[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

সুন্দরবনে ফিরেছে দস্যুতা, বনজীবীদের জীবন বিপন্ন

প্রকাশঃ
অ+ অ-

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবন | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন  

নজরদারির অভাবে সুন্দরবনে আবারও বেড়েছে বনদস্যুদের তৎপরতা। বন এলাকায় কমপক্ষে ২০ স্থানে সক্রিয় রয়েছে ১০টি বেপরোয়া বাহিনী। জেলে ও বাওয়ালিদের জিম্মি করে তারা লাখ লাখ টাকা আদায় করছে। মুক্তিপণ না দিলে কারও মুক্তি নেই,  নির্যাতনও চালানো হচ্ছে। ভীত বনজীবীরাও অনেকেই ভয়ে পেশা বদলাচ্ছেন।

বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ থেকে ২০১৮ সালের অক্টোবর পর্যন্ত সুন্দরবনের ৩২ দস্যু বাহিনীর ৩২৮ সদস্য ৪৬২অস্ত্র-৫০৪টি গোলাবারুদসহ আত্মসমর্পণ করেছিল। ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর সুন্দরবনকে বনদস্যুমুক্ত ঘোষণা করা হয়। দীর্ঘদিন বনদস্যুর সমস্যা ছিল না। তবে গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে পুনরায় তারা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।

জেলেদের কাছে জানা যায়, ১৭ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরার ভারত সীমান্তবর্তী মারডাঙ্গা ও হরিণটানা খাল থেকে ছয়জনকে অপহরণ করে জলদস্যুরা। পরে ২০ হাজার টাকা করে মুক্তিপণ দিয়ে তারা ছাড়া পায়।

শ্যামনগরের টেংরাখালী গ্রামের আতাউর রহমান বলেন, 'আমাদের ছয়জনকে মুন্না বাহিনীর দস্যু অপহরণ করেছে। মুক্তির জন্য ৫০ হাজার টাকা দাবি করা হয়েছিল। অপারগতা দেখালে বেধড়ক মারধর করা হতো। আমার আঙুল ভেঙে গেছে। এক দিনে খুব অল্প খাবার জুটত। অবশেষে ২০ হাজার টাকা দিয়ে ফিরে এসেছি। এখন সুন্দরবনে যেতে পারছি না এবং ডাক্তার দেখাতেও পারছি না।' 

অন্য একজন শিকার রাশেদুল ইসলাম জানান, 'দস্যুরা অপহরণের দুই দিন পর বাড়িতে সিম পাঠায়। বাড়িতে কোনো অর্থ ছিল না। বিভিন্ন জায়গা থেকে সুদ করে টাকা জোগাড় করে আমার স্ত্রী ২০ হাজার টাকা বিকাশের মাধ্যমে পাঠায়। এরপর মুক্তি পাই। দস্যুদের মধ্যে চারজন ভারতীয় ও দুই স্থানীয় ডাকাত রয়েছেন।' 

স্থানীয় গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে শ্যামনগর, কালীগঞ্জ ও আশাশুনি উপজেলার তিন শতাধিক জেলে অপহৃত হয়েছেন। সর্বশেষ শিকার হয়েছেন টেংরাখালী ও ভেটখালী এলাকার বাসিন্দারা। এর আগে দুবলারচরের বাহির সমুদ্রের ৮ নম্বর বয়া এলাকা থেকে ১৫ জেলেকে মুক্তিপণের দাবিতে জিম্মি করা হয়। এর মধ্যে ৯ জন আশাশুনির প্রতাপনগরের বাসিন্দা। ১৭ দিন পর জনপ্রতি ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দিয়ে ১৩ ফেব্রুয়ারি তাদের ছাড়া করা হয়। সাতক্ষীরা রেঞ্জের বিভিন্ন স্থানে শরীফী, মজনু, রবিউল, সাগর, মুন্না, দুলাভাই ও মঞ্জুর বাহিনীসহ কমপক্ষে ১০টি বাহিনী চষে বেড়াচ্ছে।

পর্যটন নির্দেশক গোলাম মোস্তফা বলেন, 'আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতার অভাবে বছরখানেক ধরে বনদস্যুদের কার্যক্রম বেড়েছে। পর্যটকেরা আতঙ্কিত।' 

শ্যামনগর এলাকার কমলা দাশ জানান, 'কাঁকড়া ধরতে গেলে রাত হলে ভয়ে থাকি। একদিকে বাঘ ও কুমিরের ভয়, অন্যদিকে ডাকাতের ভীতি। তাই বাঁচতে নৌকাতেই থাকি, সাত দিনের পাস দিলে ফিরে আসি। এত সাবধান থাকার পরও মাঝে মাঝে ডাকাতদের কবলে পড়তে হচ্ছে।' 

শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা রনি খাতুন বলেন, 'জেলা ও উপজেলা আইনশৃঙ্খলা-সভায় বনদস্যুদের তৎপরতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। উদ্বেগের সঙ্গে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।' 

সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুকিত হাসান খান জানান, 'সুন্দরবনকে জলদস্যুমুক্ত করতে পুলিশ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। ডাকাতদের তথ্য দিতে পুরস্কারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অনেকেরই তথ্য পাওয়া গেছে এবং কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। যেহেতু মুক্তিপণ বিকাশের মাধ্যমে দেওয়া হয়, তাই উপকূলীয় এলাকার বিকাশ এজেন্টদের সঙ্গে সভা করা হয়েছে। বনদস্যুদের কার্যক্রম বন্ধ করতে বন বিভাগ, কোস্ট গার্ড ও বিজিবি যৌথভাবে কাজ করছে।' 

সাতক্ষীরা রেঞ্জ কর্মকর্তা ফজলুর রহমান বলেন, 'বন বিভাগের জনবল ও অস্ত্র সীমিত। আমাদের ৪০০ খালসহ বিশাল এলাকা সুরক্ষিত রাখতে কঠোর পরিশ্রম চলছে। আক্রান্তরা প্রায়ই তথ্য দেন না। সীমান্ত নদী রায়মঙ্গলসহ অন্যান্য খাল ও নদীর দায়িত্ব রিভারাইন বিজিবি এবং কোস্ট গার্ডের। বনদস্যুমুক্ত করতে এই সংস্থাগুলোর যৌথ অভিযান প্রয়োজন।' 

একটি মন্তব্য করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন