[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

শিক্ষক জান্নাতুলকে শেষ বিদায়, শিক্ষার্থী ও সহকর্মীদের অঝোরে কান্না

প্রকাশঃ
অ+ অ-

বাদ জুমা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হয় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন  

লাশবাহী গাড়িটি ঘিরে জটলা করে আছেন অনেকে। কেউ শোকে পাথর হয়ে নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে আছেন, কেউ নিজেকে সামলাতে না পেরে উচ্চ স্বরে কাঁদছেন, কেউ আবার সান্ত্বনা দিচ্ছেন অন্যজনকে। আজ শুক্রবার বেলা একটার দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন কলাভবনের সামনে এমন দৃশ্য দেখা যায়।

লাশবাহী গাড়িতে করে শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌসের (৩২) মরদেহ আনা হয়েছে। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের ৪২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। পরে একই বিভাগের শিক্ষক হন। আজ সকালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনের ভোট গণনার কাজে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। পরে হাসপাতালে নেওয়া হলে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।

প্রিয় শিক্ষক, সহকর্মী কিংবা বন্ধুর এমন মৃত্যুতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যেন শোকের আবহ তৈরি হয়েছে। যে শিক্ষকের সঙ্গে নিয়মিত নিজেদের সুখ-দুঃখ ভাগ করে নিতেন, নানা সমস্যার কথা বলতেন অকপটে; আজ তাঁর নিথর উপস্থিতি কেউই মানতে পারছেন না। এমন অনাকাঙ্ক্ষিত শোকে কান্নায় ভেঙে পড়েন শিক্ষার্থীদের অনেকেই। তাঁদের কেউ কেউ জানান, শিক্ষক হলেও জান্নাতুলকে বোনের মতো মনে করতেন তাঁরা।

বিভাগটির ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ঐশী সরকার বলেন, ‘তিনি এমন একজন শিক্ষক ছিলেন, যাঁর কাছে অকপটে সবকিছু বলা যেত। শিক্ষক হলেও তিনি ছিলেন বোনের মতো। শিক্ষার্থীবান্ধব এমন একজন শিক্ষককে অকালে হারাতে হবে, কখনো ভাবতেই পারিনি।’

চোখের জলে বিদায় জানানো হলো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌসকে। আজ দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন কলাভবনের সামনে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন  

চারুকলা বিভাগের ৪৩তম ব্যাচের প্রাক্তন শিক্ষার্থী উজ্জ্বল হোসেন রাজা বলেন, ‘তিনি (জান্নাতুল) চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। এরপর শিক্ষক হয়ে বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য হয়ে ওঠেন নিবেদিতপ্রাণ। গতকালও আমাকে ফোন দিয়ে এক শিক্ষার্থীর জন্য টিউশনির ব্যবস্থা করে দিতে অনুরোধ করেছিলেন।’

আজ দুপুরে পুরাতন কলাভবনের সামনে গিয়ে দেখা যায়, লাশবাহী গাড়িতে করে আনা হয়েছে জান্নাতুল ফেরদৌসের মরদেহ। সহকর্মী, শিক্ষক কিংবা প্রিয় বন্ধুকে শেষবারের মতো দেখতে সেখানে ভিড় করেছেন অনেকেই। সহকর্মীর অকালপ্রয়াণে বাকরুদ্ধ হয়ে বিভাগের অন্য শিক্ষকেরা দাঁড়িয়ে আছেন নিশ্চুপ। বেলা সোয়া একটার দিকে লাশবাহী গাড়িটি নিয়ে যাওয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে। বাদ জুমা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

এর আগে আজ সকালে চারুকলা বিভাগের সভাপতি ও সহযোগী অধ্যাপক শামীম রেজা বলেন, ‘আমি প্রীতিলতা হলে রিটার্নিং অফিসার ও জান্নাতুল ফেরদৌস পোলিং অফিসার হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। গতকাল (বৃহস্পতিবার) ভোট গ্রহণ শেষে সন্ধ্যা ছয়টার পর তিনি (জান্নাতুল) বাসায় চলে যান। সকাল সাড়ে সাতটা থেকে আটটার দিকে ভোট গণনার জন্য তিনি সিনেট ভবনে আসেন। এরপর তৃতীয় তলায় ভোট গণনার কক্ষের দরজার সামনে হঠাৎ পড়ে যান। তাৎক্ষণিকভাবে তাঁকে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। ভোট গণনার কাজের জন্য আমি সকালেই তাঁকে ফোন দিয়ে এনেছিলাম।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সোহেল আহমেদ বলেন, ‘জান্নাতুল ফেরদৌস আমার মেয়ের মতো। বিভিন্ন সময়ে নানা বিষয়ে আমার সঙ্গে কথা বলত। আমি যেন আমার মেয়েকেই হারালাম।’

Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন