ত্রিশালে লাল–সাদা শাপলার খুশির ঢেউ, পর্যটকরা ভাসছেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে
![]() |
| পানিতে নেমে লাল শাপলা তুলছেন কয়েকজন পর্যটক | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের চেচুয়া ও গলহর বিল প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের এক অনন্য ভান্ডার। বর্ষার সময়ে এই বিলে পানির সঙ্গে লাল শাপলার রঙ ছড়িয়ে পড়ে চারপাশে। মাঝে মাঝে দেখা যায় সাদা ও বেগুনি শাপলার সমাহার, যা দর্শনার্থীদের চোখকে আরও মুগ্ধ করে।
দর্শনার্থীরা প্রতিদিনই এখানে ছুটে আসেন। শাপলার স্পর্শ নেওয়া, পানিতে নেমে ছবি তোলা বা নৌকায় ভেসে ফুলের রাজ্যে ঘুরে বেড়ানো—সব মিলিয়ে তারা উপভোগ করছেন ভিন্ন ধরনের আনন্দ। তবে অতিরিক্ত ফুল ছেঁড়া ও ধ্বংসের ফলে বিলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। স্থানীয় সচেতনরা সেজন্য নিয়ন্ত্রণ আরোপের দাবি তুলেছেন।
![]() |
| চেচুয়া ও গলহর বিলে পর্যটকদের ভিড় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
শাপলার সৌন্দর্য উপভোগ করতে গিয়ে দর্শনার্থীদের কিছু কষ্টও সহ্য করতে হয়। কাদামাখা পথ পেরোতে হয় অনেক দূর, আবার ফুল দেখতে পানিতে নেমে পড়েন অনেকে। জামাকাপড় ভিজে গেলেও প্রকৃতির টানে কেউ হাল ছাড়েন না। নৌকা ভাড়া নিয়ে ক্ষোভও দেখা দেয় কিছু পর্যটকের মধ্যে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাফিজ মাহমুদ সাদিক বলেন, 'ফুলের সৌন্দর্য আমার কাছে সব সময়ই মুগ্ধকর। এত কাছাকাছি এত বিশাল শাপলার সমাহার দেখে আমি সত্যিই অভিভূত। মানুষকে একসঙ্গে এই প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করতে দেখে ভালো লাগে।'
কয়েক বছর আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক গুজবের কারণে চেচুয়া বিল ব্যাপক পরিচিতি পায়। শোনা যায়, এই বিলে রোগ নিরাময়ের ক্ষমতা আছে। খবর বিশ্বাস করে হাজারো মানুষ ভিড় জমায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে উপজেলা প্রশাসন মাইকিং, প্রচারণা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পর্যন্ত নামাতে হয়। পরে সব কিছু স্বাভাবিক হয়।
বর্তমানে চেচুয়া–গলহর বিল কেবল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্যই আকর্ষণীয়। যদিও স্থানীয়ভাবে শাপলা তোলা নিষিদ্ধ, অনেকেই তা মানছেন না। এলাকাবাসী দর্শনার্থীদের সহযোগিতা করছেন। ফলে এই স্থান ধীরে ধীরে সম্ভাবনাময় পর্যটনকেন্দ্রে পরিণত হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা কাজী মো. আনিছুর রহমান বলেন, 'আমরা চাই এই এলাকা একটি স্থায়ী পর্যটনকেন্দ্রে রূপান্তরিত হোক। এজন্য ফুল সংরক্ষণ, অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ন্ত্রণ এবং পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। প্রশাসনের সহযোগিতা থাকলে কাজটি সহজ হবে।'
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল বাকিউল বারি বলেন, 'চেচুয়ার শাপলা বিল এখন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তবে এই জমি সম্পূর্ণ ব্যক্তিমালিকানাধীন হওয়ায় সরকারিভাবে পর্যটনকেন্দ্র তৈরি করা সম্ভব নয়। তবু দর্শনার্থীর নিরাপত্তা ও ফুল সংরক্ষণে গ্রাম পুলিশ মোতায়েনের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।'


Comments
Comments