{getBlock} $results={3} $label={ছবি} $type={headermagazine}

প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী পেল নেপাল, শপথ নিলেন সুশীলা কার্কি

প্রকাশঃ
অ+ অ-


 শপথ নিচ্ছেন সুশীলা কার্কি | ছবি: নেপাল নিউজ

নেপালের অর্ন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ নিয়ে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ইতিহাস গড়লেন সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কি।

শুক্রবার নেপালের রাষ্ট্রপতি ভবনে স্থানীয় সময় রাত সেয়া ৯ টায় তিনি শপথ নেন। তাকে শপথ বাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি রামচন্দ্র পৌডেল।

শপথ গ্রহণের সময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নেপালের ভাইস প্রেসিডেন্ট রাম সহায় যাদব, প্রধান বিচারপতি প্রকাশ মান সিং রাওয়াত এবং সেনাপ্রধান অশোক রাজ সিগদেল। ভারতের রাষ্ট্রদূত নবীন শ্রীবাস্তবও শপথ অনুষ্ঠানে গিয়ে নবনিযুক্ত প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানান।

ভারতীয় পত্রিকা এনডিটিভি জানায়, কার্কির শপথ গ্রহণের পরই নেপালে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ২০২৬ সালের ৫ মার্চে হবে নির্বাচন।

তরুণদের বিক্ষোভের মুখে গত মঙ্গলবার নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলি পদত্যাগ করেন। সরকার ২৬টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করে দেওয়ার প্রতিবাদে রাজপথে নেমেছিলেন তরুণেরা। তাঁরা দেশে জেঁকে বসা দুর্নীতির বিরুদ্ধেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। প্রথম দিনের সংঘর্ষে ১৯ জন নিহত হওয়ার পরদিন প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেন। তবে এর পরও দেশটিতে সহিংসতা চলতে থাকে। ২০০৮ সালে গৃহযুদ্ধ ও রাজতন্ত্রের অবসানের পর নেপালে এই কয়েক দিনে সবচেয়ে বেশি সহিংসতা ঘটে, যাতে অন্তত ৫১ জন প্রাণ হারিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের পরদিন নেপালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব নেয় দেশটির সেনাবাহিনী। এরপর প্রেসিডেন্ট ও সেনাবাহিনীর তৎপরতায় দেশটিতে রাজনৈতিক সংকট সমাধানের চেষ্টা চলে। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে তাঁদের কয়েক দফা বৈঠকের পর নতুন সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সুশীলা কারকির বিষয়ে মতৈক্য হয়।

বিক্ষোভকারীদের একজন প্রতিনিধি বলেছেন, সুশীলা ক্ষমতা গ্রহণ করে বর্তমান পার্লামেন্ট বিলুপ্ত ঘোষণা করবেন। নির্দলীয় অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করবেন তিনি।

এর আগে একজন সংবিধানবিশেষজ্ঞ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছিলেন, ‘জেন জি-রা তাঁকে (সুশীলা) চায়। এটা আজই ঘটবে।’ বিক্ষোভকারীদের বেশির ভাগেরই বয়স জেন-জি প্রজন্মের হওয়ায় নামটি জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ১৯৯৫ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে যাদের জন্ম, তাদের জেনারেশন জেড বা জেন-জি বলা হয়।

সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কারকির কোনো রাজনৈতিক অতীত নেই। ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত নেপালের প্রধান বিচারপতি ছিলেন তিনি। প্রধান বিচারপতি হিসেবে তাঁর দায়িত্ব পালনকালে দুর্নীতির বিরুদ্ধে আদালতের অবস্থান আলোচনায় আসে। এই অবস্থানের প্রশংসা ও বিরোধিতা দুটোই সে সময় হয়েছিল।

কে পি শর্মা অলির অবস্থান জানা যায়নি
কে পি শর্ম অলি সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী যথাসময়ে নিবন্ধন না করায় ৪ সেপ্টেম্বর মধ্যরাত থেকে নেপালে ২৬টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বার্তা আদান-প্রদানের অ্যাপ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এটাকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার দেশটিতে বিক্ষোভ শুরু হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করাকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ শুরু হলেও জনগণের মধ্যে অসন্তোষের আরও অনেক কারণ ছিল। এসবের মধ্যে বেকারত্ব, দুর্নীতি, শাসকশ্রেণির সন্তানদের বিলাসী জীবন এবং ক্ষমতায় তরুণদের জায়গা না হওয়া অন্যতম।

ভারত আর চীনের মধ্যে নেপালের অবস্থান। দেশটিতে ২০০৮ সালে রাজতন্ত্র শেষ হওয়ার পর থেকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতা চলছে। দেশে কর্মসংস্থানের অভাব। তাই লাখ লাখ মানুষ বিদেশে গিয়ে চাকরি করছেন এবং দেশে টাকা পাঠাচ্ছেন।

মঙ্গলবার বিক্ষোভকারীরা পার্লামেন্ট ভবনে ঢোকার চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে তাঁদের সংঘর্ষ হয়। কাঁদানে গ্যাসের শেল, জলকামান ব্যবহারের এক পর্যায়ে গুলি চালায় পুলিশ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাজধানী কাঠমান্ডুসহ কয়েকটি শহরে কারফিউ জারি করা হয়। এরপরও বিক্ষোভ আরও তীব্র হওয়ায় ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন কে পি শর্মা অলি। এরপর তাঁকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়। তবে তিনি ঠিক কোথায় আছেন, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

পালিয়েছেন কয়েদিরা
প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করার পরও পার্লামেন্ট ভবনসহ বিভিন্ন জায়গায় আগুন দেন বিক্ষোভকারীরা। দেশের বিভিন্ন জায়গায় মন্ত্রী ও নেতাদের বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। বিক্ষোভকারীরা পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের থেকে অস্ত্র ছিনতাই করে নেন। এর মধ্যে কারাগারেও বিদ্রোহ শুরু হয়। কারাগার থেকে পালিয়ে যান বহু বন্দী। কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্যমতে, এই কয়েক দিনে নেপালের বিভিন্ন কারাগার থেকে প্রায় ১৩ হাজার ৫০০ জন কয়েদি পালিয়ে গেছেন। এর মধ্যে কিছু কয়েদিকে আবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে এখনো ১২ হাজার ৫৩৩ জন ধরাছোঁয়ার বাইরে।

সহিংসতায় অন্তত ৫১ জন নিহতের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে বলে নেপাল পুলিশের মুখপাত্র বিনোদ ঘিমিরে গতকাল জানিয়েছেন। তাঁর দেওয়া তথ্যমতে, নিহতদের মধ্যে বিক্ষোভকারী ২১ জন, কয়েদি ৯ জন, পুলিশের সদস্য ৩ জন এবং অন্যান্য ১৮ জন। অন্যান্য বলতে কাদের বোঝানো হয়েছে, তা তিনি ব্যাখ্যা করেননি। বিক্ষোভে অন্তত ১ হাজার ৩০০ জন আহত হয়েছেন।

পরিস্থিতি সামাল দিতে গত বুধবার থেকে নিরাপত্তা রক্ষার সার্বিক দায়িত্ব গ্রহণ করে সেনাবাহিনী। পুলিশের সঙ্গে মিলে তারা বেহাত হয়ে যাওয়া অস্ত্র উদ্ধার করছে। গতকাল পর্যন্ত অন্তত ২৬৮টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে দ্য হিমালয়ান টাইমস–এর প্রতিবেদনে।

আজ কাঠমান্ডুর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। কিছু কিছু দোকান খুলেছে, রাস্তায় গাড়ি চলাচল করছে। পুলিশ সদস্যদের হাতে এখন আগের মতো বন্দুক নেই। তাঁরা লাঠি হাতে দায়িত্ব পালন করছেন। তবে কিছু রাস্তা এখনো বন্ধ আছে।সেনাসদস্যরা রাস্তায় টহল দিচ্ছেন। তবে তাঁদের সংখ্যা আগের চেয়ে কম।

একটি মন্তব্য করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন