[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

জুলাইয়ে আমদানি রেকর্ড, কিন্তু বাজারে দাম স্থিতিশীল নয়

একসময় মাসের শুরুতে একসাথে বাজার করা পরিবারগুলো এখন সপ্তাহ ভাগ করে কম পরিমাণে বাজার করছেন
প্রকাশঃ
অ+ অ-

রাজধানীর এক মুদি দোকান | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন 

চলতি বছরের জুলাইয়ে বাংলাদেশের আমদানি তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এ মাসে দেশে আমদানিকৃত পণ্যের মূল্য দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১৯ দশমিক ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

অর্থনীতিবিদদের মতে, ডলারের সংকট কিছুটা কাটিয়ে ওঠা, আমদানি নীতির শিথিলকরণ এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার পর ব্যবসায়িক কার্যক্রম স্বাভাবিক হওয়াই এই বৃদ্ধির প্রধান কারণ।

গত বছর জুলাইয়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং বন্দর কার্যক্রমে জটিলতার কারণে আমদানির পরিমাণ কমে গিয়েছিল। এবার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় তুলনামূলকভাবে বড় ধরনের বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে।

তবে অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করে বলছেন, রেকর্ড আমদানি মানেই অর্থনীতির প্রকৃত প্রবৃদ্ধি নয়। শিল্প খাতে যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানি বেড়েছে, কিন্তু ভোক্তা বাজারে চাহিদা এখনও সীমিত। ঋণপত্রের উচ্চ সুদহার, জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি এবং নিত্যপণ্যের দাম ওঠানামা ভোক্তাদের স্বস্তি দিতে পারেনি।

পিপিআরসি’র সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, ৭০ শতাংশ মানুষ দ্রব্যমূল্য বাড়তে থাকায় উদ্বিগ্ন। প্রায় ২০ শতাংশ মানুষ এখনও আর্থিক সংকটে রয়েছেন। এর মধ্যে ৬৭ শতাংশ চিকিৎসা ব্যয় এবং ২৭ শতাংশ ঋণ পরিশোধ নিয়ে সমস্যায় ভুগছেন।

অর্থনীতিবিদদের মতে, সরবরাহ বেড়েও সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা এবং জীবনযাত্রার ব্যয় নিয়ন্ত্রণে না আসায় বাজারে মূল্য স্থিতিশীল হচ্ছে না। চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজ, সবজি, মাছ-মাংস—সব কিছুর দাম প্রতিদিন বাড়ছে। একসময় মাসের শুরুতে একসাথে বাজার করা পরিবারগুলো এখন সপ্তাহ ভাগ করে কম পরিমাণে বাজার করছেন। মধ্যবিত্ত পরিবারের ভোজন তালিকাও ক্রমেই সংকুচিত হচ্ছে।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন বলেন, 'এক শ্রেণির ব্যবসায়ী দীর্ঘদিন ধরে মূল্য কারসাজি করে ভোক্তাকে ঠকাচ্ছেন। সরকারের পক্ষ থেকে স্থায়ী পদক্ষেপ বা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির নজির নেই, আর তদারকিও কার্যকর নয়।' 

সিটি ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহিয়া জুনেদ বলেন, 'আমদানি বৃদ্ধির মূল কারণ শিল্প খাতে চাহিদা ফের বেড়ে যাওয়া। এটি সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ার কারণে নয়, বরং উৎপাদন ও ব্যবসা সচল হওয়ার কারণে।' 

ঢাকা মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি কামরান টি রহমান বলেন, 'মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি বেড়েছে, তবে এটিকে প্রকৃত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বলা যাবে না; এটি ব্যবসায়িক কার্যক্রম স্বাভাবিক হওয়ার প্রতিফলন।' 

সাবেক ডিসিসিআই সভাপতি আশরাফ আহমেদও জানান, 'ভোক্তা পণ্যের চাহিদা এখনো সীমিত। অর্থনীতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে, তবে পূর্ণ পুনরুদ্ধার হয়নি।'

জানা গেছে, জুলাইয়ে বিভিন্ন পণ্যের আমদানিও বেড়েছে। মধ্যবর্তী পণ্যের আমদানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৮৪ বিলিয়ন ডলার, ২১ শতাংশ বৃদ্ধি। মূলধনী যন্ত্রপাতি এসেছে ৪৫৬ মিলিয়ন ডলার, ৭১ শতাংশ বৃদ্ধি। তৈরি পোশাক শিল্পের কাঁচামাল আমদানির পরিমাণ ১ দশমিক ৫২ বিলিয়ন ডলার, ১০ দশমিক ৩ শতাংশ বৃদ্ধি। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা কারখানায় গ্যাস সংযোগ পাওয়ার পর উৎপাদন শুরু হওয়ায় আমদানি পুনরুদ্ধার সম্ভব হয়েছে।

সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর শীর্ষ ২০ ভোগ্যপণ্য আমদানিকারকের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ব্যবসায়ীরা নিত্যপণ্যের আমদানি সহজ করার পাশাপাশি বিদ্যমান সীমা প্রত্যাহার, ঋণপত্রের বদলে চুক্তিভিত্তিক আমদানি এবং ঋণের মেয়াদ ৯০ দিন থেকে ১৮০ দিন পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব দেন।

মেঘনা গ্রুপের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল বলেন, 'আমদানির বাধা কমালে পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে।' 

নাবিল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিনুল ইসলাম স্বপন জানান, 'বাজার স্থিতিশীল রাখতে গভর্নর যে কোনো সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।' 

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আগামী তিন বছরের জন্য (২০২৫-২৮) নতুন আমদানি নীতি প্রণয়ন করছে। এতে ন্যূনতম দর বা নগদ মার্জিন বাধ্যতামূলক থাকবে না। যে কোনো আমদানিকারক যেকোনো পরিমাণ পণ্য আমদানির সুযোগ পাবেন। এলডিসি থেকে উত্তরণের সময়কাল ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নীতি বিবেচনা করে নীতি প্রণয়ন করা হবে। পুরোনো আদেশের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২৪ সালের জুনে; নতুন আদেশ না আসা পর্যন্ত পূর্বের আদেশই কার্যকর থাকবে।

অর্থনীতিবিদদের মতে, আমদানি বেড়েছে হলেও ভোক্তা বাজারে চাহিদা সীমিত, ঋণের উচ্চ সুদ এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় মূল্যস্ফীতি এখনো দেশের জন্য কঠিন পরিস্থিতি হয়ে আছে।

একটি মন্তব্য করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন