জাকসু নির্বাচন: অমর্ত্যর প্রার্থিতা বাতিলের দাবিতে উপাচার্য ও নির্বাচন কমিশন অবরুদ্ধ
| জাকসু নির্বাচনে সহসভাপতি প্রার্থী অমর্ত্য রায়ের প্রার্থিতা ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে উপাচার্যসহ নির্বাচন কমিশনকে অবরুদ্ধকালে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন উপাচার্য। আজ ভোর চারটার দিকে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে সহসভাপতি প্রার্থী অমর্ত্য রায়ের প্রার্থিতা ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে উপাচার্যসহ নির্বাচন কমিশনকে অবরুদ্ধ করেছেন সম্প্রীতির ঐক্য প্যানেলের প্রার্থী ও সমর্থকেরা।
গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে এগারোটার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে তাঁদের অবরুদ্ধ করা হয়। পরে সকাল পৌনে ছয়টার দিকে উপাচার্য তাঁদের সিদ্ধান্ত জানাবেন—এমন আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা হলে ফিরে যান।
জাকসু নির্বাচনে ছাত্র ইউনিয়ন একাংশের নেতৃত্বাধীন সম্প্রীতির ঐক্য প্যানেল থেকে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকায় সহসভাপতি প্রার্থী হয়েছিলেন ছাত্র ইউনিয়ন বিশ্ববিদ্যালয় শাখার একাংশের সাবেক সভাপতি অমর্ত্য রায়। তবে অমর্ত্য রায়ের নিয়মিত ছাত্রত্ব না থাকায় চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের কয়েক দিন পর তাঁর প্রার্থিতা বাতিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রার্থিতা ফিরে পেতে হাইকোর্টে রিট করেন অমর্ত্য।
গতকাল মঙ্গলবার অমর্ত্যর প্রার্থিতা ফিরিয়ে দেওয়ার আদেশ দেন হাইকোর্ট। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হাইকোর্টের আদেশে আপিল করে। গতকাল বিকেলে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি মো. রেজাউল হক হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ আট সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেন। এরপর মঙ্গলবার রাতে সম্প্রীতির ঐক্য প্যানেলের প্রার্থী ও সমর্থকেরা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে দেখা করতে যান। রাত ১০টার দিকে উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসানও তাঁদের সঙ্গে আলোচনায় যুক্ত হন। পরে রাত সাড়ে ১১টার থেকে তাঁদের অবরুদ্ধ করে রাখেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষে যে আইনজীবী আপিল করেছেন তিনি আপিল বিভাগের কাছে জানান, নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের ব্যালট পেপার ছেপে ফেলেছে। ওই পেপারে অমর্ত্য রায়ের প্রার্থিতা নেই। নির্বাচনের এক দিন আগে নতুন করে ব্যালট পেপার তৈরি করা সম্ভব নয়। তাই বিষয়টিকে স্থগিত করা হয়েছে। অথচ প্রশাসন চাইলেই অমর্ত্য রায়ের প্রার্থিতা ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের সামনে অমর্ত্য রায়ের আইনজীবীর সঙ্গে মুঠোফোনে কল দিয়ে আপিল বিভাগের আদেশের প্রেক্ষাপট জানাতে বলেন। তখন অমর্ত্যর আইনজীবী বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এ সময় উপাচার্য জানান শুধু অমর্ত্য রায়ের আইনজীবীর সঙ্গে কথা বললে হবে না, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষের আইনজীবীর সঙ্গেও কথা বলতে হবে। তখন শিক্ষার্থীরা উপাচার্যকে কথা বলার জন্য ১৫ মিনিট সময় দেন এবং অমর্ত্য রায়ের প্রার্থিতা ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত না দেওয়া পর্যন্ত উপাচার্য ও নির্বাচন কমিশন অবরুদ্ধ থাকবেন বলে ঘোষণা দেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, ‘আমরা মিটিংয়ে বসে অনেকভাবে আমাদের আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছি। তাঁকে কল, মেসেজ পাঠিয়েছি। কিন্তু কোনোভাবেই যোগাযোগ করতে পারিনি। তবে যদি শুধু ব্যালট পেপার ইস্যু হয়, তাহলে আমরা আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি বিবেচনা করব।’
অবরুদ্ধ থাকার বিষয়ে জাকসু নির্বাচনের প্রধান নির্বাচন কমিশন অধ্যাপক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা যেটা বলেছে (অবরুদ্ধ) সেটাই হয়েছে। এত রাতে কেউ শুধু শুধু বসে থাকে না।’
এদিকে সিনেট ভবনে উপাচার্য ও নির্বাচন কমিশন অবরুদ্ধ থাকাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকদের সিনেট হলে প্রবেশ করতে দেননি বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। রাত তিনটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির সভাপতি ও বণিক বার্তার প্রতিনিধি মেহেদি মামুন প্রশাসনের বক্তব্য নিতে সিনেট হলে প্রবেশ করতে গেলে তাঁকে বাধা দেন তাঁরা। একপর্যায়ে তাঁর সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য সাংবাদিকেরাও সিনেট হলে প্রবেশ করতে চাইলে বিক্ষুব্ধরা তাঁদেরও প্রবেশে বাধা দেন। দীর্ঘক্ষণ বাগ্বিতণ্ডার পর ভোর চারটার দিকে সাংবাদিকদের সিনেট হলে ঢুকতে দেন এবং প্রশাসনের বক্তব্য নেওয়ার সুযোগ দেন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন