মহাষ্টমীতে কুমারী পূজা আজ
![]() |
শারদীয় দুর্গাপূজার মহাষ্টমীতে রাজধানীর রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠ পূজামণ্ডপে বিপুল আয়োজনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হবে কুমারীপূজা | ফাইল ছবি |
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার মহাষ্টমী আজ। এদিনের প্রধান আকর্ষণ কুমারী পূজা। কুমারী বালিকার মধ্যে দেবীর প্রতিরূপ কল্পনা করে তাঁকে পূজা করেন ভক্তরা। রাজধানীর রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠে প্রতিবছরের মতো এবারও অনুষ্ঠিত হচ্ছে এই আয়োজন।
রামকৃষ্ণ মিশন সূত্রে জানা গেছে, আজ সকাল ৬টা ১০ মিনিটে মহাষ্টমীর পূজা শুরু হয়েছে। সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে পুষ্পাঞ্জলি দেওয়ার পর সকাল ১১টায় শুরু হবে কুমারী পূজা। তা শেষ হবে দুপুর ১টায়। এরপর দুপুর ১২টায় ভক্তদের জন্য থাকবে মধ্যাহ্ন প্রসাদ। সন্ধ্যা ৬টা ১৩ মিনিটে হবে সন্ধিপূজা, যা শেষ হবে সন্ধ্যা ৭টা ১ মিনিটে।
হিন্দুশাস্ত্র অনুযায়ী, সাধারণত এক থেকে ১৬ বছরের মধ্যে অবিবাহিত কুমারী কন্যাকে দেবীজ্ঞানে পূজা করা হয়। শ্রী রামকৃষ্ণের বাণী অনুযায়ী, শুদ্ধাত্মা কুমারীতে মাতৃরূপের প্রকাশ সবচেয়ে বেশি। তাই ভক্তরা এই পূজার মাধ্যমে নারীশক্তিকে মাতৃশক্তি হিসেবে শ্রদ্ধা জানান।
রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রমের সহকারী সম্পাদক উত্তম মহারাজ বলেন, “কুমারী পূজা নারীকে মাতৃশক্তির প্রতীক হিসেবে শ্রদ্ধা জানানোর একটি উপায়। আমাদের শাস্ত্রও বলে, প্রতিটি নারীর মধ্যেই দেবীশক্তি বিদ্যমান। তাই আমরা প্রতিবছর মহাষ্টমীর দিন এই পূজার আয়োজন করি।”
তিনি আরও জানান, পূজাস্থলে নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে পুলিশ, র্যাব, আনসার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। ফায়ার সার্ভিসের একটি টিমও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সব মিলিয়ে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে কুমারী পূজা সম্পন্ন হবে বলে আশা করছেন তিনি।
শাস্ত্রমতে, কুমারী পূজার সূচনা হয়েছিল অসুর কোলাসুরকে বধের ঘটনা থেকে। বলা হয়, কোলাসুর স্বর্গ-মর্ত্য দখল করলে দেবতারা মহাকালীর শরণাপন্ন হন। তাঁদের প্রার্থনায় দেবী মানবকন্যারূপে জন্ম নেন এবং কুমারী অবস্থায় কোলাসুরকে বধ করেন। সেই থেকে মর্ত্যে কুমারী পূজার প্রচলন শুরু হয়।
ধর্মীয় গ্রন্থে বলা আছে, কুমারী পূজায় জাতি, ধর্ম বা বর্ণভেদ নেই। তবে প্রচলিত প্রথায় ব্রাহ্মণ কন্যাদের পূজা করা হয়। সাধারণত ২ থেকে ১০ বছরের কন্যাদের পূজার রীতি প্রচলিত হলেও এক থেকে ১৬ বছরের যেকোনো কুমারীকেই পূজা করা যায়।
কুমারীদের বয়সভেদে আলাদা নামে অভিহিত করা হয়। যেমন— এক বছরের কন্যাকে বলা হয় ‘সন্ধ্যা’, দুই বছরের কন্যাকে বলা হয় ‘সরস্বতী’, তিন বছরের কন্যাকে বলা হয় ‘ত্রিধামূর্তি’, চার বছরের কন্যাকে বলা হয় ‘কালীকা’, পাঁচ বছরের কন্যাকে বলা হয় ‘সুভগা’, ছয় বছরের কন্যাকে বলা হয় ‘উমা’, সাত বছরের কন্যাকে বলা হয় ‘মালিনী’, আট বছরের কন্যাকে বলা হয় ‘কুব্জিকা’, নয় বছরের কন্যাকে বলা হয় ‘কালসন্দর্ভা’, দশ বছরের কন্যাকে বলা হয় ‘অপরাজিতা’, এগারো বছরের কন্যাকে বলা হয় ‘রূদ্রাণী’, বারো বছরের কন্যাকে বলা হয় ‘ভৈরবী’, তেরো বছরের কন্যাকে বলা হয় ‘মহালক্ষ্মী’, চৌদ্দ বছরের কন্যাকে বলা হয় ‘পীঠনায়িকা’, পনেরো বছরের কন্যাকে বলা হয় ‘ক্ষেত্রজ্ঞা’, ষোলো বছরের কন্যাকে বলা হয় ‘অন্নদা বা অম্বিকা’।
শাস্ত্রে বলা আছে, 'যা দেবী সর্বভূতেষু মাতৃরূপেণ সংস্থিতা'— অর্থাৎ সব নারীই ভগবতীর রূপ। তাই দুর্গাপূজার মহাষ্টমী বা নবমীতে প্রতিমার পাশে বসিয়ে পূজিত হন এক কুমারী কন্যা।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন