মাইকে ঘোষণা দিয়ে কুমিল্লার ৪ মাজারে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ
![]() |
| ফেসবুকে মহানবী (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তিমূলক পোস্ট করাকে কেন্দ্র করে চারটি মাজারে হামলার ঘটনা ঘটে। আজ বৃহস্পতিবার কুমিল্লার হোমনা উপজেলার আসাদপুর গ্রামে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
কুমিল্লার হোমনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তিমূলক একটি পোস্ট করাকে কেন্দ্র করে চারটি মাজারে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে একটি মাজার আঙিনায় থাকা তিনটি বসতঘর ভাঙচুর শেষে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টার মধ্যে উপজেলার আসাদপুর ইউনিয়নের আসাদপুর গ্রামে পৃথক চারটি মাজারে এসব হামলার ঘটনা ঘটে। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। ঘটনার পর থেকে ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। আতঙ্ক বিরাজ করছে মাজারের ভক্তদের মধ্যে।
![]() |
| হোমনার আসাদপুরে একটি মাজারে আগুন দেওয়া হয় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
হামলার শিকার ওই চারটি মাজার হচ্ছে আসাদপুর গ্রামের আলেক শাহের বাড়িতে অবস্থিত তাঁর বাবা কফিল উদ্দিন শাহের মাজার, একই গ্রামের আবদু শাহের মাজার, কালাই (কানু) শাহের মাজার এবং হাওয়ালি শাহের মাজার। হাওয়া বেগম নামে এক নারী ‘হাওয়ালি শাহ’ মাজার পরিচালনা করেন। তবে সেখানে কোনো ব্যক্তি সমাহিত নেই। ওই বাড়িতে মাজারসদৃশ স্থাপনায় আগুন দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আলেক শাহর ছেলে মহসিন তাঁর ফেসবুকে আইডি থেকে বুধবার সকাল ১০টা ৫২ মিনিটে মহানবীকে নিয়ে কটূক্তিমূলক একটি পোস্ট করেন বলে অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় স্থানীয় একদল মানুষ হোমনা থানার সামনে জড়ো হয়ে মহসিনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ করেন। পরে ওই দিন দুপুরেই পুলিশ মহসিনকে আটক করে। পরে তাঁর বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ইসলামী যুবসেনা হোমনা উপজেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক শরিফুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলা করেন। ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে বৃহস্পতিবার সকালে মহসিনকে কুমিল্লার আদালতে প্রেরণ করে পুলিশ। এর আগে গত ২৯ আগস্টও মহসিন ফেসবুকে ধর্মীয় অবমাননামূলক পোস্ট করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
![]() |
| মাজারে ভাঙচুরের পাশাপাশি বসতবাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। আজ বৃহস্পতিবার কুমিল্লার হোমনা উপজেলার আসাদপুর গ্রামে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
ভুক্তভোগী বাসিন্দারা বলেন, এ ঘটনার জের ধরে বৃহস্পতিবার সকালে কয়েক শ মানুষ মাইকে ঘোষণা দিয়ে একত্র হয়ে প্রথমে মহসিনদের বাড়িতে হামলা চালান। প্রথমে কফিল উদ্দিন শাহের মাজার ভাঙচুর করেন। একপর্যায়ে মহসিনদের তিনটি বসতঘরে ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেন বিক্ষুব্ধ লোকজন। এরপর একই গ্রামে পৃথক তিনটি স্থানে মাজারে হামলা ও ভাঙচুর চালান বিক্ষুব্ধ ব্যক্তিরা। এর মধ্যে হাওয়ালি শাহ নামে পরিচিত মাজারটিতে আগুন দেওয়া হয়। বাকিগুলো ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।
![]() |
| মাইকে হামলার ঘোষণা শোনার পর উত্তেজিত জনতা জড়ো হন | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
কুমিল্লার সহকারী পুলিশ সুপার (হোমনা সার্কেল) মো. আবদুল করিম বলেন, এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার কয়েক শ মানুষ জড়ো হয়ে এসব ঘটনা ঘটিয়েছেন। উসকানি দিয়ে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদেরও হামলায় যুক্ত করা করা হয়েছে। মোট ৪টি মাজারে ভাঙচুর ও বসতবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এরই মধ্যে সবচেয়ে বেশি হামলা, ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ হয়েছে আসাদপুর গ্রামে আলেক শাহর বাড়িতে।
কফিল উদ্দিন শাহের মাজারসংলগ্ন বাড়ির বাসিন্দা আহসান উল্লাহ বলেন, বুধবার মহসিনকে গ্রেপ্তার করার পর তাঁরা ভেবেছিলেন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে গেছে। কিন্তু কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই আলেমসমাজ, মাদ্রাসার শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার কয়েক শ মানুষজন চারটি মাজারে হামলা চালিয়েছেন। এ ঘটনার পর যাঁরা মাজারে বিশ্বাস করেন, তাঁরা চরম আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। তাঁরা এলাকায় শান্তি চান।
মহসিদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার বাদী শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘মহসিন দীর্ঘদিন ধরে ফেসবুকে ধর্মীয় উসকানিমূলক পোস্ট দিয়ে আসছিলেন। আমরা তাঁর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। তাঁর বিরুদ্ধে অনেক আগেই ব্যবস্থা নেওয়া দরকার ছিল। তাহলে এমন ঘটনা বারবার ঘটত না।’
![]() |
| মাজারে ভাঙচুরের পাশাপাশি বসতবাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। আজ বৃহস্পতিবার কুমিল্লার হোমনা উপজেলার আসাদপুর গ্রামে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
অভিযোগ ওঠার পরপরই মহসিন নামের ওই যুবককে আটক করা হয় বলে জানিয়েছেন কুমিল্লার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাজির আহমেদ খান। তিনি বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে ফেসবুকে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তিমূলক পোস্ট করার কথা স্বীকার করেন এবং আমরা তাঁর কাছ থেকে সেই পোস্টের প্রমাণও পেয়েছি। এরই মধ্যে ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে মামলা নেওয়া হয়েছে। সেই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকালে তাঁকে কুমিল্লার আদালতে পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি এ ঘটনার পেছনে আরও কেউ জড়িত আছে কি না, সেটি জানতে আমরা আদালতে রিমান্ড আবেদন করেছি।’
![]() |
| আসাদপুর গ্রামে বৃহস্পতিবার মাইকে ঘোষণা দিয়ে চারটি মাজারে হামলা, ভাঙচুরের পর আগুন ধরিয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ লোকজন | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
ঘটনাটি এখানেই শেষ হওয়ার কথা ছিল উল্লেখ করে পুলিশ সুপার বলেন, ‘এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করে আজকের এসব ঘটনা একেবারেই অপ্রত্যাশিত। আজকে যেটা হয়েছে, সেটা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। এসব ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই ঘটনায় কারা উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড করেছে, তাদেরও চিহ্নিত করা হবে। এ ছাড়া এসব ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। পুলিশ ঘটনায় জড়িতদের শনাক্তে কাজ করছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।






একটি মন্তব্য পোস্ট করুন