কাজ শুরু না হওয়া আগেই ব্যয় বেড়ে তিন গুণ
![]() |
| ইস্টার্ন রিফাইনারী লিমিটেড | ছবি: সংগৃহীত |
পরিশোধন ক্ষমতা বাড়ানো-দেশীয় জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ১৫ বছর আগে ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের (ইআরএল) ইউনিট-২ প্রকল্পের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তবে প্রকল্পটি বারবার সংশোধিত হওয়ায় ব্যয় ১৩ হাজার কোটি টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪২ হাজার কোটি টাকায়।
প্রকল্প বাস্তবায়নে ভারতীয় একটি প্রতিষ্ঠানকে পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। এরই মধ্যে ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে, কিন্তু কাজের কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, প্রকল্পটি আগেই বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ আরও বেশি অপরিশোধিত তেল আমদানি করতে পারতো এবং তা শোধন করে দেশীয়ভাবে ডিজেল উৎপাদন সম্ভব হতো। এতে বৈদেশিক মুদ্রাও বাঁচত এবং পেট্রল, অকটেন ও এলপিজির স্থানীয় উৎপাদন বাড়ানো যেত।
ইআরএল ও প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, ২০১০ সালে দ্বিতীয় ইউনিট নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। শুরুতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৩ হাজার কোটি টাকা। পরে সংশোধনের মাধ্যমে তা বেড়ে ১৯ হাজার ৩৭২ কোটি, আরও একবার পরিবর্তনের পর ২৩ হাজার কোটি এবং সর্বশেষ ৪২ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। এখন এটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের উপসচিব আসমা আরা বেগম নিশ্চিত করেছেন, প্রকল্পটি অনেকবার কাটাছেঁড়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘প্রকল্প ব্যয়ের ৪০ শতাংশ বহন করবে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) এবং ৬০ শতাংশ সরকার দেবে। এ জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমতির জন্য চিঠি পাঠানো হয়েছে।’
বিপিসি সূত্র জানায়, ইউনিট-২ প্রকল্পের প্রকল্প ব্যবস্থাপনা পরামর্শক (পিএমসি) হিসেবে নিয়োগ পেয়েছে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্ডিয়া লিমিটেড (ইআইএল)। ২০১৬ সালের ১৯ এপ্রিল বিপিসি তাদের সঙ্গে চুক্তি করে। চুক্তি সই হয় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর উপস্থিতিতে। তারা প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করেন।
১৯৬৬ সালে চট্টগ্রামের গুপ্তখাল এলাকায় ইস্টার্ন রিফাইনারি প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৯৬৮ সালের ৭ মে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করে। এরপর দেশের তেল শোধনাগারের পরিশোধন ক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ইস্টার্ন রিফাইনারি ১৫ লাখ ৩৫ হাজার টন অপরিশোধিত তেল পরিশোধন করেছে। বর্তমানে পর্যাপ্ত সংরক্ষণাগার না থাকায় নিয়মিত ডিজেল আমদানি বেড়ে যাচ্ছে।
ইস্টার্ন রিফাইনারির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও দ্বিতীয় ইউনিট প্রকল্প পরিচালক মো. শরীফ হাসনাত বলেন, ‘প্রকল্পটি বহুবার সংশোধিত হয়েছে। এবার সরকার বাস্তবায়নে আন্তরিক। পিএমসি হিসেবে নিয়োগ পাওয়া ভারতীয় প্রতিষ্ঠান চুক্তি শেষ করে তাদের পাওনা নিয়ে চলে গেছে।’
ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্ডিয়া লিমিটেডের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চেষ্টা করা হলেও কোনো প্রতিনিধি পাওয়া যায়নি। ওয়েবসাইটও বন্ধ।
বিপিসির মহাব্যবস্থাপক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) মো. আমীর মাসুদ বলেন, ‘এখন প্রকল্পের তদারকি মূলত ইআরএল ও মন্ত্রণালয় থেকে হয়। আমরা সরাসরি দেখাশোনা করি না।’
ইআরএল সূত্র জানিয়েছে, ইউনিট-২ চালু হলে অপরিশোধিত তেল পরিশোধন ক্ষমতা তিনগুণ বেড়ে বছরে ৪৫ লাখ টনে পৌঁছাবে। এতে দেশীয় চাহিদার ৭৫ শতাংশ মেটানো সম্ভব হবে। ফিনিশড প্রোডাক্ট হিসেবে উৎপাদিত হবে এলপিজি, ইউরো-৫ গ্যাসোলিন, জেট এ-১, ডিজেল ইউরো-৫, গ্রুপ-৩ বেজ অয়েল, ফুয়েল অয়েল ও বিটুমিন।

Comments
Comments