সহকারী শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া এগোচ্ছে না বিধির ফাঁদে
![]() |
শিক্ষার্থীদের পড়াচ্ছেন একজন শিক্ষক | ফাইল ছবি |
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) বলছে দেশে এখন প্রায় ২৬ লাখের বেশি মানুষ বেকার। এর মধ্যে প্রায় ৯ লাখ তরুণ-তরুণী স্নাতক ডিগ্রিধারী; অর্থাৎ ডিগ্রি আছে, অথচ কাজ নেই। এ অবস্থায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি আসবে, এমন আশায় হাজার হাজার শিক্ষিত তরুণ-তরুণী দিন গুনছিলেন। কিন্তু বিধিসংক্রান্ত জটিলতায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ আটকে গেছে। ফলে চাকরিপ্রত্যাশীদের দীর্ঘশ্বাস বাড়ছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় গত ২৮ আগস্ট রাতে ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা, ২০২৫’ প্রজ্ঞাপন জারি করে। এর তিন দিন পর ৩১ আগস্ট আট সদস্যের একটি ‘কেন্দ্রীয় প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ কমিটি’ও গঠন করা হয়। কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে আর কমিটির সদস্যসচিব প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালককে (পলিসি ও অপারেশন)। এর বাইরে কমিটিতে রয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিদ্যালয়), প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (রাজস্ব), উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর মহাপরিচালক, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (বিদ্যালয়), জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় (উপসচিবের নিম্নে নয়) ও সরকারি কর্ম কমিশনের প্রতিনিধি।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়—সংশোধিত বিধিমালায় ত্রুটি ধরা পড়েছে। ফলে নিয়োগ প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ঝুলে রয়েছে। বিধিমালা সংশোধনের ফাইল মন্ত্রণালয়ে টেবিলে ঘুরছে। আর চাকরিপ্রার্থীদের হতাশা বাড়ছে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার প্রায় ১৭ হাজার সহকারী শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। দেশজুড়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকসংকট আছে, তা সবাই জানে। কিন্তু সংকট মেটানোর বদলে বিজ্ঞপ্তিই যদি আটকে যায়, তবে সেই শূন্য পদের দায় কে নেবে? প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, ‘বিধির জালে আটকা পড়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদের নিয়োগ।’
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রসঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু নূর মো. শামসুজ্জামান বলেন, ‘আমরা চাই দ্রুত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে। কিন্তু নতুন বিধিমালায় বেশ কিছু ত্রুটি চিহ্নিত হয়েছে। সেগুলো সংশোধনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। চূড়ান্ত বিধি হাতে পেলেই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে।’
নতুন বিধিমালায় নারীদের জন্য পূর্বনির্ধারিত বিশেষ কোটা বাতিল করা হয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরাসরি নিয়োগযোগ্য ৯৩ শতাংশ পদ মেধাভিত্তিক হবে। বাকি ৭ শতাংশ পদ কোটাভিত্তিক। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য ১ শতাংশ, আর শারীরিক প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের প্রার্থীদের জন্য ১ শতাংশ সংরক্ষিত। তবে কোটা থেকে যোগ্য প্রার্থী না মিললে পদগুলো মেধার ভিত্তিতেই পূরণ হবে।
বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে দেশে স্নাতক ডিগ্রিধারী বেকার ছিল প্রায় চার লাখ। এখন তা প্রায় ৯ লাখ; অর্থাৎ আট বছরে দ্বিগুণ। এ অবস্থায় নতুন করে বিজ্ঞপ্তি আটকে যাওয়ায় অনেক চাকরিপ্রার্থীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায় পড়েছে। খোরশেদ আলম নামের এক চাকরিপ্রত্যাশী বলেন, ‘আমার সরকারি চাকরির বয়স তিন মাস পর শেষ হবে। বিজ্ঞপ্তি দ্রুত প্রকাশ না হলে আমার সরকারি চাকরির আশা শেষ হয়ে যাবে।’
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকসংকট আছে, শিক্ষিত বেকারের সংখ্যাও বাড়ছে। চাকরিপ্রার্থীরা প্রত্যাশা করছেন, প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয় দ্রুত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে আর স্বচ্ছ পরীক্ষা পদ্ধতির মাধ্যমে দ্রুত নিয়োগপ্রক্রিয়া শেষ করবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন