[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

দেশে বছরে ৪০০ কোটি টাকার বিড়ালের খাবার আমদানি হচ্ছে

প্রকাশঃ
অ+ অ-

বিদেশ থেকে আমদানি করা কুকুর-বিড়ালের খাবার সাজিয়ে রাখা হয়েছে দোকানে। সম্প্রতি 
চট্টগ্রাম নগরের দুই নম্বর গেট এলাকার একটি দোকানে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন  

তিন বছর আগে রাজধানী ঢাকার কাঁটাবন থেকে দেশি-বিদেশি মিশ্র জাতের একটি বিড়ালছানা কিনেছিলেন ব্যবসায়ী কাজী ফারুকুল ইসলাম। প্রথমে তাঁর স্ত্রী কিছুটা এতে বিরক্ত হলেও এখন ‘নেকো’ নামে সেই বিড়ালের সবচেয়ে বেশি যত্ন নেন তিনিই। প্রাণীটির জন্য মাসে দুই কেজি ক্যাট ফুডের (বিড়ালের জন্য প্রক্রিয়াজাত খাবার) পেছনে ব্যয় হয় হাজারখানেক টাকা। সেই সঙ্গে কাঁচা মাছ আর সেদ্ধ মুরগি মিলিয়ে মাসে বিড়ালটির পেছনে খাবারের ব্যয় দাঁড়ায় প্রায় তিন হাজার টাকা। তবে এমন কিছু জাতের বিড়াল আছে, যেগুলোকে তিন বেলাই ক্যাট ফুড খাওয়াতে হয়।

কাজী ফারুকুল ইসলাম বলেন, ‘খিদে পেলে মিষ্টি সুরে ডাকা শুরু করে নেকো। লেজ খাড়া করে গা ঘেঁষে চক্কর দিতে থাকে। তবে রাগ করে কেউ ধমক দিলে কাছে আসে না। বাসার সবাই নেকোকে খুব আদর করে।’

ফারুকুলের মতো ঢাকার অনেকেই শখ করে বিড়াল পুষছেন। শুধু ঢাকায় নয়, সারা দেশেই বিড়াল পোষার প্রবণতা বাড়ছে। দেশি বিড়ালের পাশাপাশি নানা জাতের বিদেশি বিড়াল রয়েছে এ তালিকায়। এসব বিড়ালের জন্য বিভিন্ন ধরনের প্যাকেটজাত খাবার বিক্রি হচ্ছে দোকানে।

কুমিল্লা সদরের কালিয়াজুরি এলাকার আরিফুল ইসলাম দুই বছর ধরে ‘কুসুম’ ও ‘কুট্টুস’ নামে দুটি বিড়াল পোষেন। প্রাণী দুটিকে টাকি মাছ ও ভাত খাওয়ানো হয়। তবে মাঝেমধ্যে ক্যাট ফুডও দেওয়া হয়। আরিফুল জানান, তাঁর এলাকাতেই পশুপাখির খাবারের দোকান আছে।

খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, দেশে এরই মধ্যে ক্যাট ফুড তথা বিড়ালের খাবারের ৫০০ কোটি টাকার বাজার গড়ে উঠেছে। এতে দেশীয় খাবারের হিস্যা ১০০ কোটি টাকার মতো। বাকি প্রায় ৪০০ কোটি টাকার খাবার বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত কয়েক বছরে, বিশেষ করে করোনার পর থেকে বিড়াল পোষার প্রবণতা বেড়েছে। এতে খাবারের চাহিদাও বেড়েছে। তবে দেশে এখনো বিড়ালের জন্য প্রক্রিয়াজাত খাবার সেভাবে খুব একটা তৈরি হচ্ছে না। সে জন্য এ ধরনের খাবার আমদানি করতে হয়। গত বছর দেশে বিড়ালের খাবার তৈরির প্রথম কারখানা চালু হয়েছে।

আমদানি ও দরদাম
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশে মোট বিড়ালের খাবার আমদানির পরিমাণ ছিল ৩২ হাজার ১৫৬ টন। এর মধ্যে চীন থেকেই সর্বোচ্চ ১৭ হাজার ৭৩৮ টন খাবার এসেছে। থাইল্যান্ড থেকে ৭ হাজার ৪১৮ টন এবং তুরস্ক থেকে ৬ হাজার ৭৪০ টন খাবার আমদানি হয়েছে। এ ছাড়া ফ্রান্স থেকে ১২০ টন এবং ভারত থেকে এসেছে ১৪০ টন। সব মিলিয়ে গত অর্থবছরে আমদানি হয়েছে মোট ৩ কোটি ২৩ লাখ মার্কিন ডলারের খাবার। দেশীয় মুদ্রায় এই খাতে আমদানি ব্যয় দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩৯৪ কোটি ১২ লাখ টাকা (প্রতি ডলার ১২২ টাকা ধরে)।

মাঝারি মানের ক্যাট ফুড প্রতি কেজি বিক্রি হয় ৫০০ থেকে ৭০০ টাকায়। এই শ্রেণিতে রয়েছে মেও, ক্যাটি বস, ক্যাপ্টেন, জঙ্গল, পাওপাও ইত্যাদি। কমের মধ্যে স্মার্ট হার্টের দাম পড়ে ৩০০ টাকা কেজি। মেও ও স্মার্ট হার্ট বেশি বিক্রি হয় বলে জানান বিক্রেতারা।

যেখানে পাওয়া যায়
রাজধানীর কাঁটাবনে রয়েছে বিড়াল ও পাখির খাবারের পুরোনো বাজার। সেখানে ৩০টির বেশি দোকান আছে। তবে এখন মোহাম্মদপুর, মিরপুর, বনশ্রী, ধানমন্ডি, গুলশান, বনানী, উত্তরাসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পশুপাখির খাবার পাওয়া যায়। সারা দেশে জেলা পর্যায়ে এমন অনেক দোকান গড়ে উঠছে।

রাজধানীর খিলগাঁও-মাদারটেক এলাকা থেকে কাঁটাবনে বিড়ালের খাবার কিনতে আসা বাবুল খান জানান, তিনি তিন কেজির ক্যাপ্টেন ক্যাট ফুড কিনেছেন ২ হাজার ১৫০ টাকায়। তাঁর বাসায় তিনটি বিড়াল আছে। সেগুলো তিন বেলাই ক্যাট ফুড খায়। মাসে দুই প্যাকেট খাবার লাগে।

কাঁটাবনেই মঞ্জুর হোসেন নামের ধানমন্ডি থেকে আসা আরেক ক্রেতার সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘আমার একটি বিড়াল আছে। সেটির জন্য আড়াই হাজার টাকায় সাত কেজির এক প্যাকেট খাবার নিলে দুই মাস যায়।’

বিক্রেতারা বলছেন, বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে বিক্রি কিছুটা কম। কাঁটাবনের পেটস প্রভিশনের বিক্রেতা মো. মহিউদ্দিন বলেন, এখন মানুষের অর্থিক অবস্থা ভালো নয়, তাই বিক্রি কম।

একসময় কুকুরের খাবারের বাজার থাকলেও এখন বিড়ালের খাবারের বাজার বড়। বিক্রিও বেশি। কাঁটাবন অ্যাকুয়া অ্যান্ড পেটস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন বলেন, এখন জেলায় জেলায় পশুর খাবারের দোকান হয়েছে। একসময় মানুষ কুকুর পালত। এখন বিড়াল পালন বেড়েছে। কারণ, বিড়ালে ঝামেলা কম, বাসার ভেতর রাখা যায়।

ক্যাট ফুড উৎপাদনে আগ্রহ বাড়ছে
দেশের প্রথম ক্যাট ফুড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান চঙ্ক। ২০২৪ সালে উৎপাদনে আসা এ প্রতিষ্ঠানের তৈরি দেড় কেজি ওজনের খাবারের প্যাকেট বিক্রি হয় ৫০০ টাকায়। প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তা মো. আসিফ খান বলেন, ‘আমাদের প্রতি কেজি খাবারের দাম পড়ে ৩৩২ টাকা, যা আমদানি করা খাবারের চেয়ে অনেক কম। আমরা মানও ভালো রাখছি। তাই এক বছরে ভালো সাড়া পেয়েছি।’

তবে এখনো ক্যাট ফুডের চাহিদার প্রায় পুরোটাই আমদানিনির্ভর। দেশে ২০টির মতো প্রতিষ্ঠান বিদেশ থেকে ক্যাট ফুড আমদানি করে থাকে। এর একটি হলো বার্ড প্যালেস। প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী বাবুল হাওলাদার বলেন, ‘করোনার সময় মানুষ বাসায় আবদ্ধ থেকে পোষা প্রাণিপ্রেমী হয়ে গেছেন। তাই করোনার পর থেকে হুট করে এই বাজার বড় হয়ে যায়।’ তবে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিত্তবান শ্রেণির গ্রাহক কমে গেছে বলে জানান তিনি।

জানতে চাইলে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আবু সুফিয়ান বলেন, ‘পোষা প্রাণীর খাবারের প্রতি আমাদের হয়তো সেভাবে মনোযোগ ছিল না, তাই এটা আমদানিনির্ভর হয়ে পড়েছে। এখন চাহিদা বাড়ছে। ফলে স্থানীয়ভাবে উৎপাদনে অনেকে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।’

Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন