বিএসসি–ডিপ্লোমা দ্বন্দ্বে সরকারের নতুন কমিটি মানছে না প্রকৌশল শিক্ষার্থীরা
![]() |
বিএসসি প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম ‘প্রকৌশলী অধিকার আন্দোলনের’ সংবাদ সম্মেলন | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
প্রকৌশল পেশায় বিএসসি ডিগ্রিধারী ও ডিপ্লোমাধারী ব্যক্তিদের পেশাগত দাবির যৌক্তিকতা পরীক্ষা–নিরীক্ষা করে সুপারিশ প্রণয়নের জন্য নতুন করে ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করেছে সরকার। তবে নতুন এই কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করেছে তিন দফা দাবিতে আন্দোলনরত প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম ‘প্রকৌশলী অধিকার আন্দোলন’।
বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শহীদ মিনারে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে প্রকৌশলী অধিকার আন্দোলনের সভাপতি মো. ওয়ালি উল্লাহ এ কথা জানান। ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে নতুন কমিটি গঠনের প্রতিক্রিয়া জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের দাবি, তাঁদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৭ আগস্ট আট সদস্যের আরেকটি কমিটি গঠন করে সরকার। সেই কমিটি যখন চমৎকারভাবে আলোচনা এগিয়ে নিচ্ছিল, সেখানে যুক্তিতে টিকতে না পেরে ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমেছেন। সরকারকে চাপ প্রয়োগ করে নতুন করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাঁরা আগের কমিটি অনুযায়ী এক মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট চান।
ওয়ালি উল্লাহ বলেন, ‘প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের শাহবাগে আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার ২৭ আগস্ট আমাদের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, সেখানে স্পষ্ট বলা হয়েছিল, এক মাসের মধ্যে কমিটি পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট জমা দেবে। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে আবারও অকার্যকর একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।’
প্রকৌশলী অধিকার আন্দোলনের সভাপতির অভিযোগ, ‘ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীরা মব সৃষ্টি করে মন্ত্রণালয়কে বাধ্য করে নতুন করে এই কমিটি গঠনের প্রতিশ্রুতি নিয়ে এসেছেন। আমরা মনে করি, নতুন কমিটি কোনোভাবেই কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারবে না। আমরা এই কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করছি।’
দাবি আদায়ে দ্রুতই কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে জানিয়ে ওয়ালি উল্লাহ বলেন, ‘আগের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এক মাসের মধ্যে রিপোর্ট দাখিল করতে হবে। দাবি আদায়ে আমাদের অহিংস কর্মসূচি চলমান রয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতি বিবেচনায় আমরা দ্রুতই জনগণ, শিক্ষাবিদ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সব অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করব।’
প্রকৌশলী অধিকার আন্দোলনের সভাপতি বলেন, সমস্যা সমাধানে সরকার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে একটি ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করে। কমিটিতে বিএসসি প্রকৌশলী ও ডিপ্লোমা প্রতিনিধি রাখা হয়। তাঁদের মতামতের ভিত্তিতে তখন থেকেই কমিটি বৈঠক করে আসছে। প্রতিটি বৈঠকে প্রকৌশলী অধিকার আন্দোলন থেকে ছয়জন প্রতিনিধি এবং ডিপ্লোমাদের পক্ষ থেকেও প্রতিনিধি অংশ নেন।
ওয়ালি উল্লাহ বলেন, ‘বৈঠকগুলোতে প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের পক্ষে আমরা দাবির যৌক্তিকতা তুলে ধরি। ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীরাও তাঁদের দাবির যৌক্তিকতা পেশ করেন। ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীরা কমিটিতে যে যুক্তি প্রদান করেছেন, সেটি খুবই দুর্বল ও অসামঞ্জস্যপূর্ণ। যখনই তাঁদের যুক্তির অসারতা সামনে এসেছে, তখনই তাঁরা চিরাচরিত রূপে আন্দোলনে ফিরে গেছেন।’
প্রকৌশলী অধিকার আন্দোলনের সভাপতি বলেন, ‘আজকে মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, পলিটেকনিক কলেজের অধ্যক্ষ এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের নিয়ে সভা ডাকা হয়। সভায় সব অংশীজনের মতামত গ্রহণ করার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই সারা দেশে আন্দোলনের নামে অরাজকতা সৃষ্টি করা হয়েছে। সারা দেশের ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের উসকে দেওয়া হয়েছে।’
মন্ত্রণালয়ের সভায় ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীরা মব সৃষ্টি করেছেন অভিযোগ করে ওয়ালি উল্লাহ বলেন, মন্ত্রণালয়ের সভায় ডিপ্লোমাদের ৮ জন প্রতিনিধি উপস্থিত হওয়ার কথা থাকলেও তাঁরা ২০ জন উপস্থিত হয়ে সভায় মব সৃষ্টি করেন। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের পর্যন্ত হেনস্তা করেছেন। কমিটি গঠন করার সময় এক মাসের মধ্যে রিপোর্ট দেওয়ার যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীরা সেটি লঙ্ঘন করেছেন। আলোচনায় বিশৃঙ্খলা তৈরি করে তাঁরা প্রকৌশল খাতে আগের অবস্থা বলবৎ রাখতে চান।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন