পাহাড়ি ঢলে শেরপুরে বিপর্যয়, প্রাণ গেল দুই জনের
![]() |
পাহাড়ি ঢলে ঝিনাইগাতী উপজেলার মহারশি নদীর দুটি স্থানে ১৫০মিটার বাঁধ ভেঙে যায়। ওই অংশ দিয়ে পানি প্রবেশ করে রোপা আমন প্লাবিত হয় । আজ শুক্রবার সকালে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে শেরপুরের ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলায় ফসলি জমি ও ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৬৫০ হেক্টর রোপা আমন সম্পূর্ণ নিমজ্জিত।
উপজেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড, কৃষি অফিস ও এলাকাবাসীর সূত্রে জানা গেছে, ঝিনাইগাতী উপজেলার মহারশি নদের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের একাধিক স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। খইলকুড়া এলাকায় ১০০ মিটার এবং দীঘিরপাড়ে ৫০ মিটার বাঁধ ভেঙে লোকালয় ও ফসলি জমিতে পানি ঢুকে পড়ে। এ কারণে ১ হাজার ৫৬৫ হেক্টর জমি প্লাবিত হয়। এর মধ্যে ৬৫০ হেক্টর সম্পূর্ণ ও ৯১৫ হেক্টর আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, আজ শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত শেরপুর জেলার ভোগাই, চেল্লাখালী ও পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ–নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে প্রবাহিত হচ্ছিল। ভোগাই নদের পানি বিপৎসীমার নিচে ৯৯ সেন্টিমিটার এবং চেল্লাখালী নদীর পানি ৬১ সেন্টিমিটার নিচে ছিল। গত ২৪ ঘণ্টায় শেরপুরে মাত্র ১ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।
পাহাড়ি ঢলে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। নালিতাবাড়ীতে ১০ বছর বয়সী হুমায়ুন লাকড়ি তুলতে গিয়ে নদীতে ভেসে যায়। রাত ৯টার দিকে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়। ঝিনাইগাতীতে ১৭ বছর বয়সী ইসমাইল গাছ ধরতে গিয়ে নদীতে ভেসে যায়। আজ তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়।
ঝিনাইগাতীর খইলকুড়া ও দীঘিরপাড় এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বাঁধ ভেঙে নদীর পানি ঘরবাড়ি ও জমিতে ঢুকে পড়েছে। এ কারণে বহু পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্থানীয় লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। জীবিকা ও সম্পদের বড় ক্ষতি হওয়ায় অনেকে সহায়তার অপেক্ষায় আছেন।
খৈলকুড়া কৃষক করিম মিয়া (৫২) বলেন, ‘বাঁধ ভাইঙ্গা নদীর পানি আমগর ফসলের জমি ও ঘরবাড়িত ডুইকা পড়ছে। সারা বছরের পরিশ্রমের ফসল পানিতে ভাইসা গেছে। অহন কেমনে চলমু, বুঝতাছি না। আমরা সরকারের সহযোগিতা চাই।’ ক্ষতিগ্রস্ত পূর্ব খৈলকুড়া গ্রামের সাত্তার মিয়া (৬৫) বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ, কাজ কইরা খাই। প্রতিবছরই পাহাড়ি ঢলে আমগর বাড়িঘর ভাঙে। হঠাৎ কইরা পানি আয়ুনে কোনো রকমে খাট-শোকেজডা বাইর করেছি, আর কিছুই তুলবার পাইছি না। বাঁধটা যদি আগেই ঠিক করত, তাইলে আমগর অহন ক্ষতি হইত না। অহন কেডা দিব আমগরে ক্ষতিপূরণ?’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ফরহাদ হোসেন বলেন, পাহাড়ি ঢলে সোমেশ্বরী ও মহারশি নদের পাশের কৃষিজমি তলিয়ে গেছে। ৬৫০ হেক্টর রোপা আমন সম্পূর্ণ নিমজ্জিত, ৯১৫ হেক্টর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত এবং ৮৬ হেক্টর সবজিখেত পানির নিচে আছে। তবে পানি দ্রুত নেমে গেলে ক্ষতি কিছুটা কম হতে পারে।
ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আশরাফুল আলম বলেন, কয়েকটি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। দুর্গত পরিবারগুলোকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দ্রুত বাঁধ মেরামতের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বলা হয়েছে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন