ভোট প্রস্তুতি শুরু, সেপ্টেম্বরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়ে বৈঠক ডাকছে নির্বাচন কমিশন
নির্বাচন | প্রতীকী ছবি |
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার এখনো অন্তত তিন থেকে সাড়ে তিন মাস বাকি। এরই মধ্যে মাঠ প্রশাসন ও পুলিশে রদবদল শুরু হয়ে গেছে। নির্বাচনের সময় এ কর্মকর্তাদের দায়িত্ব থাকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বিদ্যমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো ইতোমধ্যে অস্বস্তির কথা জানিয়েছে। এ অবস্থায় চলতি মাসের শেষ দিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে প্রাক-প্রস্তুতিমূলক বৈঠক করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও সংলাপের পরিকল্পনা রয়েছে।
জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে প্রধান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ের সঙ্গে দুই দফা বৈঠক করেছেন। সেখানে তিনি সমন্বিতভাবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন।
সংশ্লিষ্টদের মতে, ইসিকে প্রথম বৈঠকেই আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে কঠোর বার্তা দিতে হবে। এখন থেকেই মাঠ প্রশাসন ও ভোট-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাজকর্মে নজর রাখা দরকার, যাতে তফসিল ঘোষণার পর দ্রুত সিদ্ধান্ত ও সমন্বয়ের মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর এক মাসের মাথায় প্রশাসন ও পুলিশে ব্যাপক রদবদল হয়েছে। ভোটের কয়েক মাস আগে যেসব কর্মকর্তাকে বদলি করা হচ্ছে, তাতে ইসির সম্মতি থাকছে না বলে জানা গেছে।
সবশেষ সোমবার পুলিশ বাহিনীর ৫৯ কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে। এর আগে অগাস্ট মাসে জেলা প্রশাসক ও পুলিশের শীর্ষ পর্যায়ে পরিবর্তন আনা হয়।
তবে তফসিল ঘোষণার পর ভোট-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের রদবদলে ইসির অনুমতি নিতে হয়। আবার সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে সাংবিধানিক সংস্থাটি নিজ উদ্যোগেও প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনে।
দলীয় সরকারের অধীনে আগের তিন নির্বাচনে পুলিশ ও মাঠ প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। অনিয়মে জড়িতদের বিষয়ে তদন্তও চলছে। তাই এবার নির্বাচন-পূর্ব বৈঠকে নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে কঠোর নির্দেশনা দেওয়ার পাশাপাশি এখন থেকেই কর্মকর্তাদের পূর্বের রেকর্ড খতিয়ে দেখতে চায় ইসি।
ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদেরও রদবদল শুরু হয়েছে। প্রয়োজনে তফসিল ঘোষণার পর মাঠ প্রশাসন ও পুলিশে আরও পরিবর্তন আনবে সংস্থাটি।
রোববার নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, 'আমরা নিজেদের কর্মকর্তাদের পরিবর্তন করছি। প্রশাসন, পুলিশেও হচ্ছে, আরও হবে। শিডিউল ঘোষণার পরও হবে। ভোটের আগের দিনও যদি বড় কোনো বিষয় আসে, তখনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভালো নির্বাচনের জন্য এগুলো অপরিহার্য।'
কাজের সমন্বয় সহজ করতে নির্বাচনি সময়ে প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে ‘ফোকাল পয়েন্ট’ কর্মকর্তা নিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে ইসির। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগে চিঠি পাঠানো হতে পারে।
মাঠ প্রশাসন সমন্বয় কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করবেন নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার। ইসি সচিবসহ সাত সদস্যের এই কমিটি মাঠ প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত বেসামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ, সমন্বয় ও পরামর্শ দেবে। নির্বাচনকালীন যেকোনো সংকট দ্রুত সমাধানে সহায়তা করবে এবং আচরণবিধি বাস্তবায়নে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবে।
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য আব্দুল আলীম মনে করেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর কড়া নজরদারি জরুরি।
সোমবার তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে সাধারণত পুলিশ প্রশাসনে বদল আসে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বদল হতো নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে। আবার রাজনৈতিক সরকারের আমলে এ বদল হতো ভিন্ন উদ্দেশ্যে।
তার ভাষায়, 'এখন তো ইসি তফসিল ঘোষণা না করলে এসব বদলি প্রক্রিয়া তদারক করতে পারে না। তবে এবারের নির্বাচন এক ভিন্ন প্রেক্ষাপটে হচ্ছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও নির্বাচন কমিশনের মধ্যে সমন্বয় থাকলে সবার জন্য ভালো হবে।'
আব্দুল আলীম মনে করেন, গত ১৫-১৬ বছরে রাজনৈতিক বিবেচনায় অনেক নিয়োগ হয়েছে। সেই কর্মকর্তাদের সবাইকে সরানো বা বাদ দেওয়া সম্ভব হয়নি। তাই তাঁদের দায়িত্ব পালনের ধরণ দেখার জন্য কড়া নজরদারি দরকার।
জনপ্রশাসন সচিব মোহাম্মদ মোখলেস উর রহমান জানিয়েছেন, তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন কমিশনের অধীনে বড় ধরনের রদবদল হবে।
বুধবার সচিবালয়ে তিনি বলেন, 'তফসিল ঘোষণার পর থেকে বদলির সব ক্ষমতা ইসির হাতে থাকবে। তখন কারও তদবির বা সুপারিশ কার্যকর হবে না। যাকে যেখানে পাঠানো হবে, তাঁকে সেখানেই যেতে হবে।'
তিনি জানান, আগের তিন নির্বাচনে যাঁরা দায়িত্বে ছিলেন, এবারে তাঁদের রাখা হবে না। যদি কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ ওঠে, তবে তাঁকে প্রত্যাহার করে আইনি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সেপ্টেম্বরে আইনশৃঙ্খলা নিয়ে বৈঠক
আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সশস্ত্রবাহিনী বিভাগসহ বিভিন্ন সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের প্রথম প্রস্তুতিমূলক বৈঠক হওয়ার কথা।
ইসির রোডম্যাপ অনুযায়ী, সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে হবে প্রাথমিক মতবিনিময় সভা। তফসিল ঘোষণার ১৫ দিন আগে দ্বিতীয় বৈঠকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েনের পরিকল্পনা চূড়ান্ত হবে। তফসিল ঘোষণার পর ভোটের দুই সপ্তাহ আগে তৃতীয় বৈঠকে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের সঙ্গে নির্দেশনা ও সমন্বয় ঠিক করা হবে।
এ ছাড়া তফসিলের আগে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক, প্রতীক বরাদ্দের পর মাঠ প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে মতবিনিময়, নির্বাহী ও বিচারিক হাকিমদের প্রশিক্ষণ, ভোটের এক সপ্তাহ আগে মনিটরিং সেল গঠনসহ নানা পরিকল্পনা রয়েছে।
প্রসঙ্গত: ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হবে। এর তফসিল ঘোষণা হতে পারে ডিসেম্বরের শুরুতে। এর আগে সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন