রাজশাহীতে পাইপলাইন বসাতে গাছ কাটা শুরু
![]()  | 
| সড়কের ছায়াঢাকা পরিবেশ আর থাকছে না। সড়কের এক পাশের গাছ এভাবে কেটে ফেলা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজশাহীর পবা উপজেলার হরিপুর এলাকায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন | 
রাজশাহী নগরে পানি সরবরাহের জন্য গোদাগাড়ীর পদ্মা নদী থেকে পানি আনার প্রকল্প হাতে নিয়েছে ওয়াসা। ৪ হাজার ৬২ কোটি টাকার এ প্রকল্পের আওতায় ২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ট্রান্সমিশন পাইপলাইন বসানো হচ্ছে। তবে এ কারণে রাজশাহী-গোদাগাড়ী সড়কের দুই পাশের মোট ৩০৬টি গাছ কাটা হচ্ছে।
এই সড়কের গাছগুলো ছাতার মতো ছায়া দিত। এখন বিশেষ করে উত্তর পাশের প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকায় গাছ ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে।
রাজশাহী ওয়াসা সূত্রে জানা যায়, পাইপলাইন বসানোর জন্য কোনো জমি অধিগ্রহণের বরাদ্দ রাখা হয়নি। সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের জমি যেখানে খালি আছে, সেখান দিয়েই পাইপলাইন বসানো হচ্ছে। জায়গা না থাকলেই কাটা হচ্ছে গাছ।
সওজ সূত্রে জানা গেছে, কাশিয়াডাঙ্গা থেকে নতুন কসবা খোকার বাড়ি, কসবা গোরস্থান হয়ে এইচবিবি রোড পর্যন্ত রাস্তার উত্তর পাশের কড়ই, মেহগনি ও আকাশমণিসহ বিভিন্ন প্রজাতির ৩০৬টি গাছ নিলামে বিক্রি করা হয়েছে। নিলাম মূল্য দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। এর মধ্যে শালবাগান সড়কের ১ থেকে ১১২ নম্বর পর্যন্ত গাছও রয়েছে।
২৫ সেপ্টেম্বর পবা উপজেলার হরিপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার উত্তর পাশের গাছগুলো করাত দিয়ে কাটা হচ্ছে। পাঁচটি লটের মধ্যে এটি একটি লট।
রাজশাহী পরিবেশ ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক মো. নাজমুল হোসেন বলেন, ‘এখন পর্যন্ত একটি লটের গাছ কাটা হয়েছে। আমরা চাই, বাকি গাছগুলো বাঁচানো হোক। প্রয়োজনে জমি অধিগ্রহণ করা হোক। চার হাজার কোটি টাকার প্রকল্পে সামান্য জমির জন্য কেন গাছ কাটা হবে? যদি গাছ বাঁচানো না হয়, আমরা আন্দোলনে নামব।’
স্থানীয় শিক্ষক ও কবি এস এম তিতুমীর বলেন, ‘গোদাগাড়ী এলাকা এমনিতেই ক্ষরাপ্রবণ ও রুক্ষ আবহাওয়ার। এই গাছগুলো পথচারীদের শীতল ছায়া দিত। এখন রাস্তার এক পাশ ফাঁকা হয়ে মরুভূমির মতো দেখাচ্ছে। আমাদের সব উন্নয়নের বাজেট থাকে, কিন্তু প্রকৃতি রক্ষার বরাদ্দ থাকে না। এখনো যে গাছগুলো আছে, সেগুলো রক্ষা করা জরুরি।’
রাজশাহী ওয়াসার সহকারী প্রকৌশলী ফারুক আহমেদ বলেন, ‘পাইপ বসাতে পাঁচ মিটার জায়গা ও ভেহিকেল ঢোকাতে মোট ১১ মিটার জায়গার দরকার। সওজের রাস্তায় সব জায়গায় সমান ফাঁকা জায়গা নেই। পাইপলাইন তো আর এপার–ওপার নেওয়া যায় না। তাই রাস্তার উত্তর পাশ দিয়েই বসানো হচ্ছে।’
রাজশাহী সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী বৃক্ষপালনবিদ মীর মুকুট মো. আবু সাঈদ জানান, 'পশ্চিম দিকে এমন জায়গা রয়েছে যেখানে একটি গাছ কাটা হলেও পাইপলাইন বসানো সম্ভব ছিল। কিন্তু প্রকল্পের চলাচল পথে যেখানে রাস্তার পাশে জমি কম পড়েছে, সেখানে গাছ কাটার প্রয়োজন পড়েছে।'
গাছগুলো বাঁচানোর জন্য সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরের সময় জমি অধিগ্রহণের দাবি করা হয়েছিল কি না, তা জানতে চাইলে রাজশাহী সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী সানজিদা আফরিন বলেন, ‘মন্ত্রণালয় পর্যায়ে এমওইউ স্বাক্ষর হয়। এটি হয়েছে আমি রাজশাহীতে যোগদানের আগে। তাই এ বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।’ 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন