[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট দাবি করা সেই এনায়েত করিমকে মিন্টো রোড থেকে গ্রেপ্তার

প্রকাশঃ
অ+ অ-

এনায়েত করিম চৌধুরী ওরফে মাসুদ করিম | ফাইল ছবি

বিশেষ একটি দেশের গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট দাবি করা এনায়েত করিম চৌধুরী ওরফে মাসুদ করিমকে (৫৫) সন্দেহভাজন হিসেবে আটকের পর ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশ। এই মামলায় তাঁকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল শনিবার সকালে রাজধানীর মিন্টো রোড থেকে তাঁকে আটক করা হয়। তাঁর কাছ থেকে জব্দ করা পাসপোর্টের তথ্য অনুযায়ী, তিনি মার্কিন নাগরিক।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এনায়েত করিম নিজেকে মাসুদ করিম নামে পরিচয় দেন। তিনি নিজেকে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের প্রধান বলে পরিচয় দিয়ে থাকেন। এই পরিচয়ে তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতাদের রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করার স্বপ্ন দেখান। ২০১৮ সালের ভোটর আগেও তিনি একাধিক রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে দেশের বাইরে বৈঠক করেন।

পুলিশ বলছে, গতকাল সকালে এনায়েত করিম চৌধুরী প্রাডো গাড়িতে করে মিন্টো রোড এলাকায় সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করছিলেন। গাড়ি থামিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে ওই এলাকায় ঘোরাঘুরি করার বিষয়ে সদুত্তর দিতে পারেননি। পরে তাঁকে আটক করে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠিয়ে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পাশাপাশি সোমবার রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য করেন।

সংশ্লিষ্ট একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এনায়েত করিম বলেছেন, বর্তমান সরকার পরিবর্তন করে নতুন জাতীয় সরকার গঠনে কাজ করতে তিনি বাংলাদেশে এসেছেন। তাঁর দাবি, তিনি বিশেষ একটি দেশের গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার খুব নাজুক অবস্থায় আছে। সেনাবাহিনীর সঙ্গেও এই সরকারের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। এই সুযোগে বর্তমান সরকারকে পরিবর্তন করতে বাংলাদেশে এসেছেন। সরকারি উচ্চ ও নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলে জানিয়েছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতা ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেছেন।

পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার মাসুদ আলম বলেন, এনায়েত করিমের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করা হতে পারে। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। তাঁকে মূলত গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) আটক করে। পরে রমনা থানার পুলিশের মাধ্যমে আদালতে পাঠানো হয়।

আদালতে জমা দেওয়া পুলিশের প্রতিবেদনে বলা হয়, তিনি ৬ সেপ্টেম্বর সকালে নিউইয়র্ক থেকে কাতার এয়ারওয়েজে করে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসেন। প্রথম দুদিন তিনি সোনারগাঁও হোটেলে ছিলেন। পরের কয়েক দিন গুলশানে ছিলেন। তিনি ১৯৮৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রে যান। ২০০৪ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্ট পান।

এর আগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চার–দলীয় জোট সরকার আমলেও (২০০১–০৬ সাল) একবার এনায়েত করিমকে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তখনো তাঁর বিরুদ্ধে সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্রের কথা বলা হয়েছিল।

‘রাষ্ট্রক্ষমতার স্বপ্ন দেখিয়ে’ প্রতারণার অভিযোগ
২০২১ সালের ২১ মার্চ প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এনায়েত করিম বিএনপিসহ একাধিক দলের বিভিন্ন নেতাকে রাষ্ট্রক্ষমতায় পটপরিবর্তনের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। তখন তিনি তাঁদের কাছে নিজেকে যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রভাবশালী সংস্থার লোক বলে পরিচয় দেন। তখন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কয়েকজন নেতার সঙ্গে এনায়েত করিম ব্যাংকক ও নেপালে একাধিক বৈঠকও করেন।

প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, সে সময় সরকারবিরোধী শিবিরের একটি রাজনৈতিক দলের প্রধান ওই দলের এক নেতার সঙ্গে এনায়েত করিমের পরিচয় করিয়ে দেন। ওই নেতা তৈরি পোশাক ব্যবসায়ী। ওই ব্যবসায়ীকে তখন বলা হয়েছিল, এনায়েত করিম প্রভাবশালী ব্যক্তি। যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর একটি শাখার সঙ্গে তাঁর সখ্য আছে। মার্কিন সেনাবাহিনীর জন্য কিছু নির্দিষ্ট পোশাকের অর্ডার পেতে এনায়েত করিম তাঁকে সহায়তা করতে চান। কিন্তু এর জন্য আগে কারখানাকে তালিকাভুক্ত হতে হয়। জামানত হিসেবে জমা দিতে হয় এক লাখ মার্কিন ডলার। ওই ব্যবসায়ী এত টাকা দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানান। একপর্যায়ে এনায়েত করিম নিজে ৫০ হাজার ডলার দেবেন এবং বাকি ৫০ হাজার ডলার ওই ব্যবসায়ী থেকে নিয়ে তালিকাভুক্ত করানোর প্রস্তাব দেন।

ওই ব্যবসায়ী তখন জানিয়েছিলেন, তিনি ২০১৯ সালের জুলাই মাসে ওই রাজনৈতিক দলের প্রধানকে ৫০ হাজার ডলার সমপরিমাণ ৪৩ লাখ ১০ হাজার টাকা দেন। ওই রাজনৈতিক দলের প্রধান সেই টাকা এনায়েত করিমকে পাঠান। কিন্তু পোশাকের কোনো অর্ডার তিনি পাননি। পরে তিনি টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য রাজনৈতিক দলটির প্রধানকে চাপ দেন। একপর্যায়ে তিন চেকে টাকা ফেরত দেন দলটির প্রধান। এ নিয়ে তিক্ততায় ওই ব্যবসায়ী রাজনৈতিক দলটি ছেড়ে দেন। 

Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন