[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

পূজা ঘনিয়ে আসতেই শাঁখা-শঙ্খ কেনাকাটায় প্রাণচাঞ্চল্য

পাশাপাশি বর্তমান শাঁখারীদের অবস্থাও অনেকটা নাজুক
প্রকাশঃ
অ+ অ-

পূজা উপলক্ষে শাঁখার চুড়ি কিনছেন এক ক্রেতা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

পুরান ঢাকার শাঁখারীবাজার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের এক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। ঢাকা শহর গড়ে ওঠার সময় থেকেই এই এলাকায় শাঁখা বিক্রির জন্য মানুষের সমাগম ছিল। প্রাচীনকাল থেকে এই এলাকায় শাঁখা কারুশিল্পীদের বসবাস, এবং দেশজুড়ে মানসম্মত শাঁখার খোঁজে ক্রেতারা এখানে ছুটে আসেন। দুর্গোৎসবের সময় এই ভিড় সাধারণ সময়ের তুলনায় আরও বেড়ে যায়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, শাঁখা, সিঁদুর ও শঙ্খের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ধীরে ধীরে বেড়ে আসা ভিড় চোখে পড়ছে। শুধু রাজধানী নয়, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকেও ক্রেতারা এখানে আসছেন। বাহারি নকশার শাঁখা ও শঙ্খের জন্য ক্রেতারা এক দোকান থেকে আরেক দোকানে ঘুরছেন। জোড়া দামের শাঁখা সাধারণত তিনশ থেকে পাঁচ-ছয় হাজার টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। শঙ্খের দাম দুইশ থেকে পাঁচশ টাকার মধ্যে।

শাঁখারীবাজারের বিক্রেতারা জানাচ্ছেন, এক সময় এখানে প্রায় সব দোকানে প্রাচীন পদ্ধতিতে হাতে শাঁখা তৈরি হতো। তবে এখন সেই সময়ের চাহিদা ও নিপুণতা কমে গেছে। হাতে তৈরি শাঁখার তুলনায় মেশিনে তৈরি শাঁখার নকশা ভিন্নধর্মী এবং বহুমুখী হওয়ায় ক্রেতাদের আকর্ষণ বেশি। গুণগত মানের দিক থেকে হাতে বানানো শাঁখা এখনো শীর্ষে থাকলেও আধুনিক নকশার জন্য মানুষ এখন মেশিনে তৈরি শাঁখাকেই বেশি পছন্দ করছেন।

পূজা উপলক্ষে শাঁখার দোকানে ভিড় বেড়েছে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন
পূজা উপলক্ষে শাঁখার দোকানে ভিড় বেড়েছে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

‘মা মনসা শঙ্খ শিল্পালয়ে’ শাঁখা কিনতে আসা সীমা রানী জানান, 'এখানে আমার দিদির বাসা। আমি গাজীপুর থেকে এসেছি। এক জোড়া শাঁখা কিনেছি ১২০০ টাকায়। আরেক জোড়া কিনবো নকশা ভালো দেখে, তবে দাম বেশি বলছে। গত বছরের তুলনায় এবার সুন্দর নকশার শাঁখার দাম একটু বেড়েছে। ভালো মানের শঙ্খ দিয়ে তৈরি শাঁখা চাইলে একটু বেশি খরচ করতে হয়।' 

পূজা উপলক্ষে নতুন শাঁখা কিনতে আসা অনুশ্রী বলেন, 'এবার পূজার অনেক আগে থেকেই শাঁখা কিনতে এসেছি। পূজা যত ঘনিয়ে আসবে, দাম তত বাড়বে। আমার কাছে ইতিমধ্যে কয়েক জোড়া শাঁখা আছে, তবু অষ্টমীতে নতুন শাঁখা পরার জন্য আগেভাগে কিনছি। নিজের জন্য দুই জোড়া, মা এবং ভাইয়ের বউয়ের জন্য আরও দুই জোড়া শাঁখা কিনেছি।' 

শাঁখা ও শঙ্খ বিক্রির বিষয়ে ‘শঙ্খশ্রী’ দোকানের মালিক রিপন দত্ত (৪৫) জানান, 'বছরের নানা সময়ে শাঁখার বিক্রি কমবেশি হয়। তবে দুর্গাপূজার সময়ে চাহিদা বেড়ে যায়। এই সময়ে ক্রেতারা সাধারণত দুই-তিন জোড়া করে শাঁখা কিনেন। প্রতি জোড়া শাঁখার দাম ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত।' তিনি আরও বলেন, 'শঙ্খের চাহিদাও থাকে। পুজোর দু-তিন দিন আগে বিক্রি সবচেয়ে বেশি হয়।' 

রিপন দত্ত বলেন, 'বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা পূজা উপলক্ষে শাঁখারীবাজারে আসেন। এখানে যে মানের শাঁখা পাওয়া যায়, তা অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। এছাড়া এখান থেকেই ব্যবসায়ীরা শাঁখা নিয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিক্রি করেন। ছোটবেলা থেকেই আমরা এই দৃশ্য দেখেছি। আমাদের পিতা ও দাদাদের হাত ধরে এই অঞ্চলে শাঁখা-শঙ্খ বিক্রির প্রচলন শুরু হয়।' 

পূজার আগে শাঁখার খোঁজে অনেকেই ভিড় করেন পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী এ শাঁখার বাজারে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন
পূজার আগে শাঁখা-শঙ্খর খোঁজে অনেকেই ভিড় করেন পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী এ শাঁখার বাজারে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

শাঁখারীবাজারের ব্যবসায়ী মধুসূদন নন্দি (৫৬) বলেন, 'এক সময় বাজারের বেশির ভাগ শাঁখা-শঙ্খ আসত শ্রীলঙ্কা থেকে। সেখান থেকে কাঁচামাল এনে বাংলাদেশে শাঁখা তৈরি করতাম। তখন খরচ তুলনামূলকভাবে কম পড়ত। পরে বন্যা, করোনাসহ শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় কাঁচামাল আনা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ভারত থেকে সরাসরি তৈরি শাঁখা আমদানি করা হয়। এতে খরচ কিছুটা বেশি হয়।' 

তিনি আরও বলেন, 'শাঁখা-শঙ্খের চাহিদা শুধুমাত্র দুর্গাপূজার সময় নয়। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে এর চাহিদা সারা বছরই থাকে। সরকারি উদ্যোগে যদি কাঁচামাল আমদানি সহজ করা যেত বা বিশেষ নজরদারি থাকত, তবে দাম আরও কমে আসত। পাশাপাশি বর্তমান শাঁখারীদের অবস্থাও অনেকটা নাজুক। তাদের কাজে লাগিয়ে এই ব্যবসাকে শিল্পের পর্যায়ে উন্নীত করা সম্ভব।'

হাতে তৈরি শাঁখার ঐতিহ্য নিয়ে তিনি বলেন, 'প্রযুক্তির ছোঁয়ায় এখন হাতে তৈরি শাঁখা আগে যেমন হয়, তেমন আর হয় না। এক জোড়া তৈরি করতে যে সময় লাগে, মেশিনে একই সময়ে ১০ জোড়া তৈরি সম্ভব। তাছাড়া মেশিনের মতো নানা ধরনের বাহারি নকশা হাতের তৈরি শাঁখায় করা যায় না। কম মজুরি হওয়ার কারণে অনেকেই শাঁখার কারিগর হতে চান না। তবুও অনেকে হাতে তৈরি শাঁখা ব্যবহার করতে পছন্দ করেন। এ ক্ষেত্রে ক্রেতাদের পছন্দ অনুযায়ী আমরা নকশা তৈরি করি।' 

Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন