নির্বাচনে প্রার্থীর খরচ সীমা: এবার ভোটারপ্রতি ১০ টাকা প্রস্তাব
![]() |
নির্বাচন কমিশন |
বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ১৯৭২ সালে জারি হওয়া গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী প্রার্থীর সর্বোচ্চ খরচ ছিল ২০ হাজার টাকা। এরপর ধাপে ধাপে এটি বেড়ে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ২৫ লাখ টাকায় পৌঁছে। এবার আসন্ন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন (ইসি) নতুন প্রস্তাব দিয়েছে—ভোটারপ্রতি ১০ টাকা হিসাব। উদাহরণস্বরূপ, কোনো আসনে সাড়ে সাত লাখ ভোটার থাকলে প্রার্থী সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ টাকা খরচ করতে পারবেন।
নির্বাচন ব্যবস্থাকে সময়োপযোগী করার জন্য নতুন প্রস্তাবনায় কিছু পুরনো নিয়ম বাদ দিয়ে নতুন নিয়ম যুক্ত করা হয়েছে। ১৯৭২ সালের পর এ পর্যন্ত অন্তত ১৪ দফায় আরপিওতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। মোট ২৪১টি ধারায় নতুন বা সংশোধিত নিয়ম এসেছে। এবার প্রস্তাবিত পরিবর্তন কার্যকর হলে এটি ইতিহাসের তৃতীয় বড় সংস্কার হবে। বড় পরিবর্তন সর্বশেষ হয়েছিল ২০০৮-২০০৯ সালে, তার আগে ২০০১ সালেও ব্যাপক সংস্কার হয়েছিল।
এবার প্রায় ৪৪টি নতুন প্রস্তাব আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—একক প্রার্থীর আসনে ‘না’ ভোট চালু করা, জোটবদ্ধ প্রার্থীদের নিজেদের দলীয় প্রতীক ব্যবহার করে ভোটে অংশ নেওয়ার সুযোগ, প্রবাসীদের জন্য পোস্টাল ভোটের ব্যবস্থা এবং অনলাইন নিবন্ধন ও ভোটিং। তবে ইভিএম ব্যবহার করা হবে না।
নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ জানিয়েছেন, 'সব প্রস্তাবই একসাথে বাস্তবায়ন হবে এমন নয়। কিছু বাদও পড়তে পারে। এটি সরকারের বিবেচনার বিষয়।' সংশোধনীর সঙ্গে মিলিয়ে কমিশন আচরণবিধি ও ভোট পরিচালনার নিয়মও বদলাবে।
নির্বাচনী বিশেষজ্ঞ জেসমিন টুলী বলেন, 'কতবার পরিবর্তন হয়েছে তা বড় বিষয় নয়; গুরুত্বপূর্ণ হলো কোন মৌলিক নিয়ম বদলেছে। ২০০১ সালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় প্রতিরক্ষা বিভাগ অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। ২০০৯ সালে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাধ্যতামূলক হয়, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ও ছবিসহ ভোটার তালিকা চালু হয় এবং ‘না’ ভোটের সুযোগ আসে। এবার আবার প্রতিরক্ষা বিভাগের সংযোজনের প্রস্তাব এসেছে।'
জানা গেছে, প্রার্থীর একক আসনের সীমার ইতিহাসও দেওয়া হয়েছে। শুরুতে কোনো সীমা ছিল না। ১৯৮৬ সালে সর্বোচ্চ পাঁচ আসন, ২০০৮-২০০৯ সালে তিন আসন নির্ধারণ করা হয়। ব্যয়সীমার ইতিহাস অনুযায়ী—১৯৭২ সালে ২০ হাজার টাকা, ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে ৩ লাখ টাকা, ২০০১ সালে ৫ লাখ টাকা, ২০০৮ সালে ১৫ লাখ টাকা এবং ২০১৩ সালে ২৫ লাখ টাকা। বর্তমানে একজন প্রার্থী সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা খরচ করতে পারেন। তবে ভোটারসংখ্যার ভিন্নতার কারণে সব এলাকায় এটি সমান অর্থে কার্যকর হয় না। তাই এবার ভোটারপ্রতি ১০ টাকার হিসাবের প্রস্তাব এসেছে।
আরপিও সংশোধনীর সংখ্যা বছরে—১৯৭৮ সালে ৫টি, ১৯৮১ সালে ১টি, ১৯৮৫ সালে ২টি, ১৯৮৬ সালে ১১টি, ১৯৯১ সালে ২০টি, ১৯৯৪ সালে ১২টি, ১৯৯৬ সালে ৪টি, ২০০১ সালে ৫৫টি, ২০০৮-২০০৯ সালে ৬৯টি, ২০১৩ সালে ৩২টি, ২০১৯ সালে ৭টি এবং ২০২৩ সালে ২৩টি। একাদশ সংসদ নির্বাচনে ব্যালটের পাশাপাশি ইভিএম ব্যবহৃত হয়েছিল। সাম্প্রতিক প্রস্তাবে তা বাদ দিয়ে—একক প্রার্থীর আসনে ‘না’ ভোট, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় সশস্ত্রবাহিনী অন্তর্ভুক্তি, পুরনো আসনের ভোট বাতিলের ক্ষমতা পুনর্বহালসহ ৪৪টি নতুন প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
আরপিও মূলত ইংরেজিতে ছিল। একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর তা বাংলায় অনুবাদ করা হয়। ২০২১ সালের ১ জুলাই বাংলা সংস্করণ সরকারি গেজেটে প্রকাশিত হয় এবং ৯৪টি ধারায় এটি কার্যকর হয়।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন