নাটোরে পাট দিয়ে দুর্গাপ্রতিমা, দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন দর্শনার্থীরা
![]() |
নাটোর শহরের লালবাজার কদমতলার রবি সূতম সংঘ পাটের প্রতিমা বানানোর উদ্যোগ নিয়েছে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
ধান দিয়ে দুর্গাপ্রতিমা বানিয়ে সাড়া ফেলেছিলেন নাটোরের প্রতিমাশিল্পী বিশ্বজিৎ পাল। এবার তিনি সোনালি আঁশ পাট দিয়ে গড়েছেন দুর্গামূর্তি। এই অভিনব উদ্যোগে শহরে শুরু হয়েছে আলোচনার ঝড়।
নাটোর শহরের লালবাজার কদমতলার রবি সূতম সংঘের উদ্যোগে তৈরি হয়েছে এই প্রতিমা। ষষ্ঠী থেকেই প্রতিমা দেখতে ভিড় জমছে ভক্ত–দর্শনার্থীদের।
সংঘের সাধারণ সম্পাদক পার্থ রায় জানান, 'প্রতিবছর তাঁদের মণ্ডপে থাকে কিছু ভিন্নতার ছাপ। এবারও ছয় মাস আগে থেকেই বিশেষ পরিকল্পনা নেওয়া হয়। নানা প্রস্তাবের মধ্যে পাট দিয়ে প্রতিমা তৈরির ভাবনাটিই গ্রহণ করা হয়। এতে সায় দেন প্রতিমাশিল্পী বিশ্বজিৎ পাল।'
আয়োজক সুত্রে জানা গেছে, দুই মাস আগে কাঠ, বাঁশ ও মাটি দিয়ে প্রতিমার কাঠামো গড়েন তিনি। এরপর উজ্জ্বল সোনালি আঁশের প্রায় ২০ কেজি পাট ব্যবহার করে প্রতিমার অবয়ব ফুটিয়ে তোলেন। শাড়ি, অলংকারসহ প্রতিমার সাজসজ্জাতেও ব্যবহার হয়েছে পাটের সূক্ষ্ম আঁশ। শনিবার রাত পর্যন্ত সাজসজ্জার কাজ চলে। রোববার ষষ্ঠীর দিন প্রতিমা মণ্ডপে স্থাপন করা হয়। দুর্গার পাশাপাশি লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ, সিংহ ও অসুরকেও একইভাবে সাজানো হয়েছে।
ষষ্ঠীর দিন প্রতিমা দেখতে আসেন সদর উপজেলার শংকরভাগ গ্রামের ৬৫ বছরের প্রদীপ চক্রবর্তী। তিনি বলেন, 'জীবনে বহু প্রতিমা দেখেছেন, তবে পাটের আঁশে মোড়া প্রতিমা এই প্রথম। নতুনত্ব দেখে খুশি হয়ে সপ্তমীর দিন নাতি–নাতনিদের নিয়েও আসবেন বলে জানান তিনি।'
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া থেকে আসা অঞ্জলি রানী বলেন, 'প্রতিবছর এই মণ্ডপে নতুন কিছু দেখতে আসেন তিনি। এবারও ভিড় এড়াতে ষষ্ঠীর দিন এসেছেন। কাছে গিয়ে প্রতিমা দেখে তাঁর মনে হয়েছে—‘অসাধারণ’।
মণ্ডপের পাশেই প্রতিমাশিল্পী বিশ্বজিৎ পালের বাড়ি। তিনি জানান, 'তাঁদের পরিবার বংশপরম্পরায় প্রতিমা গড়ার সঙ্গে যুক্ত। গত বছর ধানের প্রতিমা বানিয়ে দেশ–বিদেশে প্রশংসা পেয়েছিলেন। এবার পাট দিয়ে কাজের প্রস্তাব আসায় চ্যালেঞ্জ জেনেও হাত দিয়েছেন কাজে। দুই মাস নিরলস পরিশ্রমের পর শেষ হয়েছে প্রতিমার কাজ।'
তিনি বলেন, ‘'প্রথমে বাঁশ–কাঠের সঙ্গে মাটি দিয়ে আকৃতি বানাতে হয়। পরে শুকনো প্রতিমাকে পাটে মোড়ানো হয়। এরপর রঙতুলির আঁচড়ে প্রতিমার চোখ–মুখ ও আদিরূপ ফুটিয়ে তোলা হয়। কাজটা বেশ কঠিন, তবে ভক্তরা মুগ্ধ হলে কষ্ট সার্থক হবে।'
এ বছর নাটোর জেলায় ৩৬৮টি মন্দির ও মণ্ডপে দুর্গাপূজা হচ্ছে। জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি খগেন্দ্রনাথ রায় জানান, গতবারের চেয়ে এবার ১৪টি পূজা বেশি। নিরাপত্তার স্বার্থে প্রতিটি মণ্ডপে বসানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন