 |
| নার্স | প্রতীকী ছবি |
দেশে স্বাস্থ্যসেবা খাতে জনবল ঘাটতির সমস্যা নতুন নয়। দীর্ঘদিন ধরেই সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিকসহ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলো সীমিত সংখ্যক কর্মী নিয়ে কার্যক্রম চালাচ্ছে। ডাক্তার, নার্স, ধাত্রী (মিডওয়াইফ) এবং অন্যান্য সহায়ক কাজে লোকবল কম। তবে সবচেয়ে প্রকট ঘাটতি দেখা যায় নার্সদের ক্ষেত্রে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মানদণ্ড অনুযায়ী, দেশে প্রয়োজনীয় নার্সের তুলনায় বর্তমানে আছেন মাত্র ১৮ শতাংশ। অর্থাৎ ঘাটতি রয়ে গেছে প্রায় ৮২ শতাংশ। অথচ গত দেড় দশকে নার্সিং কলেজ ও ইনস্টিটিউটের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৪২১ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ‘বাংলাদেশ হেলথ ওয়ার্কফোর্স স্ট্র্যাটেজি ২০২৪’-এর তথ্যে দেখা যায়, ২০১০ সালে দেশের নার্সিং কলেজ ও ইনস্টিটিউটের সংখ্যা ছিল ৮৭টি। ২০১৬ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ২২১, ২০২০ সালে ৩৯৭ এবং চলতি বছর ৪৫৩টি। এর মধ্যে ৭০টি সরকারি এবং ৩৮৩টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। প্রতি বছর ৩৬ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হচ্ছে।
ডব্লিউএইচওর অনুযায়ী, একজন চিকিৎসকের সঙ্গে তিনজন নার্স কাজ করলে সেবার মান বজায় থাকে। দেশের বর্তমান জনসংখ্যার ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় নার্সের সংখ্যা ৩ লাখ ১০ হাজার। কিন্তু বাস্তবে কর্মরত আছেন মাত্র ৫৬ হাজার।
বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব আসাদুজ্জামান জুয়েল বলেন, 'নার্সিং ইনস্টিটিউট ও কলেজের সংখ্যা বেড়েছে, কিন্তু মান নিয়ন্ত্রণে ঘাটতি রয়েছে। বিশেষ করে ঢাকার বাইরে জেলা পর্যায়ে কিছু প্রতিষ্ঠান মানদণ্ড বজায় রাখছে না। আমরা সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বিষয়টি নিয়েছি এবং পদক্ষেপ আশা করছি।'
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নার্স সংকটের কারণে চিকিৎসাসেবার মান কম। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বেড়েছে, কিন্তু শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ পর্যাপ্ত নয়। বছরে ৩৬ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হলেও বেশি সংখ্যাই বেকার থাকে। যারা নিয়োগ পাচ্ছে, তারা কম বেতন ও দক্ষতার অভাবে প্রাইভেট হাসপাতালে কাজ করতে অনিচ্ছুক। সরকারি পদও অনেকখানি ফাঁকা।
ডব্লিউএফএমই ও ডব্লিউএইচওর সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক বলেন, 'সরকারকে প্রাথমিকভাবে জানতে হবে বর্তমানে কতজন নার্স প্রয়োজন এবং ভবিষ্যতে কত প্রয়োজন হবে। বিশেষায়িত ক্ষেত্রে কোথায় কতজন দরকার, সে পরিকল্পনা থাকা জরুরি। এছাড়া প্রতি বছর যে প্রতিষ্ঠানগুলোতে নার্স তৈরি হচ্ছে, তাদের প্রশিক্ষণ পর্যাপ্ত কিনা তদারকি জরুরি। পাস করার আগে পরীক্ষা ও রেজিস্ট্রেশন সিস্টেম শক্তিশালী করতে হবে।'
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা মেডিকেল কলেজে কর্মরত এক নার্স বলেন, 'আমাদের কাজের চাপ অতিরিক্ত। ছয়জন রোগীর দায়িত্ব থাকলেও অনেক সময় ৫০ জনকে সেবা দিতে হয়। এতে রোগীর সেবা ও সন্তুষ্টি দুটোই কমে যায়।'
নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) মো. মোমেন উদ্দিন জানান, 'সর্বশেষ সাড়ে তিন হাজার নার্স নিয়োগ হয়েছে। আরও সাড়ে তিন হাজারের নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে। সব ঘাটতি একবারে পূরণ সম্ভব নয়। সরকারি পর্যায়ে পদ শূন্য থাকলেও আমরা তা পূরণের চেষ্টা চালাচ্ছি।'
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন