[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

আদালতকক্ষে বিচারকের সামনেই সাংবাদিককে মারধর

প্রকাশঃ
অ+ অ-

ঢাকার সিএমএম আদালতের এজলাসকক্ষে আইনজীবীদের মারধরের শিকার সময় টিভির প্রতিবেদক আসিফ হোসাইন। আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার আদালত প্রাঙ্গণ থেকে তোলা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন  

সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাবন্দী সাংবাদিক মনজুরুল আলমের পান্না  জামিন শুনানি চলাকালে মারধরের শিকার হয়েছেন সময় টিভির প্রতিবেদক আসিফ হোসাইন। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের এজলাসকক্ষে সময় টিভির ওই সাংবাদিককে আইনজীবীরা মারধর করেছেন।

ভুক্তভোগী সাংবাদিক ও প্রত্যক্ষদর্শী আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় গ্রেপ্তার বহিষ্কৃত আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল লতিফ সিদ্দিকী ও সাংবাদিক মনজুরুল আলমের (পান্না) জামিন শুনানির দিন ধার্য ছিল আজ। লতিফ সিদ্দিকীকে আদালতে হাজির না করলেও সাংবাদিক মনজুরুল আলমকে কারাগার থেকে আদালতকক্ষে তোলা হয়। এজলাসকক্ষে তখন উপস্থিত ছিলেন বাংলা আউট লুকের নির্বাহী সম্পাদক মুক্তাদির রশিদ রোমিও। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এই সাংবাদিক বলেন, ‘সাংবাদিক মনজুরুল আলম পান্নাকে মাথায় হেলমেট, হাতে হ্যান্ডকাফ ও বুকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরিয়ে পুলিশ বাঁশি বাজিয়ে আদালতে হাজির করে। তখন মনজুরুল আলম পান্নাকে বিধ্বস্ত দেখা যায়। এ সময় মনজুরুল আলম পুলিশের উদ্দেশে বলেন, “আপনারা এমন কেন করছেন, আমি তো আপনাদের শত্রু নই?” এ সময় আমি সাংবাদিক পান্নাকে জিজ্ঞেস করি, ভাই, আপনাকে কি জেলের ভেতরে নির্যাতন করা হয়েছে? সাংবাদিক পান্না উত্তর দেন, “না।”’

সাংবাদিক মুক্তাদির রশিদ বলেন, ‘আমি যখন মনজুরুল আলমের সঙ্গে কথা বলছিলাম, তখন আদালতকক্ষে উপস্থিত আইনজীবী মহিউদ্দিন মাহি আমাকে কোর্ট থেকে বের হয়ে যাওয়ার জন্য ধমকাতে থাকেন। ‌তখন আমি বলি, আদালতকক্ষ থেকে বের করে দেওয়ার ক্ষমতা কেবল বিচারকের আছে। উনি বললে বের হয়ে যাব। ওনাকে বলতে দিন।’

মুক্তাদির রশিদ বলেন, ‘আমি যখন আইনজীবী মহিউদ্দিনকে এ কথা বলি, তিনি আমাকে মারধর করতে উদ্ধত হন।’

এ পর্যায়ে মারধরের শিকার হন জানিয়ে সময় টিভির সাংবাদিক আসিফ হোসাইন বলেন, ‘আমি আইনজীবী মহিউদ্দিন মাহি ভাইকে বলছিলাম, উনি সাংবাদিক। এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গেই আইনজীবী মহিউদ্দিন আমাকে ঘুষি মারেন। তখন আমার হাতে থাকা টেলিভিশনের বুমটি উঁচু করে বিচারকের উদ্দেশে বলতে থাকি, আমাকে মারধর করা হচ্ছে। আমি এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে বেশ কয়েকজন আইনজীবী আমাকে এলোপাতাড়ি কিল–ঘুষি দিতে থাকেন। তখন আমার দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। একপর্যায়ে আদালতকক্ষে উপস্থিত সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) কাইয়ুম হোসেন, মনজুরুল আলমের আইনজীবী ফারজানা ইয়াসমিনসহ অন্য আইনজীবী, উপস্থিত সাংবাদিক ভাইয়েরা আমাকে মারধরের হাত থেকে রক্ষা করেন। আমি এর বিচার চাই।’

সাংবাদিক আসিফ হোসাইনকে মারধর করার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এ কে এম মহিউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘সাংবাদিক মনজুরুল আলম পান্নার জামিন শুনানির সময় আমি অন্য একটি মামলার শুনানির জন্য আদালতকক্ষে উপস্থিত ছিলাম। এ সময় আমি লক্ষ করি, একজন সাংবাদিক মনজুরুল আলম পান্নার সঙ্গে কথা বলছিলেন, ছবিও তুলছিলেন। উনি কথা বলার কারণে আদালতের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছিল। আমি ওই ব্যক্তিকে অনুরোধ করি, আপনি এখন কথা বলেন না। পরে কথা বলেন। তখন সময় টিভির ওই সাংবাদিক আমাকে এবং আরও দু–তিনজন আইনজীবীর উদ্দেশে বলতে থাকেন, আপনারা জানেন, উনি কে? উনি সাংবাদিকদের নেতা। তখন সময় টিভির সাংবাদিকের সঙ্গে কথা–কাটাকাটি হয়েছে, ধাক্কাধাক্কি হয়েছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে সময় টিভির সাংবাদিকের গায়ে হাত তুলিনি।’

আদালতকক্ষে সাংবাদিককে মারধরের ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী। তিনি বলেন, ‘এজলাসকক্ষে শুনানি চলাকালে সময় টিভির সাংবাদিক আসিফকে মারধরের ঘটনার সঙ্গে বিএনপি কিংবা জামায়াতের কোনো আইনজীবী কিংবা প্রসিকিউশন টিমের কোনো আইনজীবী জড়িত নন। যাঁরা সাংবাদিককে মারধর করেছেন, তাঁরা আসামিপক্ষের আইনজীবী। সাংবাদিককে মারধরের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। কারণ, বিচার চলাকালে একজন সাংবাদিককে মারধর করার ঘটনা দুঃখজনক।’

এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) প্রসিকিউশন বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. তারেক জুবায়ের বলেন, ‘সাংবাদিক মনজুরুল আলম পান্নার জামিন শুনানি চলাকালে সময় টিভির যে সাংবাদিককে মারধর করা হয়েছে, তিনি যদি থানায় লিখিত অভিযোগ দেন, তাহলে অবশ্যই মারধরের ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ভুক্তভোগী সাংবাদিক আসিফ হোসাইন বলেন, ‘আমি অনেক দিন ধরে আদালতে রিপোর্টিং করে আসছি। আমি শুধু বলেছিলাম, আপনি যাকে বের হয়ে যেতে বলছেন, উনি একজন সাংবাদিক। শুধু এই কথা বলার পরই আমাকে আইনজীবীরা মারধর করেছেন। আমি বিচার চাই।’

এ ব্যাপারে ঢাকা আইনজীবী সমিতির অ্যাডহক কমিটির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ নজরুল ইসলাম  বলেন, ‘সময় টিভির সাংবাদিককে মারধর করার ঘটনা শোনার পর আমি ওই আদালতে উপস্থিত হই। আমি দুই পক্ষের সঙ্গেই কথা বলেছি। এই মারধরের ঘটনার সঙ্গে বিএনপিপন্থী কোনো আইনজীবী জড়িত নন।’

একটি মন্তব্য করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন