে কাশফুল ফুটছে। বিকেল হলেই বিপুলসংখ্যক মানুষ আসেন। ছবি তুলেন, ভিডিও করেন। ছুটির দিনে ভিড় আরও বেড়ে যায়।

শহরের কম্পপুর এলাকা থেকে এসেছেন দুই তরুণ-তরুণী। তাঁদের ভাষ্য, শুধু কাশফুলের টানেই ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে ঘুরতে এসেছেন। এত কাশফুল একসঙ্গে আগে কখনো দেখেননি। কাশবনে দাঁড়িয়ে অনেক ছবি তুলেছেন তারা। বিকেলটা সত্যিই তাঁদের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

একটি মন্তব্য করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন